সোমবার বিকেলে ফ্ল্যাটের থেকে নীচে খেলছিল বছর চারের এক শিশু। কিছুক্ষণ খেলার পর হঠাত্‍ করেই রাস্তায় ছুটে চলে যায় সে। এরপর আর ঘরে ফেরেনি। অতটুকু বাচ্চা খেলতে-খেলতে হঠাত্‍ করে কোথায় চলে গেল তা নিয়ে উদ্বেগে থাকে গোটা পরিবার। এরপর বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামলেও বাড়ি ফেরে না সে।কোথায় গেল কিছুই কূল কিনারা না পেয়ে শেষে পুলিশে গোটা ঘটনা জানায় নিখোঁজ শিশুর পরিবার। এই ঘটনার ঠিক ১৯ ঘন্টা পর সন্ধান মেলে ওই শিশুটির। বাড়ি থেকে দশ কিমি দূরে উদ্ধার হল দেহ। নিথর অবস্থায় পরিবারের হাতে এল সেটি। তবে কি খুন করা হয়েছে বাচ্চাটিকে? বাড়ি থেকে দশ কিমি দূরেই বা গেলো কী করে অতটুকু শিশু? কী ঘটেছিল তাঁর সঙ্গে? এমনই সব প্রশ্ন তাড়া করছে পরিবার আর গোয়েন্দাদের।

মৃত শিশুটির নাম মহম্মদ সাহিল (৪)। একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের বেসমেন্টের রিজার্ভারের জল থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। জানা গিয়েছে, টিকিয়াপাড়া স্টেশনের কাছে রেল লাইনের ধারে কাঠপোল এলাকায় ওই নির্মীয়মান বহুতলের বেসমেন্টের জমে থাকা জলেই ভাসতে দেখা যায় সাহিলকে। বেসমেন্টে জমা জলের মধ্যে রাখা একটি লোহার বিমের পাশ থেকে দেহটি মেলে। স্থানীয় বাসিন্দারাই দেহটি ভাসতে দেখে হাওড়া থানায় খবর দেয়। পুলিশ দেহটি উদ্ধারের পরই দানা বেঁধেছে রহস্য। বাঁকড়ার নিউ মণ্ডলপাড়ায় দিদার বাড়ি থেকে শিশুটি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে টিকিয়াপাড়ায় কীভাবে পৌঁছালো তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। সাহিলের পরিবার ও প্রতিবেশীদের একাংশের অভিযোগ, কেউ বা কারা তাকে খুন করে ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের বেসমেন্টে ফেলে দিয়েছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি করছেন তাঁরা। তবে মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত এ ব্যাপারে পরিবারের তরফে লিখিত কোনও খুনের অভিযোগ থানায় দায়ের হয়নি।

কী ঘটনা?
সোমবার বিকেলে মহম্মদ সাহিল বাঁকড়ার মণ্ডলপাড়ায় তাঁর দিদা আমিনা বেগমের কাছে গিয়েছিল। তিনতলা ফ্ল্যাটের দোতলায় নাতিকে নিয়ে ছিলেন আমিনা। বিকেল ৫টা নাগাদ সাহিল ফ্ল্যাটের নীচের রাস্তায় খেলছিল। আমিনা এদিন জানালেন, সাহিল যখন খেলছিল তখন তিনি বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ঠিকমতো নজর দিতে পারেননি। তাঁর কথায়, খেলতে খেলতে হঠাত্‍ই রাস্তা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে যায় সাহিল। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিল সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সোমবার রাতেই ডোমজুড় থানায় সাহিলের পরিবারের তরফে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে পুলিশই শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধারের খবর তার পরিবারকে জানায়।

মহম্মদ সাহিলের সত্‍ বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁর নাম উমেশ দ্বিবেদী। ধাড়সার মল্লিকপাড়ার ২ নম্বর রামকৃষ্ণ কলোনীর বাড়িতে উমেশ সাহিল আর তাঁর মা আসমা বেগম থাকতেন। আসমার প্রথমপক্ষের স্বামী বছর চারেক আগেই তাঁকে ছেড়ে বিহারে চলে গিয়েছেন। এরপর তিনি উমেশ দ্বিবেদীকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। কর্মসূত্রে গত ২৮ জানুয়ারি দিল্লি চলে গিয়েছেন আসমা। যাওয়ার আগে আসমা উমেশকে জানিয়ে যান যাতে তিনি কাজে বেরোলে সাহিলকে যেন তাঁর দিদার কাছে রেখে যান। এবার উমেশ মঙ্গলবার জানালেন, স্ত্রীয়ের কথা মতো সোমবার বিকেলে কাজে যাওয়ার আগে তিনি ছেলেকে দিদার বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন। তার পর কীভাবে এমন ঘটনা ঘটলো তা বুঝতে পারছেন না তিনি।

মৃত শিশুটির মেজো মাসি সোনিয়া বেগমের অভিযোগ, শিশুটিকে খুনই করা হয়েছে। কারণ সত্‍ বাবা উমেশ প্রায়ই সাহিলকে মারধর করতো। স্ত্রীয়ের প্রথম পক্ষের সন্তানকে মেনে নিতে পারছিল না উমেশ। চক্রান্ত করে সাহিলকে খুন করা হয়েছে। শিশুটির এক পিসতুতো দাদা আফসার মল্লিক জানালেন, বাঁকড়ার নিউ মণ্ডলপাড়া থেকে দশ থেকে এগারো কিলোমিটার আসা একটা শিশুর পক্ষে কখনওই সম্ভব নয়। নিশ্চয় কেউ শিশুটিকে টিকিয়াপাড়ায় নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছে।

আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করলেও গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। এদিন শিশুটির দেহ উদ্ধারের পরই হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থানে ছুটে যান। ফ্ল্যাটের সামনের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখে পুলিশ।

সিসিটিভি-তে কী দেখা গেছে?

ওই ফ্ল্যাটের পাশেই থাকা একটি ক্লাবের সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে ফ্ল্যাটের সামনের রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে যাচ্ছে সাহিল। তার পর আর তাকে দেখা যায়নি। ওই রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে কোথায় সাহিল গেছিলো তা বিভিন্ন রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করছে পুলিশ।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours