ও ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ছেলের মাথায় গভীর ক্ষত। মায়ের শাড়ি কাপড়ের রক্তের চাপ চাপ দাগ! ওই অবস্থাতেই দু’জনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। প্রতিবেশীরা দেখে স্তম্ভিত। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছেলেকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছেন খোদ মা-ই।বাঁশদ্রোণীর (Bansdroni Crime) এই ঘটনার তদন্তে নেমে স্তম্ভিত দুঁদে পুলিশ কর্তারাও।

দোতলার বাড়ির লাগোয়া একটা একতলা বাড়ি। শ্যাঁওলা, আগাছা-জঙ্গলে পূর্ণ। অপরিচ্ছন্নতার ছাপ তাতে স্পষ্ট। দরজা জানলা বন্ধ থাকে বেশিরভাগ সময়ই। বাড়ির ভিতরেই নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় থাকেন মা কাবেরি দাস ও ছেলে শুভজিত্। পাড়ায় খুব একটা বিশেষ মেলামেশাও করতেন না, জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। ওই বাড়িতেই মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঘটে ভয়ঙ্কর ঘটনা।

এদিন রাতেও বাড়ি থেকে মা ও ছেলের চিত্কার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু প্রতিদিনের অশান্তি ভেবে বিশেষ আমল দেননি তাঁরা। কাবেরির স্বামী পোর্ট ট্রাস্টে করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর পেনশনের টাকায় সংসার চলত। কাবেরি তাঁর স্বামীর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী।

কাবেরি দুই ছেলে। স্থানীয়দের দাবি, ছোট ছেলের মানসিক অবস্থা ঠিক নেই। বড় ছেলে বাইরে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসতেন। কিন্তু এই বড় ছেলেই মা ও ছোট ভাইয়ের ওপর অত্যাচার করতেন।

মঙ্গলবার রাতেও অশান্তি হয়েছিল ওই বাড়িতে। কিন্তু এমন ঘটনা যে ঘটে যেতে পারে তা কেউই আঁচ করেননি। এক প্রতিবেশীর কথায়, “অশান্তি তো রোজই হত ওঁদের বাড়িতে। আমি সকালে ফুল তুলতে গেছিলাম। তখন দেখি ওঁদের বাড়ির বাইরে পুলিশ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনও বুঝিনি এমনটা হয়েছে। পরে পুলিশকে জিজ্ঞাসা করতেই জানি মা নাকি ছেলের ঘাড়ে কোপ দিয়েছে।”

অন্য আরেক প্রতিবেশীর কথায়, “ওঁদের বাড়ির ব্যাপারে কেউই বিশেষ কিছু জানেন না। ওঁরা নিজেদের মতোই থাকতেন। তবে মানসিক দিক থেকে যে ওঁরা প্রত্যেকেই বিরক্ত ছিলেন, তা বাইরে দেখে বোঝা যেত। বড় ছেলে মায়ের ওপর অত্যাচার করত বলে শুনেছি।”

আপাতত ছেলে দুজনেই এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। মাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছেলের ঘাড়ে কোপ দিয়েছেন মা।

পুলিশ জানিয়েছে, কাবেরি দাসকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন এমনটা করলেন, কেবলই কি ছেলের অত্যাচার নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আহত ছেলে শুভজিত আপাতত হাসপাতালে ভর্তি। তাঁকেও পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours