প্রতিবেশীরা রোজই তাঁদের বাড়ি থেকে চিত্কার চেঁচামেচি শুনতে পেতেন। আচমকাই একদিন সব স্তব্ধ। বাড়ির বাইরে দেখাও যাচ্ছে না কর্তাকে! সন্দেহ হয়। স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু কথাতেও ছিল বেশ মারপ্যাঁচ। প্রতিবেশীদের সন্দেহ আরও গাঢ় হয়। খোঁজ করতে নিজেরাই চলে যান বাড়িতে।


সিঁড়ির নীচে চোখ পড়তেই শিউরে ওঠেন তাঁরা। প্লাস্টিক প্যাঁচানো কী যেন একটা পড়ে রয়েছে। আরে ওই তো বাড়ির কর্তা! হাত পা পিছমোড়া করে বাঁধা, মাথার একাংশ থেঁতলে গিয়েছে। বিভত্স ঘটনা মালদার (Maldah) হরিশ্চন্দ্রপুরের ডেইলি মার্কেট এলাকায়। বাড়িতে সিঁড়ির নীচ থেকে উদ্ধার হল বছর চৌত্রিশের রাম মসোহার দেহ। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে স্ত্রী ও মৃতের পিসতুতো দাদাকে। জিজ্ঞসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে ছেলেকেও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাম রঙের মিস্ত্রি ছিলেন। নিয়মিত মদ্যপান করায় স্ত্রী পঞ্চমীর সঙ্গে তাঁর বিবাদ লেগেই থাকত। ছেলে বাপী মুসোহরের সঙ্গেও বিবাদ ছিল বাবার। এরইমধ্যে তাঁর পিসতুতো দাদা মনোজ রাম দিল্লি থেকে হঠাত্‍ হরিশ্চন্দ্রপুরে এসে রঙের কাজ শুরু করেন।

মনোজের ব্যবসাও বেশ জমে ওঠে। পরবর্তীতে রাম পঞ্চমীদের সঙ্গেই এক বাড়িতে থাকতে শুরু করে মনোজ। এরপরেই পঞ্চমীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে মনোজের। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ আরও জোরদার হয়। নিয়মিত অশান্তি লেগেই থাকত।

প্রতিবেশীদের বক্তব্য, মদ্যপান আরও বেড়ে গিয়েছিল রামের। কাজকর্ম কিছুই করতেন না। মূলত সংসার চালাতেন মনোজ। তাঁকে সাহায্য করতেন বাপি। এরপরে তাঁদের বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে পঞ্চমী ও মনোজ। আর সেখানেই বাধা হয়ে দাঁড়ান রাম। এই নিয়ে কদিন ধরেই অশান্তি আরও তীব্র হয়।

মঙ্গলবার রাতে তাঁদের বাড়ির সিঁড়ির নীচ থেকে হাতপা ভাঙা, মাথা থ্যঁতলানো রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় রামের। সেই দেহ লোপাটের জন্যে একটি গাড়ির খোঁজ করছিলেন মনোজ। রামের ছেলে বাপীকেও একটি গাড়ি ভাড়া করে আনতে বলা হয়। কিন্তু খুনের সময়ে বাড়িতে ছিলেন না বাপি। সম্ভবত সম্পূর্ন বিষয়েটি তাঁর কাছে স্পষ্ট ছিল না বলেই মনে করছে পুলিশ।

হয়ত তাঁর বাবা পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন, তাঁকে এমন বলা হয়ে থাকতে পারে। গাড়ির খোঁজ করতে গেলে প্রতিবেশীদের সন্দেহ প্রবল হয়। কয়েকজন তাঁদের বাড়িতে গেলেই, সিঁড়ির নীচে লুকানো রামের দেহ দেখতে পান। এরপরেই উত্তেজনা ছড়ায়। গভীর রাতে যায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। শাবল,গাঁইতি, দা উদ্ধার হয়েছে ঘর থেকে।

মুখ চেপে ধরে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা টিপে শ্বাসরোধও করা হয় বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। পুলিশ পঞ্চমী ও মনোজকে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে ছেলে বাপীকেও।এলাকার কিছু ব্যক্তিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ি থেকে ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে। পারিবারিক অশান্তি ছিল, বিবাহ বহির্ভূত একটা সম্পর্কের বিষয়ও প্রকাশ্যে আসছে। তদন্ত চলছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours