চার দিন অতিবাহিত হয়ে গেল আফগানিস্তানে তালিবান শাসন জারি হয়েছে। চলছে তালিবানি সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। আর দু'দিনের মধ্যে আশা করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়া শেষ হবে। এই চার দিনে গোটা বিশ্ব দেখেছে একটা জাতির মাতৃভূমি ছেড়ে পালানোর প্রচেষ্টা ঠিক কীরকম হতে পারে। উপচে পড়া বিমান থেকে বাড়ির ছাদে পড়ে মৃত্যুর নজিরও বাদ যায়নি। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল, বিশ্বের অনেক দেশই তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো না হলেও আলোচনা চলছে। আর ওদিকে চলছে দোহায় তালিবানের সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। এবারে তালিবান অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আনতে চলেছে বলে শোনা যাচ্ছে। ইসলামী শরিয়ত আইন জারি থাকলেও কিছুটা নরম ভাবাপন্ন মেজাজ তাঁরা ধরে রাখতে পারে। এছাড়া ১৯৯৬ সালে প্রথম বার যখন তাঁরা ক্ষমতায় এসেছিল তখন তাঁরা মূলত পর্দার পেছন থেকেই শাসন চালিয়েছিল। কিন্তু এবার তাঁরা প্রকাশ্যে আসছে বা আগামীতে সরকার গঠনের পর আরও বেশী করে আসবে বলে জানিয়েছে তাঁরা। এখন তালিবানের প্রধান ব্যক্তিরা গোটা বিশ্বের কাছে আর অজানা নেই, মোটামুটি সবাই তাঁদের চেনে। আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁরা কারা।

হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, সুপ্রিম কম্যান্ডার: হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই বর্তমানে তালিবানের সুপ্রিম কম্যান্ডার অর্থাত্‍ দলের সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালে তাঁর পূর্বসূরীকে মেরে ফেলার পর তিনি মিলিটারি কম্যান্ডারের চেয়ে বেশী ধর্মীয় নেতা হয়ে যান এবং নিজেকে খুবই সংযত করে রাখতেন। বহুদিন ধরে আখুন্দজাদাকে দেখতে পাওয়া যায় না। তাঁর খুব কম ছবিই পাওয়া যায়। শেষবার মে মাসে ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে তাঁর একটি বক্তব্য সামনে এসেছিল। আশা করা হচ্ছে, এবারের সরকার মূলত তাঁর অঙ্গুলি হেলনেই চলবে।

আব্দুল গনি বরদার, ডেপুটি লিডার: তালিবানের অন্যতম প্রধান একটি মুখ। যিনি বারবারই জনসমক্ষে আসেন। আশা করা হচ্ছে তালিবান সরকারে তিনিই প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন। তিনি তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের অন্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এছাড়া ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পর্ক ছিল। ২০১০ সালে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ২০১৮ সালে তিনি ছাড়া পান। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে তালিবানের সঙ্গে আমেরিকার যে শান্তি চুক্তিটি হয়েছিল সেখানে বরদার উপস্থিত ছিলেন এবং তালিবানের পক্ষে তিনিই সাক্ষর করেছিলেন। তিনি তিয়ানজিনে চীনের বিদেশ মন্ত্রী ওয়াং ই-এর সাথে এই মাসেই দেখা করেছিলেন। বরদার তালিবানের প্রধান কার্যালয় কাতারের দোহায় থাকতেন। বিগত মঙ্গলবার তিনি আফগানিস্তানের কান্দাহারে এসে উপস্থিত হয়েছেন।

সিজাউদ্দিন হাক্কানি, জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রধান: ইনি হলেন আমেরিকা ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান। ২০১৬ সালে তালিবানের সঙ্গে হাক্কানি গোষ্ঠী হাত মেলানোর পর সিজাউদ্দিন হাক্কানি তালিবানের দ্বিতীয় ডেপুটি লিডারের পদটি গ্রহণ করেন। তাঁর কাজ মূলত পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে টাকা পয়সা ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সরবরাহ করা। এই কারণে তিনি বেশী দিন এক জায়গায় থাকেন না। তাঁর ভাইও একজন তালিবান লিডার। সে চার বছর জেল খাটার পর এখন মুক্ত।

শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাই, প্রধান কূটনীতিবিদ: শের মোহাম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজাইয়ের মূল পারদর্শিতা হল তিনি ইংরেজী ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ। ১৯৯৬ সালেও তালিবান শাসনে তিনি প্রধান বিদেশ মন্ত্রী ছিলেন। সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। আমেরিকা থেকে চীন বিভিন্ন দেশের প্রধানদের সঙ্গে তিনি তালিবানের হয়ে কথা বলেছেন। বর্তমানেও তিনিই তালিবানের প্রধান কূটনীতিবিদ।

জাইবাউল্লাহ মুজাইহিদ, প্রধান মুখপত্র: জাইবাউল্লাহ মুজাইহিদ হলেন তালিবানের প্রধান মুখপত্র। গত সপ্তাহেই তিনি কাবুলে প্রথম একটি সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন। আন্তর্জাতিক স্তরে তালিবানের কোনো বার্তা পৌঁছানোর কাজটি তিনিই করে থাকেন। আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘ কুড়ি বছরের যুদ্ধে তিনি অগণিত বার সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোনে বা মেসেজে যোগাযোগ রেখে গেছেন। প্রথম বার তাঁকে দেখা গেছিল গত ১৭ তারিখ অর্থাত্‍ আফগান বিজয়ের ঠিক দুইদিন পর। অর্থাত্‍ সাংবাদিকদের সামনে এসে কথা বলা বা কোনো ঘোষনা করার প্রয়োজন হলে তালিবানের ভরসা জাইবাউল্লাহ মুজাইহিদ।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours