আজ ২২ শ্রাবণ। সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি। শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জ, বকুলবীথির রাস্তায় পাতা ছুঁয়ে জল পড়ছে মোরামের লাল রাস্তায়। আজ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লৌকিক প্রয়াণের দিন। সকাল থেকেই শান্তিনিকেতন জুড়ে শুধুই বিষণ্ণতা। করোনা আবহে গত বছর থেকেই ম্লান ২২ শ্রাবণ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ছাত্র-ছাত্রী হীন হওয়ার ফলে অনুষ্ঠানে ছেদ পড়েছে। তবে প্রথা মেনে বিশেষ উপাসনা থেকে বৃক্ষরোপণ সবই পালিত হল শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'আরোগ্য' কাব্যগ্রন্থে লিখলেন, 'এ দ্যুলোক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধূলি / অন্তরে নিয়েছি আমি তুলি / এই মহামন্ত্রখানি, / চরিতার্থ জীবনের বাণী। / দিনে দিনে পেয়েছিনু সত্যের যা-কিছু উপহার / মধুরসে ক্ষয় নাই তার / তাই এই মন্ত্রবাণী মৃত্যুর শেষের প্রান্তে বাজে / সব ক্ষতি মিথ্যা করি অনন্তের আনন্দ বিরাজে।' সেই সুর নিয়েই প্রতিবার ২২ শ্রাবণ, রবীন্দ্র তিরোধানে, বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে যেমন নতুন প্রাণের সূচনা ঘটে সেভাবেই 'অনন্তের আনন্দ বিরাজে'র জয়গান গাওয়া হয়। বিগত দু'বছর ধরে সেই উদযাপন নিভৃতেই পালন করা হচ্ছে কবির কর্মভূমি শান্তিনিকেতনে। রবিবার সকালে শান্তিনিকেতনের উপাসনা গৃহে বিশেষ উপাসনায় প্রথা মেনে বৈদিক মন্ত্র পাঠ, রবীন্দ্র সংগীত ও পাঠের মধ্য দিয়ে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে স্মরণ করা হয়।


উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তী সহ হাতে গোনা কয়েকজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও আধিকারিকরা। তবে এবারও করোনার কারণে পর্যটকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা বাইরে থেকেই রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যান। এদিন বিশেষ উপাসনা শেষে রবীন্দ্রভবনে গুরুদেবের ব্যবহৃত চেয়ারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য সহ অনান্যরা।

এবার উত্তরায়ণ চত্বরেই বৃক্ষরোপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপাচার্য বৃক্ষরোপণ করেন। অন্যদিকে রবীন্দ্র তিরোধান উপলক্ষ্যে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সিউড়ি শাখার উদ্যোগে কবিকে কবিতা, গান আর কথায় শ্রদ্ধা জানায় সংগঠনের সদস্যরা। এই উপলক্ষ্যে সংস্থার পক্ষ থেকে ৮০ ঊর্ধ্ব ১০ জন প্রবীণ সদস্যকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours