সিপিএম, কংগ্রেস এমনকী বিজেপি ছেড়েও অনেকে তৃণমূলে যোগ দিতে ইচ্ছুক, গত কয়েকদিন ধরে এমনই দাবি করছে ত্রিপুরা তৃণমূলের  শীর্ষ নেতারা। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন জিতেন সরকার যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূলের সঙ্গে। এর পরেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে ত্রিপুরায়। সত্যিই কি জিতেন সরকার যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে? সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না দীর্ঘ দিনের রাজনীতিবিদ জিতেন বাবু নিজেও। তবে বাংলার সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক বলতেই তিনি বলছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমের কথা।

তাঁর কথায়, 'আমি দীর্ঘ সময় ওনার সাথে কাটিয়েছি। বিদেশে অবধি গেছি। ওনার থেকে বাংলার রাজনীতির স্বাদ আমি পেয়েছি।' জিতেন বাবু একটা সময় বামেদের হয়ে ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকার ছিলেন। আপাতত তিনি অবশ্য বিজেপি নেতা বলেই পরিচিত। বাংলার রাজনীতির স্বাদ পাওয়া এই ব্যক্তি অবশ্য বুঝতেই পারছেন তৃণমূলের ত্রিপুরা দখলের পরিকল্পনা। তবে বিজেপির নেতাদের কখনও বিমানবন্দরে নামলে তৃণমূল নেতাদের তালিবানি কায়দায় আক্রমণ বা গাড়ি ভাঙচুর বা হোটেলে থাকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

জিতেন বাবু জানিয়েছেন, "এই সব আচরণের নিন্দা মানুষই করবে। মানুষ এই সব ভালো চোখে দেখে না। যে বা যারা এই সব করছেন তাদের অবিলম্বে বিরত হওয়া উচিত।" তাঁর কথায়, 'বামেরাও একটা সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমন আচরণ করেছিল। মানুষ মেনে নেয়নি। বিজেপিকেও বুঝতে হবে সুযোগ পেলে নিজেকে রক্ষা করতে সবাই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তবে সেটা গণ প্রতিরোধ হলেই মুশকিল হবে। জিতেন বাবুর কথায়, "দলকে অনেকবার বলেছি এমনটা না করতে। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। আমি রাজ্য সভাপতিকে বলেছি। দীর্ঘদিনের রুলিং পার্টিকে মানুষ কিন্তু এই কারণেই হারিয়ে দিল। প্রাণ রক্ষার জন্যে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ ভয়ংকর হয়ে যায়। এই সব গুন্ডামি করলে, মানুষ পথে নামবে। সিপিএম যা করত, বিজেপি এখন তা শুরু করেছে। এটা একদম ঠিক নয়।" দলের প্রতি তার এই বক্তব্য অনেকেই মনে করছে তিনি বিরক্ত। প্রায় ৬০ বছর ধরে ত্রিপুরার রাজনীতির সাথে যুক্ত জিতেন বাবু 'পরিবর্তন' এর পক্ষে সওয়াল করেন কিনা নজর এখন সকলের সেদিকেই। বাংলার পর এবার ত্রিপুরা। বিজেপি শাসিত ত্রিপুরাই এখন তৃণমূলের পাখির চোখ। ত্রিপুরার আসন্ন ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপ্লব দেবের সরকারকে হারানোই এখন এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূল শিবির। পড়শি রাজ্যে নিজেদের সংগঠন মজবুত করতে সর্বশক্তি দিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে ঘাসফুল শিবির। আর সেই সূত্রে তৃণমূল সক্রিয়তা চোখে পড়ছে ত্রিপুরার বাকি রাজনৈতিক দলগুলির 'অখুশি' নেতা-কর্মীদেরও। তাই তৃণমূলে যোগদানের হিড়িক পড়েছে।

ইতিমধ্যেই সুবল ভৌমিকের মতো নেতা চলে এসেছেন ঘাসফুল শিবিরে। এবার ত্রিপুরার প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং পাঁচ বারের বিধায়ক জিতেন সরকারের তৃণমূলে আসা নিয়েও জল্পনা প্রবল হয়ে উঠেছে।জিতেন সরকারের দলবদল নিয়ে শোরগোলের কারণ স্বয়ং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকেই জিতেন সরকারের প্রসঙ্গ আনেন মমতা। জানান, ত্রিপুরার প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং পাঁচ বারের বিধায়ক জিতেন সরকার তাঁর বেশ কিছু অনুগামীকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে তাঁকে চিঠি দিয়েছেন।




দীর্ঘদিনের বাম নেতা ২০০৮ সালে সিপিএম ছাড়েন। এরপর অনুগামী নেতাদের নিয়ে ২০১০ সালে যোগ দেন কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৬ সালে ফের ফিরে যান নিজের পুরনো দল সিপিএমে। কিন্তু সেই যোগদানও বেশিদিনের নয়। ২০১৭ সালের জুন মাসে জিতেন সরকার দলবল নিয়ে যোগ দেন বিজেপিতে। সেই জিতেন সরকারই এবার আলোচনার কেন্দ্রে ত্রিপুরায়। একইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বাংলার পর এবার ত্রিপুরাতেও জিতবে তৃণমূল। যদিও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, 'এরকম ধমকে চমকে আমাদের আটকানো যাবে না। এবার আমরা ত্রিপুরায় জিতবই। আমরা চাই বাংলার প্রকল্পগুলি ত্রিপুরায় চালু হোক। ত্রিপুরার মানুষ বিনা পয়সায় চিকিত্‍সা পাক, বিনা পয়সায় চাল পাক। আমরা চাই ত্রিপুরার মানুষ ভালো থাকুক।' এরই মধ্যে জিতেন সরকারের মতো পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের তৃণমূলে যোগদান জল্পনা ত্রিপুরায় সাড়া ফেলেছে নিঃসন্দেহে।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours