রমরমিয়ে চলছে কলকাতা পুরসভার ভুয়ো অফিস। অথচ, ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ হচ্ছে প্রকাশনা সংস্থার নামে। তা-ও বেশি দিন নয়। মাত্র দু'মাস আগেই। অর্থাত্‍, ধৃত দেবাঞ্জন দেবের কাজকর্ম যখন 'মধ্য গগনে'। কসবা-কাণ্ডের তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। কসবার শান্তিপল্লির ঠিকানায় দেবাঞ্জন পুরসভার যে ভুয়ো অফিস খুলেছিল, তা আসলে পুর নথিতে প্রকাশনা সংস্থার নামে (অফিস অব পাবলিকেশন) নথিভুক্ত রয়েছে, এ খবর আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল। পুলিশ সূত্রে এ বার যা জানা যাচ্ছে তা হল, শুধু নথিভুক্ত থাকাই নয়, গত মে মাসেই কলকাতা পুরসভা থেকে প্রকাশনা সংস্থার নামে ট্রেড লাইসেন্সটি নবীকরণও করানো হয়। পুলিশ-প্রশাসনের একটা বড় অংশ মনে করছে, দেবাঞ্জনের ভুয়ো কাজ-কারবারকে মান্যতা দিতে এবং পুরসভাকে অন্ধকারে রাখতেই প্রকাশনা সংস্থার তরফে চলতি বছরেও সময় মতো ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করানো হয়েছে। এ ভাবে আরও কত সংস্থা পুরসভার চোখে ধুলো দিয়ে বেআইনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, এই সূত্র ধরে উঠে আসছে সেই প্রশ্নও। নিয়ম অনুযায়ী, নবীকরণের সময়ে নতুন করে আর কোনও প্রমাণ দাখিল করতে হয় না। ট্রেড লাইসেন্সের আবেদনের সময়ে যা যা তথ্যপ্রমাণ দাখিল করা হয়েছিল, যেমন আবেদনকারীর পরিচয়পত্র, মালিকানা বা 'অকুপেন্সির' শংসাপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতেই অনলাইনে ফি জমা দিয়ে লাইসেন্স নবীকরণ করা যায়। প্রকাশনা সংস্থার ট্রেড লাইসেন্সটিও অতীতে দাখিল করা তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই নবীকরণ করে নেওয়া হয়েছিল। সে যতই সেখানে পুরসভার ভুয়ো অফিস চলুক না কেন! কারণ, ট্রেড লাইসেন্সের টাকা বকেয়া থাকলে পুরসভার তরফে তাগাদা আসে। দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া থাকলে পুর আধিকারিকেরাও ব্যবসায়িক ঠিকানায় পরিদর্শনে আসতে পারেন। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, পুরসভার সেই নজরদারি থেকে বাঁচতেই সময় মতো ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণ করানো হয়েছিল। পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, এমনিতে কসবায় শান্তিপল্লির ঠিকানায় প্রকাশনা সংস্থার অফিসের এক বছরের মেয়াদের জন্য নেওয়া ট্রেড লাইসেন্সটির ধারাবাহিক ভাবে নবীকরণ হয়ে এসেছে। এক বারও সংস্থার তরফে লাইসেন্স নবীকরণের টাকা বকেয়া রাখা হয়নি। যেমন, ২০১৪ সালের ২০ জুন, ২০১৫ সালে ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সালে ৭ জুন, ২০১৮ সালে ১৮ মে, ২০১৯ সালে ১ জুন,— অর্থাত্‍ বরাবর নির্দিষ্ট সময়ের মেয়াদে নবীকরণ হয়ে এসেছে। তথ্য বলছে, গত বছরেও ২৫ জুন ট্রেড লাইসেন্সটির নবীকরণ হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, সেই নবীকরণের ধারাবাহিকতা এ ক্ষেত্রে বিচার্য হচ্ছে না। কারণ, সেই বছরগুলিতে কেউ সেখানে ভুয়ো অফিস খুলে বসেনি। যেটা চলতি বছরে হয়েছে। গত ৭ মে, ৯৫০ টাকা দিয়ে যখন প্রকাশনা সংস্থা ট্রেড লাইসেন্সটি নবীকরণ করায়, তত দিনে ওই ঠিকানায় বসে ভুয়ো পরিচয়ে নিজের 'রাজ্যপাট' চালাতে শুরু করেছে দেবাঞ্জন। সূত্রের খবর, ওই ঠিকানায় প্রকাশনা সংস্থার তরফে ২০১০ সালে অফিসটি খোলা হয়। সংশ্লিষ্ট পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলটি প্রকাশনা সংস্থার মালিক অশোক রায়ের। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফিসটি সেখানেই ছিল। পরে তা শোভাবাজারে স্থানান্তরিত হয়। অশোকবাবু গত বছরের শেষে অফিসটি ছাড়ার আগে দেবাঞ্জনকে তা ভাড়া দিয়ে যান। সংশ্লিষ্ট বিল্ডিংয়ের অন্য অফিসের কর্মীদের অনেকে জানাচ্ছেন, তাঁরা দেবাঞ্জনকে অশোকবাবুর পরিচিত হিসেবেই জানতেন। অশোকবাবু প্রায় ১০ বছর ধরে ওই বিল্ডিংয়ে থাকায় তিনি যে কারও পরিচয় যাচাই না করেই তাকে ভাড়া দিয়ে দেবেন, তা তাঁরা ভাবতে পারেননি। অন্য অফিসের এক কর্মীর কথায়, ''দেখতাম লোকজন ইন্টারভিউ দিতে আসছেন। অশোকবাবুর পুরনো অফিসের দু'-এক জন কর্মীও নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ফলে সন্দেহ হয়নি।'' এ বিষয়ে জানতে প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সংস্থার এক কর্তা বলেছেন, ''বিষয়টি বিচারাধীন। ফলে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আইন আইনের পথে চলবে।''
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours