আর মাত্র বছর তিনেকের অপেক্ষা। এরপরেই পূরণ হবে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। ২০২১ সালের জুনে শেষ হবে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। আর রেলসেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের মার্চে। বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেসে ঢাকা-কলকাতা, কিংবা কলকাতা থেকে ঢাকা যাতায়াতে সময় লাগে কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা। সেখানে তিন বছর বাদে রেলসেতু চালু হলেই এই দূরত্ব অতিক্রমে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। এমনটাই জানালেন বাংলাদেশের  রেলমন্ত্রী মহম্মদ নূরুল ইসলাম সুজন।

রেলমন্ত্রী আরও জানান, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা যেতে ট্রেনে সময় লাগবে মাত্র ৬ ঘন্টা।বর্তমানে ট্রেনে আগরতলা থেকে কলকাতা যেতে সময় লাগে ৩০ ঘণ্টারও অধিক। এখন শুধু অপেক্ষা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার। বাংলাদেশের মানুষের বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্নের ফল এই সেতু। শুধু বাংলাদেশ কেন পশ্চিমবঙ্গে বাস করা অনেক বাঙালির আদি বাসস্থান রয়েছে বাংলাদেশে। নানা কাজে বাংলাদেশের লোক যেমন কলকাতা গিয়ে থাকেন, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ এপার বাংলায় এসে থাকেন। সাড়ে ৩ ঘন্টায় যোগাযোগ স্খাপিত হলেই উপকৃত হবেন বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের নাগরিকরা।

পদ্মা সেতু নিয়ে রেলমন্ত্রী ইসলাম সুজন বলেছেন, ওই সেতুতে বাসের পাশাপাশি রেললাইন যুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজ রেল লাইন থাকলেও পূর্বাঞ্চলের রেললাইন সমূহ মিটার গেজ। এজন্য দেশের পূর্বাঞ্চলে সমস্ত মিটার গেজ রেললাইন ব্রডগেজ ডুয়েল রেললাইন করা হচ্ছে। এমনটা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ তো বটেই ভারতের সঙ্গেও আমাদের ট্রেন যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। ইউরোপের মতোই বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলা অথবা অন্য কোনও রাজ্যে যাওয়া যাবে ট্রেনে। বাংলাদেশের ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সীমান্ত স্টেশন দর্শনা, এরপর নদীয়ার গেদে হয়ে কলকাতা পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে ২৮০ কিলোমিটার ও ভারতের মধ্যে ১২৯ কিলোমিটার। কিন্তু, পদ্মায় রেল সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল জেলা ও যশোর হয়ে বেনাপোল সীমান্ত পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার এবং পশ্চিমবঙ্গের হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে বনগাঁ জংশন হয়ে কলকাতা স্টেশন পর্যন্ত ৭৯ কিলোমিটার। মোট ২৫১ কিলোমিটার রেলপথ যেতে সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি লাগার কথা নয়। এরপর বেনাপোল পার হয়ে হরিদাসপুর ঢুকলেই বিদ্যুত্‍চালিত ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হবে। কাস্টম আগের মতোই ঢাকায় ও কলকাতা স্টেশনেই সারা হবে।

উল্লেখ্য, ভারতীয় ঋণ সহায়তায় ঢাকার কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চারলেন বিশিষ্ট ডুয়েল রেল লাইন নির্মিত হচ্ছে। ভারতীয় অনুদানে বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা সীমান্ত পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ কাজও চলছে। এছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-সহ বিভিন্ন সংস্থার ঋণ সহায়তায় আরও কয়েকটি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ চলছে। রেলপথ মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার বর্তমানে মিটারগেজ লাইন রয়েছে। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক টঙ্গী থেকে আগাউড়া ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের সমীক্ষা চালাচ্ছে। আর টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেল লাইন ডুয়েল গেজ-সহ ডাবল লাইন হলে আগরতলা স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৩৬ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে কলকাতা ২৫১ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে বাংলাদেশ অথবা ত্রিপুরার মানুষের ছয় ঘণ্টার বেশি লাগবে না। ভারতের সঙ্গে মোট ৯টি রেলওয়ে ক্রস বর্ডার রয়েছে। এর সবগুলি চালু হলে বাংলাদেশ-ভারতের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তণন আসবে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours