সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নয়া মোড়। তাঁর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন, এমন কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নাম উল্লেখ করে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরে জেলবন্দি সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের নামে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন সুদীপ্ত। এডিজি-র (কারা) দপ্তরে 'প্রিজনার্স পিটিশন' হিসাবে সুদীপ্ত সেনের নাম করে ওই চিঠি জমা পড়েছে। জেলবন্দি কেউ কোনও কর্তৃপক্ষের কাছে পিটিশন করতে গেলে তা সংশোধনাগারের সুপার ও এডিজি-র (কারা) মারফৎ করতে হয়। ১ ডিসেম্বর লেখা ওই চিঠি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কারা কর্তৃপক্ষ।
সুদীপ্ত সেনের নাম করে পাঠানো ওই পিটিশনের প্রতিলিপি রয়েছে। চিঠির হাতের লেখা সারদা কর্তারই কি না, তা 'এই সময়' পরীক্ষা করেনি। তবে ওই চিঠিতে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের তিন নেতার বিরুদ্ধে। এঁদের মধ্যে একজন আগে তৃণমূলে ছিলেন। নাম রয়েছে বর্তমানে সংবাদ শিরোনামে থাকা আর এক তৃণমূল নেতারও, যাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রবল জল্পনা রয়েছে। যদিও সুদীপ্তর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী শনিবার বলেন, 'চিঠির ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। এ নিয়ে আমার সঙ্গে ওঁর কোনও কথাও হয়নি। করোনা পর্বে ওঁকে জেল থেকে আদালতেও হাজির করানো হয়নি। এ দিনও আলিপুর আদালতে আরসি-৪ মামলায় ওঁর আসার কথা ছিল। সেখানেও তাঁকে হাজির করানো হয়নি।'

বতর্মানে সারদা মামলার চূড়ান্ত চার্জশিট জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁরা সুদীপ্তর চিঠি সরকারি ভাবে এখনও পাননি। পেলে চিঠির সত্যতা যাচাইয়ের পরই নথি হিসেবে তদন্তের অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আইন বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, 'একজন অভিযুক্তের চিঠি নয়, তদন্তকারীর কাছে দেওয়া তাঁর বয়ান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাত বছর ধরে সিবিআই বা ইডি কারও কাছে সারদা কর্তা এবিষয়ে কিছুই জানাননি। অথচ সেই সুযোগ ছিল। তদন্তকারী অফিসারকে তথ্য জানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করলে আদালতের অনুমতি নিয়ে ওই বয়ান রেকর্ড করা যেত।'
কী অভিযোগ তোলা হয়েছে চিঠিতে?

দু'পৃষ্ঠার চিঠিতে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সুদীপ্তর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। সিবিআই ও রাজ্য পুলিশকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুরোধও করা হয়েছে চিঠিতে। চিঠিতে সিপিএমের দু'জন, কংগ্রেস ও বিজেপির একজন করে শীর্ষ নেতার নাম করে অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়েছে, সিপিএমের দুই নেতার একজন ন'কোটি, অন্যজন দু'কোটি টাকা নিয়েছে। কংগ্রেসের এক নেতা নিয়েছেন ছ'কোটি, রাজনৈতিক জল্পনার শিরোনামে থাকা তৃণমূল নেতাও সুদীপ্তর কাছ থেকে ছ'কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে চিঠিতে। তালিকায় নাম থাকা বিজেপি নেতা অবশ্য কত টাকা নিয়েছেন, তা পরিষ্কার মনে নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরেও সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূলের কয়েকজন নেতাও তাঁর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে চিঠিতে লেখা হলেও আর কারও নাম করা হয়নি।

এই চিঠির বিষয়ে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, 'যারা এটা করিয়েছে, নির্বোধের মতো করেছে। সবাই হাসছে। সাত বছর পর মনে পড়ল? মুখ্যমন্ত্রী তো সিট তৈরি করেছিলেন। তাহলে কি সিট তথ্য চেপে রেখেছিল? এ থেকে স্পষ্ট, সিপিএমকে বাদ দিয়ে কিছু ভাবা যাচ্ছে না। সিপিএমকে যাঁরা দূরবিন দিয়েও দেখতে পাচ্ছিলেন না, তাঁরা সব জায়গায় এখন সিপিএমকে দেখছেন।' প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে পুরুলিয়ায় এই চিঠি প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি 'নো কমেন্টস' বলে বেরিয়ে যান। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া, 'জোর করে এরকম চিঠি অনেক লেখানো যায়। এর সঙ্গে সত্যের কোনও যোগ নেই। তৃণমূল আমাকে ভয় পাচ্ছে।' বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসা এক তৃণমূল নেতার পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, 'আমরা বিষয়টা জানিনা। তাই এনিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।'
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours