শুধু স্থানীয় ভাবে নয়, অন্য রাজ্য থেকেও ই-কমার্সের হাত ধরে বাড়ছে মধু বিক্রি৷ সুন্দরবনের মধু জগৎ জোড়া খ্যাতি রয়েছে। প্রতি বছর কয়েকশো মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই রফতানি করা হয় এই মধু।
কলকাতা:সুন্দরবনের মধুর চাহিদা বাড়ল। একদিনে এক হাজারের বেশি বোতলের অর্ডার করেছে অ্যামাজন। সম্প্রতি বাজারে বিক্রি হওয়া নামী সংস্থার মধু সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে -সেটা আদৌ মধু নাকি চিনি গোলা জল? সেন্টার ফর সাইন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট এই মধু সম্পর্কে প্রশ্ন তোলায় ক্রেতাদের এবার কেনার জন্য নজর পড়েছে সুন্দরবনের মধুর দিকে।বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের বনফুল মধু কেনার জন্য একদিনে অ্যামাজন ১০৩৭টি বোতলের অর্ডার দিয়েছে। যেখানে গত ছয় সাত মাসে ৩০০ -৪০০ বোতল মধুর অর্ডার হত।
অর্থাৎ হঠাৎ মধুর চাহিদা বেড়ে গিয়ে বিক্রি লাফিয়ে বাড়তে দেখা গিয়েছে। বন বিভাগের প্রতিনিধিরা আশা করছেন, একদিনে হঠাৎ এমন অর্ডার হয়েছে তবে আগামী দিনেও আরও চাহিদা হতে পারে। প্রসঙ্গত গত ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন লাগোয়া অঞ্চলের বিশেষ পদ্ধতিতে মধু চাষ শুরু করা হয়েছে।প্রতি কেজি মধুর দাম রাখা হয়েছে ৪২০ টাকা। এবার প্রায় ৩২টন মধু উৎপাদন হয়েছে এবং তা প্যাকেজিং করে বিপণন করা হচ্ছে। এই উৎপাদিত মধু দেশে-বিদেশে বিক্রির জন্য অ্যামাজনের সহায়তা নিচ্ছে বন বিভাগ।
বন বিভাগের এক কর্তা জানিয়েছেন, যেহেতু দামি কোম্পানির মধুতে ভেজাল রয়েছে বলে খবর রটেছে সেহেতু সুন্দরবনের বনফুলের এই মধুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। এই আগ্রহ শুধুমাত্র এই রাজ্যে নয় ভিন রাজ্যে লোকেদের মধ্যে রয়েছে বলে অর্ডার এসেছে।মধু বিক্রির টাকা থেকে সংগৃহীত অর্থ সুন্দরবনের মধু সংগ্রহকারীদের সাহায্যে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্যের বন দফতর।
সুন্দরবনের মধু জগৎ জোড়া খ্যাতি রয়েছে। প্রতি বছর কয়েকশো মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই রফতানি করা হয় এই মধু। যদিও চলতি বছরে লকডাউনের কারণে সেই মধু রফতানি করা যায়নি। ফলে ব্যাপক ভাবে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে বন দফতর। তার চেয়েও বেশি করে সমস্যায় পড়েছে মউলিরা।
চলতি বছরে এই মধু সংগ্রহের হার ভীষণ কমে যাওয়ায় মউলেরা ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তেমনি ভাবে মধু বাজারে অমিল থাকায় গ্রাহকরাও সমস্যায় পড়েছিলেন। লকডাউন অধ্যায়ে সেই সমস্যা কাটাতে এবার উদ্যোগ নেয় রাজ্যের বন দফতর। আর তাদের মাধ্যমেই এবার অ্যামাজনে মিলবে এই মধু। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে অর্ডার দেওয়া যাবে বনফুল মধু। ৭৯৮০৪৬৮৭০৯ নাম্বারে মধুর জন্যে যোগাযোগ করা যাবে। মধু সংগ্রহের সময় এসে গেলেও মউলিরা এখনও সংগ্রহের কাজ করে উঠতে পারেনি। যদিও গত কয়েকদিনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে অনেকেই আবার পরিযায়ী শ্রমিক। ফলে কড়া হয়েছে রাজ্যের বন দফতর। এপ্রিল মাস থেকে মধু সংগ্রহ কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে উভয় পক্ষই। সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে প্রতিবছর কয়েকশো মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা হয়। মোম যা সংগ্রহ করা হয় তা মধুর থেকেও বেশি দামে বিক্রি হয়ে যায় বিভিন্ন কারখানায়।সুন্দরবনের মধুর খ্যাতি ভারত তথা বিশ্ব জোড়া। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এই মধু রফতানি হয়ে থাকে। সরকার নির্ধারিত দামেই মউলেদের থেকে মধু কিনে নেওয়া হয় প্রতি বছর। তবে মোমগুলি মউলিরা নিজেরাই বাইরে বিক্রি করে দেয়। আর এ বছর এই মধু সংগ্রহ করতে না পেরে বহু মউলেরা পড়েছেন আর্থিক ক্ষতির মুখে। সুন্দরবনের  চাক ভাঙা মধু যেমন পাওয়া যাবে না তেমনি পাওয়া যাবেনা বাক্সবন্দি মধুও। এই পরিস্থিতিতে ই-কমার্স মারফত মধু বিক্রি হলে সুন্দরবনের মধু সংগ্রহকারী ও যারা মাছ ধরেন তাদের সুবিধা হবে বলেই জানাছে বন দফতর।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours