ধনতেরস হল, দীপাবলির প্রথম দিন। মূলত, দীপাবলির একদিন বা দু'দিন আগে ধনতেরস হয়। আশ্বিন মাসের ১৩তম পূর্ণিমা তিথিতে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনটি ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই পবিত্র একটি দিন। ধনতেরসে কেনার জন্য সোনাই থাকে পছন্দের তালিকায় সকলের উপরে। বাজেটে না পোষালে সোনার ছোটখাট গয়না কেনা যেতে পারে ধনতেরাসে।
এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: ধনতেরস হল, দীপাবলির প্রথম দিন। মূলত, দীপাবলির একদিন বা দু'দিন আগে ধনতেরস হয়। এটি ধনত্রয়োদশী বা ছোট দীপাবলি নামেও পরিচিত। ধনতেরস কথাটি থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, এটি ধন সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কিত। আশ্বিন মাসের ১৩তম পূর্ণিমা তিথিতে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনটি ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই পবিত্র একটি দিন। এই দিনে অনেকেই সোনার কয়েন বা গয়না কিনে থাকেন। ধনতেরস মানেই সৌভাগ্য। ধনলক্ষ্মীর পুজো দিয়ে সকলেই চায় নতুন কিছু বাড়িতে আনতে। এই দিন ধাতু কেনার প্রাচীন রীতি বহুদিন ধরে প্রচলিত। তবে শুধু ধাতু নয়, ধনতেরসে যে কোনও কিছুই নতুন কিনতে পারেন। ধনতেরসে কেনার জন্য সোনাই থাকে পছন্দের তালিকায় সকলের ওপরে। বাজেটে না পোষালে সোনার ছোটখাট গয়না কেনা যেতে পারে ধনতেরাসে। যদি গয়না কিনতে না চান তাহলে অবশ্যই কিনতে পারেন এই জিনিসগুলি।গণেশ, বালগোপাল, দুর্গা, রাধামাধব, লক্ষ্মী যে কোনও দেবদবীর রুপোর মূর্তি ধনতেরসে কেনার জন্য আদর্শ। পুজোর অন্যান্য উপাচারের ক্ষেত্রেও রুপো খুবই জনপ্রিয়। রুপোর সিংহাসন, সিঁদূর কৌটো, চাবির গোছা, মঙ্গল ঘট, ধূপদানি, প্রদীপ, আম্রপল্লব বা বিল্লপত্র সবকিছুই পাওয়া যায় বাজারে। ঠাকুরের মূর্তির নতুন পোশাক কেনার জন্যও এই সময় খুব ভাল। এছাড়াও কিনতে পারেন রুপোর বাসন। রুপোর থালা, চামচ, বাটি বা গ্লাস ধনলক্ষ্মীর পুজোর জন্য আদর্শ। বাতিদান বা ঘর সাজানোর রুপোর শো-পিসও এখন বাজারে খুব ভাল পাওয়া যায়। আর কিছু না হলে নিদেনপক্ষে রৌপ্যমূদ্রা বা রুপোর কয়েন তো কিনে রাখতেই পারেন।
সোনা, রুপো ছাড়াও যেকোনও বিশুদ্ধ ধাতু এইসময় কেনা যেতে পারে। কাঁসা বা পিতলের বাসন কেনার চলও বহু পুরনো। পিতলের ঘড়া বা কাঁসার থালা সৌভাগ্য বহনকারী। অনেকেই বছরে যে কোনও সময় রত্ন কিনে থাকেন। তবে, এই দিনটি রত্ন কেনার জন্য অত্যন্ত শুভ। অনেকেই এই দিনে সৌভাগ্যের কামনায় সোনা বা রুপো দিয়ে রত্ন ধারন করেন। এই দিন সোনা, রুপো ছাড়া অন্যান্য কোনও ধাতুর গহনা কিনতে নেই। তা যদি অনেক দামিও হয়, তাও কেনা যাবে না। এই দিন কাউকে উপহার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, মনে করা এই দিন যদি উপহার দেওয়া হয়, তা হলে নিজের সমৃদ্ধি অন্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাই যদি কিছু উপহার দিতেই হয় তা ধনতেরাসের আগে বা পরে দেওয়া উপযুক্ত।
ধনতেরাসে ধাতু কেনার রীতি থাকলেও যেকোনও নতুন জিনিস কেনাকেই এই সময় মানুষ সৌভাগ্যের মনে করে। বাড়িতে প্রয়োজনীয় ফ্রিজ, টিভি, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ধনতেরাসে কিনতে পারেন। এই সময় বিভিন্ন দোকানে এইসব সামগ্রীর ওপর ছাড়ও পাওয়া যায়। আপনার যদি বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম যেমন-রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ আভেন, ল্যাপটপ, মোবাইল কেনার পরিকল্পনা থাকে। তাহলে তা ওই দিনই কিনে ফেলুন। এ ছাড়া আপনার পেশা অনুযায়ী প্রয়েজনীয় সরঞ্জাম কিনলে তা আপনার জন্য সৌভাগ্যের বার্তা বয়ে আনবে। যেমন-লেখক হলে কলম, আর্টিস্ট হলে রং বা তুলি বা আঁকার কোনও সরঞ্জাম কেনা ভালো।
ধনতেরাসে ঝাঁটা কেনা খুবই শুভ। কারণ বলা হয়, ধনতেরাসে ঝাঁটা কিনলে সমস্ত দুঃখ, দারিদ্র চিরদিনের মতো বাড়ি থেকে দূর করে দেওয়া যায়। মৎস্যপুরাণ অনুযায়ী ঝাঁটাকে লক্ষ্মীর প্রতীক মনে করা হয়। আবার বৃহৎ সংহিতা অনুযায়ী, ঝাঁটা সুখ-শান্তি বৃদ্ধি করে ও দুষ্ট শক্তির সর্বনাশ করে। আবার, এর ব্যবহারে দারিদ্রও দূর হয়। এ দিন বাড়িতে নতুন ঝাঁটা দিয়ে ঘর পরিষ্কার করলে ঋণমুক্তি সম্ভব। পুরাণ অনুযায়ী, দ্রৌপদী-অর্জুনের বিয়েতে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় কৃষ্ণ একটি উপায় বার করেছিলেন। এর পর ঝাঁটা দিয়ে বাড়ি পরিষ্কার করা হয়েছিল। মনে করা হয় এর পর দ্রৌপদী-অর্জুনের বিয়ে হয়। ঝাঁটার সাহায্যে শক্তিলাভ ও ধনাঢ্য হওয়ার গল্প শুনিয়ে ছিলেন।পুরাণ মতে, ধন্বন্তরি সমুদ্র মন্থনের সময় পূর্ণ কলস হাতে উঠেছিলেন। তাই জল রাখার পাত্র অর্থাৎ কলসি এই বিশেষ দিনে কেনা অতি শুভ। দুর্গাপুজোর পরে এবং কালীপুজোর আগে হয় ধনতেরাস উৎসব। অন্যান্য বহু উৎসবের মতো বাঙালি এই উৎসবও আনন্দ সহকারে পালন করে এবং লক্ষ্মীর কাছে শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে। ধনতেরাসের দিন লক্ষ্মী পুজো করা অত্যন্ত ভালো বলে মনে করা হয়। এই দিন লক্ষ্মী দেবীর সামনে একটি লাল চেলি রাখুন এবং তার ওপর ১ টাকা বা ৫ টাকার ১টি কয়েন ও কিছুটা দুর্বা রাখুন। তার পর একটি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে মনের কামনা মায়ের কাছে নিবেদন করুন।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours