অবশেষে স্কুল গড়ার জন্য তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমি ফিরিয়েই দিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। করোনা-কালে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সৌরভের সাক্ষাতের দিনই সূত্র মারফৎ এমন ইঙ্গিত মিলেছিল। তা প্রকাশিতও হয়। সূত্রের দাবি, ওই দিনই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর হাতে জমি ফেরতের চিঠি দিয়ে আসেন সৌরভ। তবে দু’পক্ষের কেউই সেই দিন ওই বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেননি। বলা হয়েছিল, সৌজন্য সাক্ষাৎ। শনিবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। 
সৌরভের এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে রাজনীতি জগতে তাঁর কোনও বড় সিদ্ধান্তের পূর্বাভাস কি না, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে পর্যবেক্ষক মহলে। এ ক্ষেত্রেও কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে দিল্লিতে বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে দলের মুখ বা মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সৌরভের নাম কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মাথায় নেই ভাবলে ভুল করা হবে। বিষয়টি পরিণতি পেলে যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে।’’
নবান্নর একটি সূত্রের খবর, ‘গাঙ্গুলি এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট সৌরভ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যের কাছ থেকে পাওয়া ২ একর জমি ফিরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানানোর পরে তা প্রাথমিক ভাবে গৃহীত হয়েছে এবং অর্থ দফতরে ফাইল পৌঁছে গিয়েছে।
স্কুল করতে চেয়েছিলেন বলে প্রথমে বামফ্রন্টের আমলে সৌরভকে সল্টলেকে জমি দেওয়া হয়। সেই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন তৎকালীন নগরোন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। কিন্তু সেই জমি ঘিরে মামলা হয়। মামলায় হেরে জমি ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল সৌরভকে। এ বারেও প্রধানত মামলারই কারণে তিনি জমি ফেরত দিয়ে দিলেন বলে নবান্ন সূত্রের দাবি। 
নবান্নের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিউ টাউনে সিটি সেন্টার ২-এর কাছে ওই জমিতে (প্লট নং আইআইডি-২৯২০/১) দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আইসিএসই বোর্ডের অনুমোদিত স্কুল করতে চেয়েছিলেন সৌরভ। সেই কারণে হিডকোর তরফ থেকে তাঁকে তৃণমূল জমানায় জমি দেওয়া হয়। সেখানেও মামলা হয়। সেই মামলা এখনও চলছে। সব মিলিয়েই সৌরভের এই জমি ফেরানোর সিদ্ধান্ত, এমনটাই মনে করছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল। 
তবে এ বারের জমি ফেরানোর পিছনে বড় ‘রাজনৈতিক’ কারণও দেখছেন অনেকে। বস্তুত, বিজেপির শীর্ষ মহল যে সৌরভকে রাজ্যে আগামী নির্বাচনে ‘মুখ’ হিসেবে ভাবছে, তা আগেই বিভিন্ন ভাবে সামনে এসেছে। যদিও সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল প্রকাশ্যে এই ধরনের জল্পনায় আমল দিতে চায়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গেও যে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মধুর, সেটাই দাবি করা হয়েছে। তবে জমি ফেরতের জন্য সৌরভের আগ্রহ ‘অরাজনৈতিক’ বলে মানতে একেবারেই নারাজ রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশ। 
বস্তুত, বিজেপি শিবিরে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে সৌরভের মতো এক জন ‘বাঙালি আইকন’-এর ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’ কাজে লাগতে পারে বলেই দলের উপর মহলে বিবেচনা জারি আছে। ক্রিকেট প্রশাসক হওয়ার সুবাদে এখন সৌরভের সঙ্গে অমিত শাহের যোগাযোগও যথেষ্ট মসৃণ বলে বিজেপি শিবিরে অনেকেরই দাবি। এই অবস্থায় রাজ্য বিজেপির পরিচিত নেতাদের মধ্যে পারস্পরিক টানাপড়েন রুখতেও সৌরভকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পছন্দ করতে পারেন বলে জল্পনা জোরদার হয়েছে। 
সম্প্রতি সৌরভের জন্মদিনে টুইট করে ক্রিকেট টিম পরিচালনায় তাঁর ‘দক্ষতা’র প্রশংসা করেছিলেন রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন। একই দিনে সৌরভের স্ত্রী ডোনা বলেছিলেন, সৌরভ যদি রাজনীতিতে যান, শীর্ষেই থাকবেন। সৌরভের ঘনিষ্ঠ মহল অবশ্য এ প্রশ্নে হিরণ্ময় নীরবতা অবলম্বন করছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours