বিশ্বের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চের পর ১৯৯০ সালে লেকচারার হিসেবে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন আশুতোষ ঘোষ। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লেকচারার ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সিনিয়র লেকচারার হিসেবে বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজে পড়ান।
বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মান ধরে রাখতে পারবেন শান্তার উত্তরসূরি এই আশুতোষ? কে ইনি?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন স্থায়ী উপাচার্য সম্পর্কে জানুন
বিগত কিছুদিন ধরেই সংবাদের শিরোনামে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। নানা ইস্যুতে রাজ্য সরকার তথা শাসকদলের সঙ্গে তাঁর ‘সংঘাত’ সামনে এসেছে। সেই শান্তা দত্তের জায়গায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য হচ্ছেন আশুতোষ ঘোষ। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক। শান্তা দত্তের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ‘সংঘাত’-র পর স্বাভাবিকভাবেই নতুন উপাচার্যকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কী কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাঁর অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার সম্পর্কে?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাছাই প্রক্রিয়ায় ডাক না পাওয়ার পর শান্তা দে বলেছিলেন, “আমি বোধহয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র জীবিত ব্যক্তি, যাঁর কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ৬টা মেডেল আছে। এই বায়োডেটা নিয়ে পরবর্তীকালে পিএইচডি করেছি। বেস্ট ‘গ্রাজ্যুয়েট অফ দ্য ইয়ার’ হই। ইউনিভার্সিটি গোল্ড মেডেল পেয়েছি। এটা আমার পড়াশুনো। আর আমার কাজের অভিজ্ঞতা? ২ বছর হেড অফ দ্য ডিপার্টমেন্ট, ৩ বারের ডিন, ২০ বছর UG বোর্ডের চেয়ারম্যান, ৩ পিজি বোর্ডে। দীর্ঘ আট বছর ICC বোর্ডে প্রিসাইডিং অফিসার। এত লম্বা অভিজ্ঞতা।” ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের জায়গায় যিনি আসছেন, তাঁর অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার কেমন?
অধ্যাপক আশুতোষ ঘোষের জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর। অর্থাৎ এখন তাঁর বয়স ৬৫ বছর। ১৯৭৯ সালে কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পাশ করেন। ১৯৮১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে M.Sc পাশ করেন। আর Ph.D করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৮৭ সালে Ph.D সম্পূর্ণ হওয়ার পর বিশ্বের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ করেছেন। আমেরিকার ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং সায়েন্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে অল্প কিছুদিনের জন্য জার্মানির দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছেন।
কর্মজীবন শুরু লেকচারার হিসেবে-
বিশ্বের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চের পর ১৯৯০ সালে লেকচারার হিসেবে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে কর্মজীবন শুরু করেন আশুতোষ। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লেকচারার ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সিনিয়র লেকচারার হিসেবে বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজে পড়ান।
১৯৯৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দেন। তারপর ধাপে ধাপে রিডার, প্রফেসর এবং রসায়ন বিভাগের প্রধান হন। ২০১৩ সালের অগস্ট থেকে ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল ফর পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন সায়েন্সের ডিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউজি বোর্ড অব স্টাডিজ ইন কেমিস্ট্রির সদস্য তিনি। তাঁর তত্ত্বাবধানে অনেক পড়ুয়াই Ph.D সম্পূর্ণ করেছেন।
আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে। এই প্রথম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পাচ্ছেন না আশুতোষ ঘোষ। এর আগেও এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে অন্তর্বর্তী উপাচার্য ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব সামলেছেন। এবার স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন। একসময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। ১৯০৬ থেকে ১৯১৪ এবং ১৯২১ থেকে ১৯২৩, দুই দফায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন তিনি। শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠুক কলকাতা, এটাই ছিল বাংলার বাঘ হিসেবে পরিচিত স্যর আশুতোষের লক্ষ্য। শতাব্দী পেরিয়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য হচ্ছেন আর এক আশুতোষ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি কী কী পদক্ষেপ করেন, সেটাই এখন দেখার।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours