পোস্ট অফিসের এই চেহারা বদলাতে তোড়জোড়টা শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। কাজ হচ্ছিল IT 2.0 এর অধীনে। ফেজ ওয়ানের কাজ শুরু হয়েছিল তেইশ থেকে। সূত্রের খবর, সেই কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। তারপরই পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে ফেজ ২ এর কাজ।
ডাকঘর দিচ্ছে ডাক, ব্যাঙ্ক-ক্যুরিয়র তফাৎ যাক’
প্রতীকী ছবি
প্রতিটি কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। কাউন্টারের ভিতর অসহায়ভাবে বসে রয়েছেন নিরুপায় কর্মচারীরা। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘামছেন গ্রাহক। ঘামছেন সরকারি কর্মীরাও। লম্বা লাইনের মাঝ থেকে, কখনও আবার একদম পিছন থেকে উড়ে আসছে একটাই লাইন, ‘ও দাদা…. আজ কী আর কাজ হবে না?’ প্রশ্ন উড়ে এলেও ব্য়াজার মুখেই বসে রইলেন সরকারি কর্মীরা। কারও মুখে কোনও কথা নেই। পরিষেবা দেবেন কী করে! ইন্টারনেট লিঙ্কই তো নেই! ছবিটা চেনা চেনা লাগছে? ভাবছেন নিশ্চয় ব্যাঙ্কের কথা বলছি। ধরছিলেন ঠিকই, কিন্তু বলছি আসলে পোস্ট অফিসের কথা। ব্যাঙ্কের মতো মাঝেমধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে পোস্ট অফিসে। ফলে প্রায়শই চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে হয় গ্রাহকদের। সম্প্রতি ডাকবিভাগ শহরের নন ফাংশনাল ডাকঘরগুলি বন্ধ করে গ্রামীণ ডাকঘরগুলির পরিষেবা আরও উন্নত করার চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে। তা নিয়েই শুরু হয়েছে চর্চা। শোনা যাচ্ছে সেপ্টেম্বর মাস থেকেই পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে নতুন কাজ। বাঁকুড়া থেকে জলপাইগুড়ি, তোড়জোড় চলছে সর্বত্রই। এবার কী সত্যিই বদলাবে গ্রাহক হয়রানির ছবিটা? দেশের প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার পোস্ট অফিসে শুরু হয়ে যাবে অধুনিকিকরণের প্রক্রিয়া। একি সঙ্গে উঠে যাচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন রেজিস্ট্রি পোস্ট পরিষেবা। এই পরিষেবাকে যুক্ত করা হচ্ছে স্পিড পোস্টের সঙ্গে।
পোস্ট অফিসের এই চেহারা বদলাতে তোড়জোড়টা শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। কাজ হচ্ছিল IT 2.0 এর অধীনে। ফেজ ওয়ানের কাজ শুরু হয়েছিল তেইশ থেকে। সূত্রের খবর, সেই কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। তারপরই পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে ফেজ ২ এর কাজ। সব লেভেলেই সফটওয়ার বদলে নিজস্ব সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু সিলেক্টেড ডিভশনে পাইলট প্রজেক্ট শুরু হয়েছিল জানুয়ারি থেকে। সেই কাজও শেষ হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। সোজা কথায়, চিঠি ডেলিভারি থেকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা, সর্বত্রই আরও গতি আনতে চাইছে ভারতীয় ডাক বিভাগ। কড়া টক্কর নেবে সব চলমান ক্যুরিয়ার, ডেলিভারি পরিষেবাগুলির সঙ্গেও।
শহরের একাধিক সাব-পোস্ট অফিস বন্ধ হবে
যে সাব-পোস্ট অফিসে কাজের চাপ কম তাদের ওপর কোপ
মাপকাঠিতে সাব-পোস্ট অফিসের পারফরম্যান্সও
মূল পোস্ট অফিসের ২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সাব পোস্ট অফিসে নজর
বন্ধ সাব-পোস্ট অফিসের কর্মীদের অন্য অফিসে স্থানান্তর
গ্রামে যে পোস্ট অফিস ১ জন কর্মী নিয়ে চলছে সেখানে ট্রান্সফার
সাব-পোস্ট অফিসের যন্ত্রপাতিও যাবে গ্রামে গ্রামে
কম সময়ের মধ্যে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন সামগ্রী গ্রাহকের কাছে ডেলিভারিতে আলাদা করে জোর দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় একাধিক পিন কোড নম্বরে ‘ডেলিভারি’ করার জন্য সেক্টর করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ এলাকার পোস্ট অফিসের পরিষেবা উন্নত করার লক্ষ্যে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘রোড ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক’ এর আওতায় নতুন শিডিউল চালু হচ্ছে। এতে কম সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা পরিষেবা পাবে। গ্রাহকদের সুবিধার্থে আধুনিক এটিএম কার্ড করা হয়েছে। কাজটা কীভাবে হবে তা বোঝার জন্য এতদিন ধরে চলা কাজের পদ্ধতিটা বোঝা দরকার।
কোন পথে বদল?
অঞ্চল ভিত্তিতে মূল হেড অফিসের নিচে থাকে সাব অফিস। সাব অফিসের নিচে থাকে ব্রাঞ্চ অফিস। এই ব্রাঞ্চ অফিসই হচ্ছে আপনার পাড়ায় পাড়ায় মূলত যেগুলিকে দেখে থাকেন। আপনার বাড়িতে চিঠি এই ব্রাঞ্চ অফিস থেকেই মূলত গিয়ে থাকে। শোনা যাচ্ছে আগামীতে চিঠি যাতে আরও দ্রুত যাতে আসে তার জন্য চেষ্টা চলছে। চিঠির জন্য আলাদা ডিপো তৈরির চিন্তাভাবনাও রয়েছে বলে খবর। একইসঙ্গে আর্থিক পরিষেবার ক্ষেত্রেও যে সমস্ত জটিলতা রয়েছে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা চলছে।
একনজরে বদল
ভারতীয় ডাক হয়ে উঠবে আরও অত্যাধুনিক
মোট ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ
আইটি ২.০ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশজুড়ে ডাক বিভাগে অ্যাডভান্সড পোস্টাল টেকনোলজির ব্যবহার
ডিজিটাল হয়ে উঠবে ভারতীয় ডাক বিভাগ
ডাক বিভাগে ইউপিআই পেমেন্ট সিস্টেম সীমাবদ্ধ নয়
ডাক বিভাগের সঙ্গে জুড়ে ইউপিআই পেমেন্ট সিস্টেম
গ্রাহকরা মোবাইলের মাধ্যমের করতে পারবেন অধিকাংশ কাজ
মেল ডিপার্টমেন্ট আর ব্যাঙ্কিং ডিপার্টমেন্ট। এই দুই ডিপার্টমেন্টেই কাজে গতি আনতে চাইছে ভারতীয় ডাক বিভাগ। এর মধ্যে ব্যাঙ্কিং ডিপার্টমেন্টে স্মল সেভিংস ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের নিজস্ব পেমেন্ট ব্যাঙ্ক বা IPPM রয়েছে। সোজা কথা এবার কড়া টক্কর নেবে সাধারণ ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সঙ্গেও। কিন্তু ওই যে শুরুতে বলছিলাম IT 2.0 এর ফেশ টু-র কাজটা শুরু হয়ে গিয়েছিল। সূত্রের খবর, কিছু কিছু সিলেক্টেড ডিভশনে পাইলট প্রজেক্ট শুরু হয়েছিল জানুয়ারি থেকে। টেস্টিংয়ের সময় অনেক জায়গাতেই লিঙ্কের সমস্যা হয়েছে। তবে সেই কাজ অনেকটাই গুটিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। গ্রাহকরা যদিও বলছেন লিঙ্ক না থাকার সমস্যায় বরাবরই জেরবার তারা। যত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হয় ততই মঙ্গল। লিঙ্ক না থাকার সমস্যা অনেকটাই মিটবে।
এই বদলের সঙ্গেই ডাক বিভাগ ঠিক শহরের নন-ফাংশনাল, নন-পারফর্মিং ডাকঘরগুলি বন্ধ করে সেখানের কর্মী ও যন্ত্রপাতি গ্রামীণ ডাকঘরগুলিতে নিয়ে গিয়ে পরিষেবা উন্নত করার চেষ্টা করা হবে। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন শহরে থাকা এমন কয়েকটি ডাকঘরকে চিহ্নিত করে সেগুলি বন্ধ অথবা অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একই ছবি দেখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতেও। মানে, প্রায় সব জায়গাতেই শুরু হয়ে গিয়েছে কাজ। তবে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে বিপক্ষে উঠে আসছে নানা মতামত। কিছু মানুষ বলছেন, কাজে গতি এলে সুবিধা হবে। কিছু মানুষ বলছেন অসুবিধার কথা।
কী বলছেন পোস্ট অফিসের কর্তারা?
ডাক বিভাগ কিন্তু মনে করছে এই উদ্যোগে কাজে অনেকটাই গতি আনা সম্ভব হবে। বড় কর্তাদেরও অন্তত তেমনটাই মত। এই যেমন বাঁকুড়া ডাক বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট অনিরুদ্ধ বিশ্বাস সিস্টেম আপগ্রেড করলে মানুষের অনেক সুবিধা হবে। নতুন কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। অন্যান্য জায়গার মতো জলপাইগুড়ি হেড পোস্ট অফিসেও বিভিন্ন পরিষেবার কাজ শুরু হতে চলেছে নতুন মাস থেকেই। এই উপলক্ষে জলপাইগুড়ি হেড পোস্ট অফিস কতটা প্রস্তুত তা সরজমিন খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার বিকেলে জলপাইগুড়ি হেড পোস্ট অফিসে এসেছিলেন পোস্ট মাস্টার জেনারেল রিজু গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি মানছেন গ্রামীণ এলাকায় নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত পরিষেবার সমস্যার কথা। তিনি বলছেন, ইতিমধ্যেই অনেক পোস্ট অফিস চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলিকে ক্লোজ করে তাদের নেটওয়ার্ক গ্রামীণ এলাকায় শিফট হবে। গোটা উত্তরবঙ্গেই ধাপে ধাপে এই কাজ হবে।
অর্থাৎ, আশা-আশঙ্কার দোলাচলের মধ্যেই নতুন সম্ভাবনার কথা বলছে ডাক বিভাগ। ব্রিটিশ শাসন কালে ১৮৭৭ সালে যাত্রা শুরু করেছিল ভারতীয় ডাক পরিষেবা। ডাকহরকারর যুগ পেড়িয়ে ভারতীয় ডাক ব্যবস্থা এখন বিশ্বের সব থেকে বড় ডাক ব্যবস্থা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে হেঁটেছে ভারতীয় ডাক। এবার আরও একটা পর্ব। সম্প্রতিই কর্নাটকে সাময়িক ভাবে কয়েকটি পোস্ট অফিসে এই আধুনিকীকরণ সংক্রান্ত পরীক্ষা সফলভাবে হয়েছে। বাংলার গ্রাহকরা যদিও দিন গুনছেন দিন বদলের। এখন দেখার কতটা গতিময় এই জীবনে নতুন ছন্দে কতটা গতি পায় আমার-আপনার পোস্ট অফিস। দিনের শেষে কতটাই ঘরে ফেরে লিঙ্ক।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours