তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনই হবে, যখন গ্লোবাল সাউথ যুদ্ধে জড়াবে। কী এই গ্লোবাল সাউথ? কাদের বলা হয়? আজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাদের ভূমিকা। কেন আজ ব্যর্থ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন? তাদের কথা শুনছে না ছোট-বড় কোনও দেশই?
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়া কঠিন, কেন? অঙ্কটা জেনে নিন
বিশ্বজুড়ে যেন একটা অশান্তির পরিবেশ! প্রায় নিত্যদিনই দুনিয়ার কোনও না কোনও প্রান্তে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে বা যুদ্ধের তোড়জোড় করছে। পশ্চিম এশিয়াই হোক বা পূর্ব ইউরোপ– দুই দেশের বিবাদে যতই তৃতীয় দেশ জড়িয়ে পড়ছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মেঘ ততই ঘনীভূত হচ্ছে। ইরান-ইজরায়েল সংঘাত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকার প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়া, পাল্টা ইরানের তরফে হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি– সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দুনিয়া আজ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে– এটাকে অতিরঞ্জিত দাবিই বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
বিশ্বজুড়ে নানা অস্থিতিশীলতা সত্ত্বেও, আধুনিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা কাঠামো, ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর উত্থান এবং আঞ্চলিক সংস্থাগুলির ক্রমবর্ধমান ভূমিকা আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন জাগতে পারে, গ্লোবাল সাউথ কী? আফ্রিকা, এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার যে দেশগুলি উন্নয়নশীল বা ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম উন্নত– তাঁদের একত্রে গ্লোবাল সাউথ বলে ডাকা হয়। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির সার্বিক মূল্যায়নের জন্য একবার অতীতের দুটি বিশ্বযুদ্ধের কারণ বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির বেশিরভাগই পশ্চিমী দেশগুলির উপনিবেশ ছিল। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলিকে কখনই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হয়নি। বরং জোর করেই যুদ্ধের মঞ্চে টেনে আনা হয়েছিল। ভারতীয় সেনাকে ইউরোপে পাঠানোর সিদ্ধান্ত-ই হোক বা আফ্রিকার উপনিবেশগুলিকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানো–দুটি বিশ্বযুদ্ধেই জোর করে এই দেশগুলিকে যুদ্ধে জড়ায় ইউরোপকেন্দ্রিক সাম্রাজ্যবাদী দেশ। কিন্তু বর্তমানে আন্তর্জাতিক কাঠামোর পুনর্গঠন এবং গ্লোবাল সাউথের উত্থানের জন্য বিশ্বজোড়া প্রেক্ষাপট কিন্তু আগের দুটি বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলি এখন স্বাধীন, সার্বভৌম। তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে সক্ষম। তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, অস্ত্র রয়েছে, এমনকী সেই অস্ত্র তারা অন্য দেশেও সরবরাহ করছে। এককথায়, আমেরিকা বা ইউরোপের উপর তাদের নির্ভরতা আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours