ভারতীয় নৌসেনার মাস্টারপ্ল্যান। পোশাকি নাম প্রজেক্ট-৭৭। এমন সব অস্ত্র তৈরি করছে ভারত, গোটা বিশ্বের সমীকরণ বদলে যেতে পারে। কী এই প্রজেক্ট-৭৭? কেন এত রাখঢাক? মাথায় কারা? কী তৈরি হচ্ছে?
কেন এত গোপনে এই অস্ত্র বানাচ্ছে ভারত?
একে বলা হচ্ছে ভারতীয় নৌসেনার মাস্টারপ্ল্যান। পোশাকি নাম প্রজেক্ট-৭৭। অত্যন্ত গোপনে নৌসেনা এই প্রকল্পের অধীনে এমন সব অস্ত্র তৈরি করছে, যা পাকিস্তান তো বটেই এমনকী বেজিংয়েরও সব বেয়াদপির কড়া জবাব দেবে। কী এই প্রজেক্ট-৭৭? কী এমন গোপনে বানাচ্ছে নৌসেনা?
আসলে এই প্রকল্পের অধীনে ভারতের নৌসেনাকে আরও বলীয়ান করা হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক সাবমেরিন। যে সে সাবমেরিন নয়। অ্যাটাক সাবমেরিন। মহাসাগরের নিচ থেকে হামলা চালিয়ে শত্রুকে ফালাফালা করে দেবে। শত্রু আগাম আঁচ করতে পারবে না। এমন সব সাবমেরিন তৈরি হচ্ছে যা থেকে সুপারসনিক ও হাইপারসনিক — দুরকমের মিসাইলই ছোঁড়া যাবে। প্রকল্পের মোট খরচ প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা। থাকবে স্টেলথ টেকনোলজি। জলের নিচে এত চুপচাপ চলবে, যে শত্রু টেরও পাবে না। ডিআরডিও, এল অ্যান্ড টি-র মতো সংস্থা এই ডুবোজাহাজ তৈরি করছে। এগুলি হবে জলের নিচে ভারতের ‘হান্টার-কিলার’ মেশিন। শত্রুর যে কোনও জাহাজকে খুঁজে বার করে ধ্বংস করতে পারবে এমন-ই ট্র্যাকিং সিস্টেম বসানো হচ্ছে। দেশি প্রযুক্তিতে নির্মিত এই সাবমেরিন কাদাজলেও সমান জোরে ছুটতে পারবে। থাকছে অ্যাডভান্সড সোনার-সিস্টেম। সাবমেরিনের পেটে থাকবে অ্যাডভান্সড প্রযুক্তির টর্পেডো।
আজ ভারতের ঘরে কমবেশি ২০টি সাবমেরিন রয়েছে। কিন্তু আইএনএস অরিহন্ত ছাড়া বেশিরভাগ সাবমেরিন-ই লং রেঞ্জে হামলার জন্য ‘সাব-সনিক’ মিসাইল ছুঁড়তে পারে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই রুশ প্রযুক্তিতে নির্মিত ডুবোজাহাজ ভারত হয় লিজে, নয়তো কিনে ব্যবহার করে। এই সব সাবমেরিন শত্রুর অজান্তে হামলা করতে খুব একটা কার্যকর নয়। কারণ, তাদের গতি বেশ কম ছিল। আজ ভারত বুঝতে পেরেছে, শত্রুর হুমকির জবাব দিতে হলে দরকার সবচেয়ে আধুনিক ডুবোজাহাজ। আর তাই নৌসেনার এই প্রজেক্ট-৭৭। এই প্রকল্পের অধীনে অন্তত ৬টি ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার্ড অ্যাটাক সাবমেরিন’ বা SSN তৈরি করছে ভারত। বিশাখাপত্তমের শিপ বিল্ডিং সেন্টারে অত্যন্ত গোপনে নেভি-র ওয়ারশিপ ডিজাইন ব্যুরো এই ডুবোজাহাজগুলি তৈরি করছে। সবরকম আধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকবে এতে। সেই সঙ্গে হামলা চালাতে অত্যন্ত দক্ষ হবে। ১৫০০-২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হামলা করতে পারবে এমন সব মিসাইল এই সাবমেরিনে বসাচ্ছে ডিআরডিও।
কেন প্রয়োজন পড়ল এত আধুনিক সাবমেরিন নির্মাণের?
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্র আঁচ করতে পেরেছে যে চিন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশকে বিশ্বাস করা যায় না। সেই সঙ্গে আমেরিকাও ঘনঘন অবস্থান বদলাচ্ছে। অস্ত্রের জন্য ভারত আর কারও উপর নির্ভরশীল বা মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে রাজি নয়। ভারত নিজেই এখন নিজের অস্ত্র বানানোয় জোর দিচ্ছে। আর তাই প্রজেক্ট-৭৭। ন্যাভাল টেকনোলজিতেও ভারত এখন স্বনির্ভরতার পথে। তাই নয়া সাবমেরিনগুতে থাকবে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর। দীর্ঘক্ষণ জলের তলায় থাকতে, আচমকা গতি বাড়াতে ওস্তাদ এই নয়া প্রযুক্তির সাবমেরিনগুলি। ওই যে শুরুতেই বলছিলাম, ভারতের দরকার ছিল এমন সাবমেরিন যা শত্রুকে চমকে দিয়ে হামলা করতে পারবে। হামলার হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত দুশমন টের পাবে না যে ভারত আক্রমণ করতে চলেছে। পাশাপাশি, জলপথে কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছতেও এই সাবমেরিনগুলি অত্যন্ত কার্যকর হবে।
ভারতের অরিহন্ত-ক্লাস সাবমেরিনগুলির মতো স্ট্র্যাটেজিক পজিশন রক্ষা নয়, নতুন সাবমেরিনের আসল লক্ষ্যই হবে ঘরে ঢুকে শত্রুকে বিনাশ করে আসা। শত্রুর জাহাজকে তাড়া করে জলসীমা থেকে দূরে পাঠানো, প্রিসিশন স্ট্রাইক চালাতে দক্ষ এই নয়া সাবমেরিনগুলি। এতে থাকবে অ্যাডভান্সড ওয়েপন সিস্টেম। থাকবে শব্দের চেয়েও জোরে ছুটতে পারে এমন সব মিসাইল। এমনকী আনম্যানড আন্ডারওয়াটার ভেহিক্যাল (UUV)-ও থাকবে এই ডুবোজাহাজে। একবার নৌসেনায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে ভারতীয় নেভির শক্তি যে বহুগুণে বেড়ে যাবে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি এই প্রকল্পে ছাড়পত্র দিয়েছে। ২০৩০-এর মধ্যে প্রথম দফার সাবমেরিন তৈরি হয়ে যাবে।


Post A Comment:
0 comments so far,add yours