সুপ্রিম কোর্ট না সংসদ, কার হাতে বিচারপতি ভার্মার ভবিষ্যৎ!
বিচারপতি ভার্মার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবল। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চে তিনি আর্জি জানান, যাতে দ্রুত শুনানি করা যায়। তাঁর দাবি, বিষয়টিতে সাংবিধানিক ইস্যু জড়িয়ে আছে, তাই দ্রুত শুনানি প্রয়োজন।


সুপ্রিম কোর্ট না সংসদ, কার হাতে বিচারপতি ভার্মার ভবিষ্যৎ!


রাজনৈতিক নেতা কিংবা মাফিয়া নয়, এক বিচারপতির বাড়িতে গুচ্ছ গুচ্ছ টাকার নোটের বান্ডিল দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। আবারও আলোচনার শীর্ষে সেই বিচারপতি যশবন্ত ভার্মা। উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে জগদীপ ধনখড়ের ইস্তফা দেওয়ার পিছনেও বিচারপতি ভার্মার নাম উঠে আসছে। বিরোধীদের স্বাক্ষর করা ইমপিচমেন্টে সম্মতি দিয়েছিলেন ধনখড়। তারপরই পদত্যাগ। তবে সে সব জল্পনা পিছনে রাখলে প্রশ্ন একটাই, কী হবে বিচারপতি ভার্মার ভবিষ্যৎ? কে ঠিক করবে, সুপ্রিম কোর্ট না সংসদ।


উদ্ধার হয় বান্ডিল বান্ডিল টাকা



মে মাসে সামনে আসে অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট

বিচারপতির বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন বিচারপতির একটি অনুসন্ধান কমিটি গড়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। গত ৩ মে সেই কমিটি তাদের রিপোর্টে বিচারপতি ভার্মার বাড়িতে টাকা পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

বিচারপতি ভার্মাকে নিয়ে তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না একটি ইন হাউস কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি নিশ্চিত করে যে বিচারপতি ভার্মার বাড়ির স্টোররুম থেকে উদ্ধার হয়েছে টাকা। সেই রিপোর্টই পাঠানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে।

অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টের পরই সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখেছিলেন। বিচারপতি ভার্মার ইমপিচমেন্টের সুপারিশও করেন প্রধান বিচারপতি। সূত্রের খবর, বিচারপতি ভার্মার পদত্যাগের কথাও বলেছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। কিন্তু, পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন বিচারপতি ভার্মা।

সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ বিচারপতি ভার্মা

বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগে সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে চ্যালেঞ্জ করেছেন বিচারপতি ভার্মা। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। শুধু ওই রিপোর্টকেই চ্যালেঞ্জ নয়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নির্দেশকেও চ্যালেঞ্জ করেন, যা একজন হাইকোর্টের বিচারপতির ক্ষেত্রে বেনজির পদক্ষেপ।

কী বক্তব্য বিচারপতি ভার্মার?

বিচারপতির দাবি, সংবিধানের ১২৪ ও ২১৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধানের হাতে বিচারপতিকে সরানোর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। জাজেস এনকোয়ারি অ্যাক্ট অনুযায়ী তদন্তের পর সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেলেই সরানো যায় বিচারপতিকে। সুপ্রিম কোর্টে বেনামে এই আবেদন জানিয়েছেন বিচারপতি ভার্মা। নিজের নাম XXX বলে উল্লেখ করেছেন, তবে পদ হিসেবে এলাহবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি বলে উল্লেখ করেছেন।

বিচারপতির আরও দাবি, ওই অন্তর্বর্তী তদন্তকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করুক সুপ্রিম কোর্ট। তাঁর দাবি, এই তদন্ত আসলে ক্ষমতাচ্যুত করার হুঁশিয়ারি ছাড়া আর কিছু নয়।

বিচারপতি ভার্মা সরাসরি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি খান্নাকে আক্রমণ করেন। বিচারপতি ভার্মার দাবি, তাঁর কোনও কথা শোনা হয়নি। এমনকী তাঁর জমা দেওয়া কোনও নথিও দেখা হয়নি বলে অভিযোগ। বিচারপতির বক্তব্য, অনুমানের উপর নির্ভর করেই পুরো তদন্ত করা হয়েছে। আরও অভিযোগ, কয়েকজন আধিকারিক ব্যক্তিগতভাবে যে ছবি ও ভিডিয়ো তুলেছিলেন, তার উপর ভিত্তি করেই তদন্ত হয়েছে।

কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা যায়নি যে ঠিক কীভাবে নগদ টাকা সেখানে এল, কত টাকা রাখা হয়েছিল, ওই নোট আসল কি না।

দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়

বিচারপতি ভার্মার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবল। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চে তিনি আর্জি জানান, যাতে দ্রুত শুনানি করা যায়। তাঁর দাবি, বিষয়টিতে সাংবিধানিক ইস্যু জড়িয়ে আছে, তাই দ্রুত শুনানি প্রয়োজন।

প্রধান বিচারপতি থাকবেন না বেঞ্চে

বিচারপতি ভার্মার আবেদনের শুনানি হবে ঠিকই, তবে সেই বেঞ্চে থাকবেন না প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই। তিনি জানিয়েছেন, বিচারপতি ভার্মার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির অংশ ছিলেন তিনি। তাই এই মামলা তিনি শুনতে পারবেন না। তবে প্রধান বিচারপতি একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

সংসদের হাতে বিচারপতি ভার্মার ভবিষ্যৎ?

সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনের প্রথম দিনই ১৫২ জন সাংসদ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে বিচারপতি ভার্মাকে অপসারণের জন্য স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। রাজ্যসভার ৫০ জনের বেশি সাংসদও একই প্রস্তাব জমা দেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের (তখনও উপরাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেননি তিনি) কাছে। আবেদনকারীদের মধ্যে শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদরা রয়েছেন। বিজেপি, কংগ্রেস, টিডিপি, জেডিইউ, সিপিএম এবং অন্য দলের সাংসদরা আবেদনে সই করেছেন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে অনুরাগ ঠাকুর, রবিশঙ্কর প্রসাদ, রাহুল গান্ধীও রয়েছেন।

এবার ইমপিচমেন্টের কী হবে?

নিয়ম অনুযায়ী, সংসদের দুটি কক্ষ যৌথভাবে তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়তে পারে। ওই কমিটি বিচারপতি ভার্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্যানেল তৈরির কথা ঘোষণা করতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। ওই কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি, কোনও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং একজন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ থাকতে পারেন। সূত্রের খবর, ওই বিচারপতিকে ইমপিচ করা নিয়ে সংসদের পরের অধিবেশনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে পারে কমিটি।

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারপতি অপসারণের জন্য সংসদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যেতে পারে। এই প্রস্তাব আনতে লোকসভার ১০০ সাংসদের স্বাক্ষর প্রয়োজন। আর রাজ্যসভার ৫০ সাংসদের সই দরকার। ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবটি সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাশ করাতে হবে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours