২০১৪ সাল থেকে কারখানার গেটে তালা! হিন্দুস্থান মোটরস কোম্পানির বিশ্বখ্যাত সেই অ্যাম্বাসাডর কারখানার ৩৯৫ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে সেই দশ বছর হয়ে গেল। অনেকেই বলেন এখন সেখানে ভূতের বাস! কিসের ভূত? রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনার?
বেঁচে উঠল হিন্দমোটর! তৈরি হবে এবার ১২৮ চাকার গাড়ি
চাপানউতোর চলছেই
চালু কারখানার গেটে লকআউটের তালা। বিক্ষোভ, আন্দোলন, তারপর যে কে সেই! সুদীর্ঘকাল ধরে এই ছবিটাইতেই অভ্যস্ত বাংলা। কিন্তু এবার কিছুটা উলটপুরান। প্রায় এক যুগ আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্বখ্যাত গাড়ি কারখানার জমিতেই নতুন করে ঘুরতে চলেছে শিল্পদ্যোগের চাকা। আইকনিক অ্যাম্বাসাডর গাড়ির আঁতুরঘর হিন্দমোটরেই এবার আর চারচাকা নয় ১২৮ চাকার পথচলা শুরু হচ্ছে এক্কেবারে নতুন উদ্যোমে। হ্যাঁ হিন্দমোটরেই ফের বাজবে ভোঁ! ফের উঠবে ধোঁয়া। হ্য়াঁ, এখানেই হচ্ছে বিশালাকার কারখানা। যদিও কথাটা প্রথমে শুনে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, কারখানা হচ্ছে শুনলেই এখনও কেমন যেন একটু বুক দুরুদুরু করে হুগলির বাসিন্দাদের। সিঙ্গুরের জেলা বলে কথা! ঘরপোড়া গরু যে! মুখে হাসি ফুটলেও খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না মনে মনে। এখনও যে মনে দগদগে সিঙ্গুরের স্মৃতি! তাই নতুন খবরটা শোনার পর যেন নিজেদের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না! কিন্তু ঠিক কিসের কর্মযজ্ঞ শুরু হতে চলেছে বলুন তো?
২০১৪ সাল থেকে কারখানার গেটে তালা! হিন্দুস্থান মোটরস কোম্পানির বিশ্বখ্যাত সেই অ্যাম্বাসাডর কারখানার ৩৯৫ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে সেই দশ বছর হয়ে গেল। অনেকেই বলেন এখন সেখানে ভূতের বাস! কিসের ভূত? রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনার? কে জানে! সে যাইহোক… মাঝে শোনা গিয়েছিল এখানেই নাকি ব্যাটারি চালিত দু’চাকার গাড়ি বানাবে হিন্দুস্থান মোটরস। তা নিয়েও আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু, সে গুড়েও বালি…. হয়নি কিচ্ছুই। কিন্তু সেই হিন্দমোটরেই এবার ফের নতুন শিল্প সম্ভাবনা। তবে এ বার গাড়ি নয়। রেলের কোচ নির্মাণ। মেট্রো রেল ও বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের কোচ তৈরির জন্য হুগলির হিন্দমোটর কারখানার প্রায় ৪০ একর জমি টিটাগড় রেল সিস্টেম লিমিটেডকে বা টিটাগড় ওয়াগনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছিল রাজ্য সরকার। গত সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তাতে সরকারি সিলমোহর পড়ল। তা নিয়েই হইচই গোটা রাজ্যজুড়ে।
একসময় আইকনিক অ্যাম্বাসাডর গাড়ি তৈরি হত এই হিন্দমোটরের কারখানায়। ৫৭ বছর ধরে তৈরি হয়েছে মরিস অক্সফোর্ড সিরিজ়ের অ্যাম্বাসেডর। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের পরেই ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলেছিল হিন্দমোটরের গেটে। তার পর থেকে সেই তালা আর খোলেনি।
২০২২ সালের জুলাই মাসে হিন্দমোটরের টিটাগড় ওয়াগন কারখানার ২৫ বছর পূর্তিতে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, হিন্দমোটরে প্রায় ৭০০ একর জমিতে নতুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব তৈরি করা হবে। তারপর হিন্দমোটর স্টেশনের ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। সম্ভাবনা, হতাশা, মিলেমিশে একাকার। তবে রাজ্য় সরকার হিন্দমোটরের জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলেও ব্যাপারটা অতটা সহজ ছিল না। কেন জানেন?
২০২২ সালে ওই জমি অধিগ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য সরকারে সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলে দাবি করে হিন্দমোটর। ২০২২ সালে রাজ্য জমি অধিগ্রহণের পর হিন্দমোটরের তরফে ল্যান্ড ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়। সেখানে রায় যায় রাজ্যের পক্ষে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় হিন্দমোটর। সেখানেও রায় দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের পক্ষে। গত মে মাসে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় হিন্দমোটর।
কী বলল সুপ্রিম কোর্ট?
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি ওঠে। রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ও রাকেশ দ্বিবেদী। হিন্দমোটরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শ্যাম দেওয়ান। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, হাইকোর্ট যে যুক্তিতে রায় দিয়েছে তা খণ্ডন করার কোনও যুক্তি তাদের কাছে নেই। অর্থা রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারত্না এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল এস্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট সেকশন ৬(৩) অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য। ওই আইনে বলা আছে, কোনও সংস্থা শিল্প গড়বে বলে জমি নেওয়ার পর যদি শিল্প না করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখে, তাহলে তা অধিগ্রহণের ক্ষমতা থাকবে রাজ্য সরকারের হাতে।
কী বলছে রাজনৈতিক মহল?
ইতিমধ্যেই বাংলায় এসে শিল্প সম্ভাবনার কথা জোরাল কণ্ঠে বলে দিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। স্পষ্ট বললেন, “শিল্পই বাংলার ভবিষ্যত”। বাংলার তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যত বাঁচাতে শিল্পের কোনও বিকল্প নেই বলেই স্পষ্ট মত নরেন্দ্র মোদীর। বাংলার মানুষকে মোদীর প্রতিশ্রুতি, তাঁর দল ক্ষমতায় এলে বাংলাকে দেশের শিল্প মানচিত্রে এক নম্বরে তুলে নিয়ে যাবেন। এরইমধ্যে হিন্দমোটরে নতুন করে শিল্পের কর্মযজ্ঞ শুরু হচ্ছে আর তাতে রাজনৈতিক মহলে হিন্দোল উঠবে না তা কী হয়!
বিজেপি শিল্পের কথা বললেও ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত তৃণমূল। হুগলি শ্রীরামপুর জেলা তৃণমূল সহ সভাপতি স্বপন দাস বলছেন এখানে রেলের কোচ ফ্যাক্টরি হবে তার সঙ্গে বহু আনুষঙ্গিক আরও ছোট ছোট ফ্যাক্টরি হবে, যেখানে মানুষ কাজ পাবে। শিল্পের জমিতে শিল্প হলে, শিল্পপতিদের কাছেও একটা ভাল বার্তা যাবে।
বিজেপি যদিও বলছে অতীত ভুললে চলবে। ভুলে গেলে হবে না কী ভয়ঙ্কর দুরাবস্থার মধ্যে দিয়ে কেটেছে কাজ হারানো শ্রমিকদের জীবন। কীভাবে রাতারাতি জীবনে নেমে এসেছিল ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
হিন্দমোটর নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেও পুরনো শ্রমিকরা বলছেন এখনও অনেকের প্রাপ্য টাকা বাকি আছে। এখন কোনওমতে সংসার চললেও সেই বকেয়া যদি পাওয়া যেত তাহলে বড্ড ভাল হয়। বছর দশেক আগে হঠাৎ যাঁরা কাজ হারিয়েছিলেন তাঁদের যেন কাজ দেওয়া হয় সেই দাবিও তুলছেন।
বামেরা যদিও বলছে তারা রাজ্য সরকারকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে হিন্দুস্তান মোটরস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তথা সিটুর হুগলি জেলা সভাপতি মলয় সরকার বলছেন, এত কিছু হলেও তাঁরা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না। কারণ নাকি অতীত! কারণ নাকি


Post A Comment:
0 comments so far,add yours