সুস্বাস্থ্যের পঞ্চায়েত গড়ার উদ্যোগ নিল ঘোড়ামারা
সারা বিশ্বের কাছে ডুবন্ত দ্বীপের পরিচিতি কাটিয়ে উন্নয়নের নিরিখে পরিচিত হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখাচ্ছে দঃ ২৪ পরগণার সাগর ব্লকের অন্তর্গত এরাজ্যের ক্ষুদ্রতম পঞ্চায়েত ঘোড়ামারা। একদিকে নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারানোর ভয়, আর অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই এই দ্বীপের মানুষজনের রোজনামচা।
নদী বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবন এলাকা হওয়ায় এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাও তীব্র। আর এই অর্থনৈতিক সমস্যার হাত ধরেই নানা ধরণের রোগ ব্যাধি চেপে বসছে মানুষের শরীরে। ক্রমবর্ধমান দূষণ আর ক্রমাগত জলবায়ুর পরিবর্তনের জেরে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দিন দিন দ্রুত হারে কমে আসছে, যার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়ছে মূলত নিম্নবিত্ত - প্রান্তিক মহিলাদের ওপর।
এই প্রেক্ষাপটেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অর্থানুকূল্যে এবং ডিপার্টমেন্ট অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিন, পঃবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত হল "অ্যাডিনোমায়োসিস রোগ - এর কারণ ও প্রতিকার" বিষয়ক এক কর্মশালা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির। ডিপার্টমেন্ট অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন পঃবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য ও জেলা স্তরের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান সহ সমস্ত সদস্য, কর্মচারীরাও। কর্মশালার উদ্বোধন করে পঞ্চায়েতের প্রধান আম্বিয়া খাতুন বিবি বলেন, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক অসুখবিসুখ থেকে আমাদের দূরে রাখতে পারে। টেকসই উন্নয়নের সুফল লাভের জন্য সুস্বাস্থ্যের পঞ্চায়েত গড়ে তোলা আবশ্যিক। তাই অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের বিশেষত মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।
শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে আয়োজিত এই কর্মশালায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিপার্টমেন্ট অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তার ডাঃ সুনিতা শর্মা। কর্মশালার শেষে ডাঃ শর্মা বলেন, অ্যাডিনোমায়োসিস রোগটি শুধুমাত্র মেয়েদের বিশেষত ৪০ ঊর্ধ্ব মেয়েদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু বাহ্যিক উপসর্গ যেমন পিরিয়ডের সময় অসহ্য পেট ব্যাথা, অনিয়মিত পিরিয়ড কিংবা প্রচুর রক্তপাত হওয়া, গর্ভধারণে সমস্যা, বারবার মিসক্যারেজ হওয়া - এগুলো হলে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এই উপসর্গগুলি অ্যাডিনোমায়োসিস রোগের লক্ষণ। তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মহিলা প্রায়সই এই সমস্যাগুলোকে অবহেলা করেন কিংবা এড়িয়ে যান। এই ধরণের সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজনের জন্য তিনি পঃবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ ও ঘোড়ামারা গ্রাম পঞ্চায়েতকে ধন্যবাদ জানান।
অ্যাডিনোমায়োসিস রোগ নিয়ে আয়োজিত কর্মশালা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের শেষে বাড়ি ফেরার পথে খাসিমারা গ্রামের দেবযানী কয়াল, শান্তনা পাত্র, বাগপাড়ার অনিতা দাস, মন্দিরতলার হাসিনা বিবিরা সমস্বরে গ্রাম পঞ্চায়েতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকের এই কর্মশালা থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। সেইসঙ্গে আত্মীয় স্বজন ও পরিবারের অন্যান্যদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করবেন বলেও তারা বলেন। সুস্বাস্থ্যের পঞ্চায়েত গঠনে ঘোড়ামারার এই উদ্যোগ আগামীতে অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করবে - একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours