আরজি কর হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, "এই সাফল্য সকলের। সমস্ত রোগী ও আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের এই বার্তা দিতে চাই যে, আস্তে আস্তে আমাদের পরিষেবা আবার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছতে চলেছে। এটা সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্ভব।"
ফিরিয়েছে একের পর এক হাসপাতাল, কাটা কব্জি জোড়া লাগিয়ে তাক লাগাল আরজি কর, নেপথ্যে অনিকেতরা
কী বললেন অনিকেত মাহাতো?
প্রায় সাড়ে ৬ মাস আগে আরজি কর মেডিক্যালে তিলোত্তমার নৃশংস পরিণতিকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। আরজি করে স্বাস্থ্য পরিষেবাও প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। স্বাস্থ্য পরিষেবায় ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় এবার বেনজির সাফল্য আরজি কর হাসপাতালের। কব্জি কেটে পড়েছিল এক রোগীর। একের পর এক হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছিল। কব্জি কাটা পড়ার পর পার হয়ে গিয়েছিল গোল্ডেন আওয়ার। কাটা কব্জি বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংরক্ষণও করা ছিল না। এরপরও হাল না ছাড়ার মন্ত্রে কাটা কব্জি জোড়া লাগাল আরজি করের প্লাস্টিক সার্জারি, অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগ। সাত ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা কার্তিক জানার কাটা কব্জি জোড়া লাগালেন চিকিৎসকরা।
গত মঙ্গলবার হাওড়ার ডোমজুড়ে কারখানায় কাজ করার সময় অসাবধানতাবশত যন্ত্রের মধ্যে হাত ঢুকে গিয়েছিল বছর আটান্নর কার্তিক জানার। তাঁর বাঁ হাতের কব্জি কাটা পড়ে। ওইদিন সকাল ১০টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। এরপর এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ আরজি করে প্রৌঢ়কে নিয়ে পৌঁছন তাঁর পরিজনরা। এরপর ভর্তি প্রক্রিয়া, অস্ত্রোপচারের জন্য রক্তপরীক্ষা, ওটি টেবিল রেডি, রক্ত দিয়ে রোগীকে স্থিতিশীল করে সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হয় অস্ত্রোপচার। গোল্ডেন আওয়ার তার অনেক আগেই পার হয়ে গিয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি বিভাগীয় প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সিনিয়র রেসিডেন্ট-সহ জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, একবার চেষ্টা করেই দেখা যাক না। আর এই চেষ্টার জন্যই কাটা হাত ফিরে পেলেন বছর আটান্নর কার্তিক জানা।
কাটা অঙ্গ প্রিজার্ভেশনের নিয়ম-
এই নিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট অর্ণব নায়েক বলেন, “আমাদের কাছে যখন রোগী আসেন, তখন আট ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে গোল্ডেন আওয়ার পেরিয়ে গিয়েছে। কাটা অঙ্গও ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয়নি। কিন্তু, আমরা সিদ্ধান্ত নিই, ১০০ শতাংশ চেষ্টা করব। রোগীর পরিজনদের বোঝাই যে, পরিস্থিতি জটিল। কিন্তু, আমরা চেষ্টা করব। অস্ত্রোপচার করতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লেগেছে।” এই অস্ত্রোপচারে যুক্ত ছিলেন সিনিয়র রেসিডেন্ট দীপ্রসত্ত্ব মহাপাত্র। তিনিও জানান, তাঁরা সকলেই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
এই অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অ্যানাস্থেসিস্ট অনিকেত মাহাতো। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনের অন্যতম মুখ তিনি। জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত বলেন, “গত ৯ অগস্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার অন্যতম দাবি ছিল, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে আরও ভাল করা। সুশৃঙ্খল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দাবি ছিল। এই যে ৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল, এটা পরিকাঠামোর ত্রুটিকে তুলে ধরছে। এই প্রতিকূলতার মধ্যেই কাজ করতে হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও ভালভাবে পৌঁছে দিতে জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তাররা বদ্ধপরিকর।”
আরজি কর হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, “এই সাফল্য সকলের। সমস্ত রোগী ও আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের এই বার্তা দিতে চাই যে, আস্তে আস্তে আমাদের পরিষেবা আবার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছতে চলেছে। এটা সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সম্ভব। রোগী এখন ভাল আছেন। আমরা দু-একদিনের মধ্যে ছেড়ে দেব। আমাদের প্রাথমিক চেষ্টা ছিল, যাতে রোগীর হাত বাদ না যায়।”
তাঁর হাত যে জোড়া লাগতে পারে, ভাবতে পারছেন না কার্তিক জানা। সরকারি এই হাসপাতালের পরিষেবায় তিনি যারপরনাই খুশি। তাঁর হাত জোড়া লাগার ঘটনাকে মিরাকেল জানিয়ে তিনি বলেন, “চিকিৎসকরা যা চেষ্টা করেছেন, কোনও ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়।” কার্তিক জানার বক্তব্যের স্পষ্ট, গত অগস্টের ক্ষত ভুলে স্বাস্থ্য পরিষেবায় হারানো সম্মান ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় সফলতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন আরজি করের চিকিৎসকরা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours