রিমেক নয়, একটা মৌলিক গল্প নিয়ে ছবি তৈরির জন্য লড়াই করেছেন পরিচালক পথিকৃত্ বসু। কঠিন পথ পেরিয়েছেন। আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছেন! আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মিঠুন চক্রবর্তীর দুর্গাপুজোর ছবি ‘শাস্ত্রী’-র পরিচালক মন খুললেন কাছে।
বাংলা ছবি তৈরি করবেন, এই ভাবনাটা এল কীভাবে? প্রথম ছবিটাই রিমেক কেন?
পথিকৃত্: যখন বড় হচ্ছি, তখন থেকে ছবি তৈরির স্বপ্ন দেখতাম। রবি কিনাগীর ছবিতে সহযোগী হিসাবে কাজ করতে শুরু করি। সেগুলো দক্ষিণী ছবির রিমেক ছিল। তাই ‘এসভিএফ’-এর তরফে আমার কাছেও রিমেক ছবি তৈরির প্রস্তাব আসে। তখন একটা ছবি পরিচালনা করতে হবে, সেই খিদেটা প্রধান ছিল। আমার প্রথম রিমেক ছবি ‘হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা’ সফল হয়েছে বলেই শুনেছি। তাই হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে চারটে ছবি করতে পেরেছিলাম পরপর।
তারপর কী হল? হঠাত্ অনুভব করলেন যে রিমেক ছবি তৈরি করতে চান না?
আমার জন্য পরিচালনা করার সুযোগ পাওয়ার শর্টকাট ছিল রিমেক ছবি তৈরি করা। সেই পথ নিয়েছি একটা সময়ে। কিন্তু নিজের যে গল্প বলতে ইচ্ছা করে, সেই ছবি তৈরির জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করতে হবে, বুঝতে অসুবিধা হয়নি। যখন সেই সময়টা শুরু হল, জীবনটা খুব কঠিন লাগল। ১৮-১৯ বার বিভিন্ন প্রযোজকের দরজা থেকে ফিরেছি। দু’ বছর রোজ সকালে উঠে মনে হত, সামনে কিছু নেই। সমস্ত রাস্তা বন্ধ। সুইসাইড করতে হবে এমনও মনে হয়েছে। কিন্তু আবার নিজেকে মোটিভেট করেছি, নতুন করে শুরু করার জন্য। যখন যে ট্রেন্ড চলছে, তখন সেই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে সফল হওয়ার রাস্তা কিন্তু আমি খুঁজি না। নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘরে ছবি তৈরি করেছি, কিন্তু ফ্যামিলি ড্রামা তৈরি না করে ‘দাবাড়ু’র মতো একটা চিত্রনাট্য বাছলাম। আর একটা কথা বলি, যখন আমি একটা অরিজিনাল ছবি করার জন্য দরজার-দরজায় ঘুরেছি, তখন দেবের প্রযোজনা সংস্থাই প্রথম সুযোগটা দেয়। ‘কাছের মানুষ’ ছবিটা আত্মহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলে।
নতুন প্রজন্মের পরিচালকদের মধ্যে অভিজিত্ সেন ছাড়া অন্য কেউ নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায় বা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকদের বক্স অফিস রেকর্ড ভাঙতে পারছেন না কেন?
আপনাকে এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজতে হবে যে, এই পরিচালকদের কে-কে গত দু’ বছরে একটা ১০ কোটি টাকা অঙ্কের ছবি তৈরি করেছেন…এঁদের ছবিও দু’ কোটি-তিন কোটির অঙ্কে আটকে যাচ্ছে বেশিরভাগ সময়। ‘প্রজাপতি’ হঠাত্ একটা হয়। রবি কিনাগীর সঙ্গে যখন আমি কাজ করেছি, উনি ১৫ কোটির উপরে বাংলা ছবির কালেকশন দেখেছেন। এখন যদি তাবড় পরিচালকদের ছবির অঙ্কই ২ কোটি হয় বা ৩০ লাখেরও কম হয়, তা হলে বলতে হবে, দর্শক বাংলা ছবি নিয়েই আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাই নতুন প্রজন্মের পরিচালকরা ভালো গল্প বললেও, তাঁরা দর্শক টানতে পারছেন না।
নায়ক-নায়িকার অভাব অনুভব করেন কি টলিউডে?
একজন নায়ক বা নায়িকাকে লঞ্চ করার ক্ষমতা শ্রীকান্ত মোহতা রাখেন। বাকি প্রযোজনা সংস্থাগুলো সেই ব্যাপারে ততটা দক্ষ বলে মনে হয় না। নতুন নায়ক-নায়িকাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি না হলে, সত্যিই ছবি তৈরি করা মুশকিল।
মিঠুন চক্রবর্তী আপনার মধ্যে কী এমন দেখলেন যে পরপর দু’টো ছবি করলেন?
এই উত্তরটা মিঠুনদা দিতে পারবেন। উনি বলেন, ছবি তৈরির টেকনিকের নিরিখে আমি ভালো। মিঠুনদার সঙ্গে এখন অনেক দিনই কথা হয়। আমরা কাজের ব্যাপারে আলোচনা করি। মিঠুনদার শরীর ভালো নেই। তাই নিয়েও অনেক কথা হয়।
দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে শুটিং করলেন। উনি ভালো অভিনেত্রী সেটা সকলেই জানেন। আর কী মনে থাকবে এই কাজটা করে?
দেবশ্রীদি ভীষণ অ্যাক্টিভ থাকেন সেটে। সব সময় তৈরি শট দেওয়ার জন্য। মিঠুন চক্রবর্তীর উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে শুটিং করতে হবে, তাই চুমকিদি বিশেষ প্রস্তুতি নিতেন। এটা ব্যাপারটা আমি নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যেও দেখিনি।
‘উইন্ডোজ’-এর সঙ্গে পুজোর ছবির লড়াইটাকে কীভাবে দেখছেন?
ব্যক্তিগত পর্যায়ে ওঁদের সঙ্গে একেবারেই কোনও লড়াই নেই। কোনও বিপদে পড়লে শিবুদাকে (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) ফোন করি সবচেয়ে আগে।
এখন মনে হয় কি পরিচালক হিসাবে কাজ না করলে ভালো হত?
সব সময়ে মনে হয়! সামনের রাস্তাটা যে কঠিন, সেটা বুঝতে পারছি। তবে এমন একটা পথে হাঁটছি, হঠাত্ করে সেই পথ ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবি না। মনে হয়, কখনও একটা ভালো সময় আসবে। কনটেন্ট পছন্দ হলে দর্শক ছবি দেখবেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours