এসডিও, বিডিও, পুলিশ সুপার, জেলাশাসক সবাইকে লিখিতভাবে অভিযোগের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু সুরাহা কিছুই হয়নি। দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষজন এখন কার্যত দিশেহারা। তবুও প্রশাসনের আশ্বাসেই ভরসা করতে হচ্ছে তাঁদের।
 

খণ্ডঘোষে অবাক কাণ্ড! অ্যাকাউন্ট নেই অথচ বাড়ি বাড়ি আসছে নতুন ATM কার্ড
গ্রামবাসীদের হাতে এসেছে এটিএম কার্ড

বর্ধমান: ঘরে ঘরে এসে পৌঁছেছে নতুন এটিএম কার্ড। ব্যাঙ্কের নাম লেখা খাম খুলে সেই কার্ড দেখে তাজ্জব গ্রামবাসীরা। তাঁরা অ্যাকাউন্টই খোলেননি, এটিএম কার্ডের জন্য আবেদন করা তো দূরের কথা! তাহলে এইসব খাম এল কোথা থেকে? একজন বা দুজন নয়, এমন ঘটনা ঘটেছে শতাধিক মানুষের সঙ্গে। তাঁরা মূলত বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানা এলাকার বাসিন্দা। কেউ থাকেন মুসলিম পাড়ায়, কেউ বাগদী পাড়ায়। এখানেই শেষ নয়। ওই সব কার্ড পেয়ে ব্যাঙ্কে ছুটেছিলেন ওই গ্রামবাসীরা। আর সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের নামে থাকা অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়েছে। সব অ্যাকাউন্টগুলো ৩ থেকে ৫ বছরের পুরনো বলেও জানা গিয়েছে। সব দেখেশুনে রাতের ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় একাধিক অভিযোগও দায়ের করেছেন তাঁরা।

এক গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ওই গ্রামের প্রায় ১২০-১৩০ জনের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা ব্যাঙ্কে কোনও অ্যাকাউন্ট খোলেননি, অথচ তাঁদের নামে কুরিয়ারে এটিএম কার্ড এসে পৌঁছেছে বাড়িতে। অভিযোগ, যাঁদের নামে কার্ড তাঁদের সবার বাড়িতে ওই খাম দেননি কুরিয়ার কর্মী। গ্রামেরই এক বাসিন্দার বাড়িতে রাখা ছিল বেশির ভাগ কার্ড। সেই বাড়ির মালিক পুরো অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। গ্রামবাসীরা সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দ্বারস্থ হলে ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে কোনও সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ।

গ্রামবাসীদের দাবি, কেউ ১০০ দিনের কাজ করছেন, কেউ গরুর খড় কাটছেন, কেউ রান্না করছেন, কেউ মাঠে কাজ করছেন এই রকম সব ছবি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা হয়েছে। এসডিও, বিডিও, পুলিশ সুপার, জেলাশাসক সবাইকে লিখিতভাবে অভিযোগের কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু সুরাহা কিছুই হয়নি। দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষজন এখন কার্যত দিশেহারা। তবুও প্রশাসনের আশ্বাসেই ভরসা করতে হচ্ছে তাঁদের।


বিষয়টি সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা জড়িত আছেন বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের দাবি একদল অসাধু ব্যবসায়ী তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এভাবে কালো টাকা সাদা করেছে।

সিপিএমের দাবি, অসাধু উপায়ে ওই নিরীহ মানুষজনের কাছ থেকে নথি নিয়ে এই ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে অসৎ উদ্দেশে। এটা একটা সংগঠিত চুরি বলে দাবি করেছেন এলাকার সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ। চার কোটি টাকার বেশি এইভাবে লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ। বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের দাবি, পূর্ব বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলে প্রচুর রাইসমিল রয়েছে এবং তার মাধ্যমে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল নেতারা শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করেছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে ইডির কাছে অভিযোগ জানানো হবে। যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। খন্ডঘোষের ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপার্থিব ইসলাম জানান, এই ধরনের কোনও ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই। যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে তদন্তের মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে আসবে।

বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। তবে ঘটনার কথা শুনে অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শুভজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত জালিয়াতির নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। এরকম ঘটনা ঘটে থাকলে তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours