হিংসাধ্বস্ত মণিপুরে রবিবার (২৮ মে), আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকা জুড়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে পুলিশের কমান্ডোদের। এই অভিযানে অন্তত ৩০ জন 'সন্ত্রাসবাদী'কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে, জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।

Manipur Violence: হিংসাবিধ্বস্ত মণিপুরে সেনার সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত ৩০ 'কুকি জঙ্গি', জানালেন মুখ্যমন্ত্রী৩ মে থেকেই মণিপুরজুড়ে চলছে হিংসা (ফাইল ছবি)

ইম্ফল: হিংসাধ্বস্ত মণিপুরে বড় সাফল্য সেনার। রবিবার (২৮ মে), আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাজ্যের বেশ কয়েকটি এলাকা জুড়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে পুলিশের কমান্ডোদের। এই অভিযানে অন্তত ৩০ জন ‘সন্ত্রাসবাদী’কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে, জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। তিনি বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদীরা অসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে এম-১৬ এবং একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল এবং স্নাইপার বন্দুক ব্যবহার করছে। বেশ কিছু গ্রামে গিয়ে তারা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। আমি ওদের কুকি যোদ্ধা বলতে চাই না। ওরা আসলে কুকি সন্ত্রাসবাদী। ওরা নিরস্ত্র অসামরিক ব্যক্তিদের উপর গুলি চালিয়েছে। বন্দুকযুদ্ধ চলছে সশস্ত্র জঙ্গি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে, কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে নয়। তাই আমি সাধারণ মানুষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”


সূত্রের খবর, এদিন দুপুর ২টো নাগাদ কুকি যোদ্ধারা ইম্ফল উপত্যকা এবং তার আশেপাশের পাঁচটি এলাকায় একযোগে আক্রমণ চালিয়েছে। সেকমাই, সুগনু, কুম্বি, ফায়েং এবং সেরু-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সেনার সঙ্গে কুকি বিদ্রোহীদের বন্দুকযুদ্ধ চলছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সেকমাই-এ ইতিমধ্যেই গুলির লড়াই বন্ধ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে, রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘর্ষ ও মৃত্যুর খবর আসছে। এক সর্বভারতীয় পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইম্ফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের বা রিমসের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ফায়েং এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ ১০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থআয় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষেনপুরের চন্দনপোকপিতে গুলিবিদ্ধ মৃত্যু হয়েছে খুমানথেম কেনেডি নামে ২৭ বছরের এক কৃষকের। তাঁর মরদেহও রিমসে নিয়ে আসা হয়েছে। ওই এলাকায়া আরও হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পশ্চিমে ইম্ফল বিজেপি বিধায়ক খোয়াইরাকপাম রঘুমণি সিংয়ের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং তাঁর দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েথে।

এই অবস্থায় সোমবারই মণিপুর সফরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মেইতেই এবং কুকি – যুযুধান দুই পক্ষকেই শান্ত থাকার এবং রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন। সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পান্ডেও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবারই দুই দিনের সফরে মণিপুরে গিয়েছেন। সেনাবাহিনী বলেছে যে বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ঠেকাতে একটি চিরুনি অভিযান চলছে, যা মণিপুরকে ফুটিয়ে তুলেছে। রাজ্যে সেনাপ্রধান আসার পরই চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনের আগের দিনই বিদ্রোহী কুকি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা শুরু হল।


রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরেই তফসিলি উপজাতিভুক্ত হওয়ার দাবি জানাচ্ছে। আসলে রাজ্যের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মেইতেই হলেও, উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত না হওয়ায় রাজ্যের মাত্র ১০ শতাংশ জমির উপর অধিকার আছে তাদের। বাকি পাহাড় ও জঙ্গলের সংরক্ষিত জমিতে বাড়ি বসবাস করার অধিকার রয়েছে একতমাত্র আদিবাসী কুকি সম্প্রদায়ের। মেইতেইদের উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার দাবির প্রতিবাদে, ৩ মে ইম্ফলে এক বিশাল মিছিল বের করেছিল কুকিরা। হাজার হাজার মানুষের সেই মিছিলকে কেন্দ্র করেই মেইতেই এবং কুকিদের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ বেধেছিল। যার জেরে রাজ্যের ৭০ জনেরও মানুষের প্রাণ গিয়েছে, ভিটে ছাড়া হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তারপর থেকে ২৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যে ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours