রবিবার দুপুরে নিজের ঘরেই ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ সাড়া শব্দ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখেন, গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন রিয়াঙ্কা।


মামা অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বিক্রির পান্ডা (Recruitment Scam) বলে অভিযোগ। বর্তমানে তিনি শ্রীঘরে। আদালতের নির্দেশে আবার চাকরি গিয়েছে মায়েরও। চাকরি গিয়েছে মাসিরও। তাঁরাও যে বেনিয়মেই চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ মনে করছে, এই আঘাত সইতে পারেননি কলেজ ছাত্রী। ঘর থেকে উদ্ধার হল কলেজ ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ। চাকরি বাতিলের দিনই ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীর মেয়ের মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যেই কানাঘুষো চলছে, হতে পারে আত্মগ্লানিতে ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রিয়াঙ্কা ঘোষ (২০)। মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বড়ঞার কোগ্রাম এলাকার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রিয়াঙ্কার মামার নাম কৌশিক ঘোষ। তিনি বর্তমানে জেলে। চাকরি বিক্রির নাম করে একাধিক জনের কাছ থেকে মোটা টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। চাকরি বিক্রির পান্ডা হিসাবেই তিনি বর্তমানে এলাকায় পরিচিত। রিয়াঙ্কার মা বীরভূমে সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন গার্লস স্কুল কর্মরত ছিলেন। গ্রুপ সি ভুয়ো নিয়োগে চাকরি বাতিল হয়েছে তাঁরও। চাকরি গিয়েছে রিয়াঙ্কার মাসির ডালিয়ারও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপর থেকেই মারাত্মকভাবে মনমরা হয়ে পড়েছিলেন রিয়াঙ্কা।

রবিবার দুপুরে নিজের ঘরেই ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ সাড়া শব্দ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখেন, গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন রিয়াঙ্কা। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। আত্মহত্যা বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। মামা জেলে, মায়ের চাকরি গিয়েছে, তাই আত্মগ্লানিতেই কি আত্মহত্যা? কানাঘুষো চলছে এলাকাতেও। পরিবারের তরফ থেকে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও কথাই স্পষ্ট করে বলা হয়নি। বাবা ও দাদার দাবি, অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে। সেটা স্পষ্ট নয়। দাদার বক্তব্য, “ঘরে সাধারণ অবস্থাতেই ছিল। দুপুরে খাওয়ার সময়ে ডাকতে গিয়ে দেখি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। কোনও টেনশন থাকলেও আমাদের কিছু বলেনি কখনও।” ওর বাবার বক্তব্য, “কোনও প্রেশার হলে, সেটা তো আমাদের হবে। ওর তো চাপ ছিল না।”

বিষয়টি নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “খুবই ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। ইমপ্যাক্ট খুবই খারাপ। যুব সমাজের মধ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।”

প্রধান শিক্ষক সংগঠনের নেতা চন্দন মাইতি বলেন, “এই দুর্নীতির শিকড় যে কত গভীরে, তা দিন দিন প্রকাশ্যে আসছে। মায়ের এ কাজ করা উচিত হয়নি। আসলে আমরা তো আমাদের ছেলেমেয়েদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। মামা জেলে, মা-মাসির চাকরি গিয়েছে, দুর্নীতির জন্য পরিবারে এফেক্টেড হচ্ছে। মানুষকে বিচ্ছিন্ন করছে।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours