পরিবেশবান্ধব পরিবহণ হিসেবে 'শ্লথ গতির যান' এখন থেকে শহরের মাত্র চারটি রুটেই চলবে। শহরের বেশিরভাগ ট্রাম লাইনগুলো ঢেকে দেওয়া হবে পিচ দিয়ে।

কলকাতার এক অন্যতম ঐতিহ্য ট্রাম। শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা যত উন্নত হয়েছে, ধীরে-ধীরে কমেছে ট্রামের সংখ্যা। আর কয়েকদিন পর থেকে শহরের মাত্র চারটে রুটে চলবে ট্রাম। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাম পরিষেবা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। বর্তমানে ধর্মতলা-গড়িয়াহাট এবং বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ রুটে ট্রাম চলছে। আগামী দিনে ধর্মতলা-খিদিরপুর এবং ধর্মতলা-শ্যামবাজার রুটে ট্রাম চলবে। এর বাইরে শহরের আর কোথাও ট্রামের দেখা মিলবে না।

কলকাতা হল এশিয়ার এমন শহর যেখানে প্রথম ট্রাম পরিষেবা শুরু হয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথম ট্রামের চাকা গড়িয়েছিল। ঘোড়ায় টানা ট্রাম। বেশিদিন চলেনি। কিন্তু ১৯০২ সালে আবার ফিরে আসে ট্রাম। নতুন রূপে। বিদ্যুৎচালিত ট্রাম। সেই বছর ২৭ মার্চ ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর রুটে প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম পরিষেবা চালু হয়। এটা কলকাতার হেরিটেজ ট্রাম রুট। ধর্মতলা থেকে গড়ের মাঠের পাশ দিয়ে এই ট্রাম যায় খিদিরপুর। এই ট্রাম রুট যেমন কলকাতাবাসীর কাছে নস্ট্যালজিক, তেমনই আকর্ষণীয়। তাই এই রুট থাকছে। বরং বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ কাড়তে ধর্মতলা থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত ট্রাম চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভিক্টোরিয়ার সামনে ট্রামের জন্য ট্যুরিস্ট প্ল্যাটফর্মও তৈরি হচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব পরিবহণ হিসেবে ‘শ্লথ গতির যান’ এখন থেকে শহরের মাত্র চারটি রুটেই চলবে। এক সময় ট্রামের ঘন্টিতেই ঘুম ভাঙত শহরবাসীর। সেখানে ধীরে-ধীরে লুপ্ত পেয়েছে অনেক ট্রাম। তবু ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে কোনও ট্রাম হয়ে উঠেছে ক্যাফে, আবার কোনও ট্রাম ডিপো মিউজিয়াম। এখন ট্রামে যাত্রী সংখ্যাও সীমিত। যে হারে মেট্রোর উন্নয়ন হয়ে চলেছে, তাতে আগামী দিনে এই চারটি রুটেও ট্রাম চলবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

পরিবহণ দফতর ও কলকাতা পুলিশ পথ দুর্ঘটনা এড়াতেই ট্রাম পরিষেবা কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ট্রাম লাইনের কারণে পথদুর্ঘটনা বাড়ছে। মেট্রো রেলের কাজের জন্য অনেকদিন আগেই বিবাদী বাগ-কেন্দ্রিক সব ট্রাম রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিয়ালদহ ও বেলগাছিয়া ফ্লাইওভারের কথা ভেবে সেখানেও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রাম পরিষেবা। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কাজ শেষ হলেই আবার ট্রাম পরিষেবা ফিরে আসবে। কিন্তু ট্রাম ফেরেনি। এবারেও একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কথায়, এ শহর ট্রামের চলাচলের জন্য উপযুক্ত নয়। শহরে যানজট তৈরি করছে ট্রাম। বাড়ছে দুর্ঘটনা। এসব এড়াতেই তিলোত্তমায় ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পরিবহণ দফতরের।



Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours