এদিন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। সেখানে তিনি লিখেছেন, হকার সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়েও সেই অর্থে কোনও কাজ হচ্ছে না।


 কলকাতা শহরে হকারের সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকার বিষয়ে এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। হাতিবাগান চত্বরে হকার ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন,”এগুলি পুলিশের, স্থানীয় থানার মদত না থাকলে তারা বসতে পারে না। আমার কাছে প্রমাণ নেই, কিছু কিছু হকার ইউনিয়ন এবং পুলিশ একটি মান্থলি সিস্টেম করে নেয়। এটা শুনেছি আমি। আমার কাছে প্রমাণ নেই। এটা কিন্তু খুব খারাপ হচ্ছে। কারণ যদি একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন আমরা সবাই বিপদে পড়ব।” সঙ্গে ফিরহাদ হাকিম আরও বলেন, “নীচু তলার পুলিশ অফিসাররা এটি করছেন। আমি বিশ্বাস করি না, উপর তলার কোনও পুলিশ আধিকারিক এর সঙ্গে আছেন।” এদিন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। সেখানে তিনি লিখেছেন, হকার সমস্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়েও সেই অর্থে কোনও কাজ হচ্ছে না।



বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা যে মেয়রের কাছে হকারদের এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে গিয়েছে, সেই কথাও এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তুলে ধরেন ফিরহাদ হাকিম। বললেন, “শুধু হক মার্কেট কেন প্রত্যেক মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এসে আমাকে ডেপুটেশন দিচ্ছে। বলছে, আমরা ট্রেড লাইসেন্সের জন্য টাকা দিচ্ছি, ট্যাক্স দিচ্ছি, আমাদের দোকানের সামনেটা যদি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমরা ব্যবসা করব কী করে? আমিও হকারের পক্ষে। আমরাও হকার আন্দোলন করেছি। কিন্তু একটা সিস্টেম থাকে। এক-তৃতীয়াংশ জায়গায় হকার বসবে দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা খালি থাকবে। আমার হকার ইউনিয়ন করা মানে, আমি যেখানে ইচ্ছে হকার বসিয়ে দেব… এটা হতে পারে না। পুলিশকে কড়া হতে হবে। এটার জন্যই বিনিত গোয়েলকে আমি চিঠি দিয়েছি। আমার মনে হয় ওনার নজরে যদি আসে, উনি যদি নির্দেশ দেন তাহলে পুলিশ কাজ করবে।” কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে এই সমস্যা নিয়ে চিঠি কেন পাঠাতে হল? মেয়র বলছেন, “আমার কাছে ঢাল নেই, তরোয়াল নেই। আমি নিধিরাম সর্দার। যার কাছে ঢাল তরোয়াল রয়েছে, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছি।”

প্রসঙ্গত, এর আগেও হকার সমস্যা নিয়ে পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাহলে কি তখন কাজ হয়নি ঠিকভাবে? মেয়র বলছেন, “এক বছর আগে চিঠি দিয়েছিলাম, তখন কিছু জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল। আবার কিছু জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত হয়েছে। আবার আমরা চিঠি দিচ্ছি। কিছু জায়গায় দেবাশিস কুমারের নেতৃত্বে আমাদের সার্ভে শুরু হয়েছে। আমরা পুলিশকে যেসব জায়গা দেখিয়ে দেব, সেই জায়গা থেকে তাহলে পুলিশ তুলে দেবে।” যদি এই সমস্যা সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দুয়ারে যেতে হয়, তার জন্যও প্রস্তুত তিনি। বলছেন, “যদি মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত যেতে হয় যাব। ‌ এখন যেহেতু আমি মেয়র, উনি পুলিশ কমিশনার… আমাদের মধ্যে ঠিক করার চেষ্টা করব। যদি না করতে পারি, তখন আমাদের উপরে যিনি রয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী… স্বাভাবিকভাবে তাঁর কাছে যাব।”

এরপর খানিক হালকা মেজাজে মেয়র বললেন, “রাজনৈতিক নেতারা খুব সফট টার্গেট। যে কেউ বদনাম দিতে পারে। কোর্টে গিয়ে বলে আমরা প্রভাবশালী। অথচ এমন প্রভাবশালী যে পুলিশকে বললে কথা শুনছে না। এত বড় প্রভাবশালী আমরা।” উল্লেখ্য, রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এমন অবস্থায় হকার নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফিরহাদের এই মন্তব্য। যদিও ফিরহাদ বলছেন, “এখানে কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় নেই। যে রুলবুক নিয়ে পুলিশকে চলতে হয়, তার মধ্যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু লেখা থাকে না। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু পুলিশমন্ত্রী, তিনি মানুষের স্বার্থে কাজ করেন। সেখানে কোনও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তিনি নেন না।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours