রেল দুর্ঘটনারও শিকার হয়েছেন তিনি। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ের হাঁটুতে স্ক্রু বসাতে হয়েছে। যদিও তারপরেও থামেনি লড়াই।

পুরুলিয়ার (Purulia) বাসিন্দা বৃহস্পতি মাহাতো জন্মান্ধ। ছোটবেলা থেকেই তাঁর জগৎটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। জন্ম থেকে দেখেননি পৃথিবীর আলো। পরিবারেও রয়েছে অর্থ কষ্ট। অর্থ কষ্টের সেই আঁধার দূর করার জন্য ছোট থেকেই করেছে হার না মানা লড়াই। স্বপ্ন দেখেছিলেন সরকারি চাকরির (Jobs)। সেই মতো নিজেকে তৈরিও করেছিলেন। রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি (Group-D) চাকরির পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। প্রথম পরীক্ষাতে পাশ করলেও চাকরিটা পাননি। তাঁর অভিযোগ চাকরি চুরি হয়েছে। এরইমাঝে রেল দুর্ঘটনারও শিকার হয়েছেন তিনি। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ের হাঁটুতে স্ক্রু বসাতে হয়েছে। তাই নিয়েই চলছে জীবন সংগ্রাম। হার না মানা জেদকে সঙ্গী করেই চাকরির স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি বৃহস্পতি। 

পুরুলিয়া থেকে কলকাতায় এসে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন হয়েছেন তিনি। অন্য সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চাকরির দাবিতে তুলেছেন স্লোগান। লড়াইয়ের প্রতিস্পর্ধা বুকে নিয়েই বৃহস্পতি বলছেন ‘শেষ দেখে ছাড়ব’। আন্দোলনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাকিরা তো তাও চপ-মুড়ি ভাজতে পারবে। আমি তো কিছুই পারব না। কি হবে আমার! এখন অনুষ্ঠানে গান করে দুপয়সা রোজগার করি। কদিন পর তাও পারব না। তবুও আমি চাকরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। শেষ দেখে ছাড়ব। আমার মনে হয় আমার প্রতিবন্ধী কোটার সিটও বিক্রি করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটু দেখার অনুরোধ করছি।”

বৃহস্পতির মতোই অসয়হতার সঙ্গে দিন কাটাচ্ছেন নদিয়ার বাসিন্দা সন্দীপ মণ্ডল। চাকরির দাবিতে তিনিও প্রতিবন্ধকতা সঙ্গী করেই এসেছেন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে। “লাঠি ছাড়া এক পাও চলতে পারি না। চপ, মুড়িও বিক্রি করতে পারি না। চাকরিটা না পেলে শহরের মানুষের জুতো পালিশ করা ছাড়া উপায় নেই।” বক্তব্য সন্দীপের। প্রসঙ্গত, গত ৯১ দিন ধরে মাতঙ্গিনী মূর্তির পাদদেশে চলছে গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন। ২০১৭-র পরীক্ষার ভুয়ো নিয়োগের প্রতিবাদে ও যোগ্যদের নিয়োগের দাবিতে টানা আন্দোলনে সামিল প্রতিবাদীরা। বৃহস্পতি-সন্দীপের মতো মানুষেরাও এবার সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আন্দোলনে যোগ দেওয়া তা নতুন করে অক্সিজেন জোগাচ্ছে বাকি আন্দোলকারীদেরও। 
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours