হুগলি জেলায় চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গি। বিশেষ করে পূজোর আগে শ্রীরামপুর, উত্তরপাড়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ‍্যা বাড়তে থাকায় চিন্তায় প্রশাসন। এই মুহূর্তে হুগলি জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ‍্যা ৬৬৪ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৩৮ জন। এই অবস্হায় উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর পুরসভার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ওর্য়াডে মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। তবে উদ্বেগের বিষয় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ‍্যা বেড়ে চলেছে।

জেলা মুখ‍্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভূইয়া জানান জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গি টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। যাতে সঠিক সময় চিকিৎসা করা যায়। জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী বেশি উত্তরপাড়ায়, কাইনাইপুর এলাকায় আক্রান্ত থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি নেই কোনও রোগী। শহরতলিতে রোগী ভর্তি ৮০ জন ও গ্রামীণ এলাকায় ৫৮ জন। তবে গুরতর অবস্থায় রয়েছেন ২ জন। হুগলি জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক জানান আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মানুষ একটু সতর্ক ও সাবধান হলেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

ডেঙ্গিতে হাওড়া শহরাঞ্চলে চলতি বছরে ইতিমধ্যেই চার জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে হাওড়া কর্পোরেশন এলাকায় দুজনের মৃত্যু হয়। তারপরে চলতি সপ্তাহেই বালি পৌরসভা এলাকায় একজন ইঞ্জিনিয়ার ও এক শিশুর মৃত্যু হয়। আগের থেকেই ডেঙ্গির বিষয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। বালি বা হাওড়ায় ক্রমে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। তবে ডেঙ্গির প্রকোপ আটকাতে হাওড়া কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

যেমন- মশার তেল স্প্রে করার জন্য ২০০ জন স্প্রে ম্যান নিয়োগ করা হয়। বিভিন্ন নর্দমায় লক্ষ লক্ষ গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়, যাতে সেই মাছ লার্ভা খেয়ে নেয়। এলাকায় এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানো, বা সাফাইয়ের কাজের ওপর জোর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সচেতনতা মূলক প্রচারের কাজও করা হয়। সেই সঙ্গে কর্পোরেশনের প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারম্যান, কমিশনার সহ প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় রুটিন ভিজিটও করছেন। ইতিমধ্যেই কখনো উত্তর হাওড়া, কখনো বেলগাছিয়া এলাকা, শিয়ালডাঙ্গা এলাকায় প্রশাসনের কর্তারা সেই রুটিন ভিজিট করেছেন সকালের দিকে। 

এদিকে চলতি সপ্তাহে বেলুড়ে ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর পরেরদিন অর্থাৎ বুধবার বালি রবীন্দ্র ভবনে জরুরি ভিত্তিক মিটিং করেন পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মিটিংয়ে ছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। আলোচনা শেষে ফিরহাদ বলেন যেভাবে ডেঙ্গি বাড়ছে তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। তিনি বলেন, তিনি বালিতে মিটিংয়ে আসার আগের দিন বালিতে একজন মারা গেছেন। এলাকার মানুষের অভিযোগ তিনি জানতে পেরে ডেঙ্গি নিয়ে সামগ্রিক হালহকিকত নিয়েই তাঁরা সেই বৈঠক করেন এবং যে সমস্ত জায়গায় খামতি আছে সে বিষয়ে পরামর্শ দেন। তবে প্রশাসন প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে বলে তিনি জানান।

বুধবার তিনি মিটিং সেরে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বেলুড়েরই একটি পরিবারের ছয় মাসের এক শিশুর কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়। এক সপ্তাহে দুই মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত গোটা এলাকার মানুষ। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে গত জানুয়ারি মাস থেকে এখনো পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১৫৩ জন। যার মধ্যে হাওড়া কর্পোরেশন এলাকায় সেই সংখ্যা ৩৮১। এদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। তবে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাওড়া শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যাটা ৫০ এর আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করছে। গতকালের শিশুটির মৃত্যু ধরলে এখনো পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে গোটা হাওড়া জেলায়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours