নয় নয় করে সাত মাস পেরিয়ে গিয়েছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের (Russia Ukraine War)। তাতে পশ্চিমি দেশগুলি রাশিয়াকে কোণঠাসা করলেও, বরাবর শান্তিপূর্ণ ভাবে যুদ্ধ সমাপ্তির পক্ষে সওয়াল করে এসেছে ভারত। কারও হয়ে সওয়াল না করে, নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে দিল্লি। এ যাবৎ সেই নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়লেও, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরেঁর (Emmanuel Macron) মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) প্রশস্তি শোনা গেল। এটা যুদ্ধের উপযোগী সময় নয় বলে মোদি সঠিক মন্তব্য করেছেন বলে মন্তব্য করলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে মোদিকে সমর্থন মাকরেঁর!

নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৭তম সাধারণ সভার অধিবেশন চলছে (United Nations)। সেখানে বক্তৃতা করতে গিয়েই মোদিস্তুতি শোনা যায় মাকরেঁর মুখে। তিনি বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঠিকই বলেছেন যে, এটা যুদ্ধের উপযুক্ত সময় নয়। পশ্চিমি শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা বা পূর্ব-পশ্চিমি বিশ্বের মধ্যে দ্বন্দ্বের সময় নয় এটা। বরং একজোটে সার্বভৌম, সমকক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকার সময়। যাতে একজোটে সব বাধা-বিপত্তির মোকাবিলা করা যায়।”  

সম্প্রতি শাংহাই সম্মেলনে গিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। সেখানেই যুদ্ধ সমাপ্তির পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। পুতিনকে মোদি বলেন, “বর্তমানে যে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, তা যুদ্ধের উপযুক্ত নয়। বরং শান্তির পথে কী ভাবে চলা যায়, তা নিয়ে বিচার-বিবেচনা করা উচিত। বিগত কয়েক দশক ধরে পরস্পরের পাশে থেকেছে ভারত এবং রাশিয়া। তাই কী ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।”


মোদি যুদ্ধ সমাপ্তির পক্ষে সওয়াল করলে, জবাবে পুতিন বলেন, “ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আপনার অবস্থান জানি আমি। আপনার উদ্বেগের কথাও জানি। আমরাও চাই, যত শীঘ্র সম্ভব এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু প্রতিপক্ষ শিবির সমঝোতায় যেতে আগ্রহী নয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক ভাবেই তা বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা। কী ঘটছে তা আপনাকে জানাতে থাকব আমরা।”

স্বাধীনতার পর থেকে বিপদে আপদে বরাবরই পরস্পরের পাশে থেকেছে ভারত এবং রাশিয়া। পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, নিরপেক্ষ অবস্থানই বজায় রাখে ভারত। গোটা বিশ্ব যখন রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে ব্যস্ত, সেই সময় চিন এবং ভারতই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদান থেকে বিরত থাকে। বরং শান্তিপূর্ণ ভাবে যুদ্ধে ইতি টানার পক্ষে সওয়াল করে দুই দেশ। তা নিয়ে আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দেশগুলিতে সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। তার পরও দিল্লির তরফে বদলায়নি। পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতেও সেই অবস্থানই তুলে ধরেন মোদি। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে মোদির সেই মন্তব্যই তুলে ধরলেন মাকরঁ।

এখনও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানেই আমেরিকা

যুদ্ধের প্রশ্নে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা আমেরিকার। রুশ পণ্য নিষিদ্ধ থেকে রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বসানো, সব ক্ষেত্রেই কড়া অবস্থান নিয়েছে তারা। এমনকি রাশিয়ার মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সর্বতো ভাবে সাহায্য প্রদানের কথাও বলতে শোনা যায় তাদের। রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৭তম অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন তাদের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। এ যাবৎ যুদ্ধে ইতি টানার কথা বললেও, পুতিনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানই বজায় রেখেছেন তিনি। বাইডেন রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বিবৃতি দেন। সেখানে তিনি জানান, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ সম্পূর্ণ অন্যায্য। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকে রুখে দাঁড়ানোর আর্জি জানাবেন বাইডেন।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours