মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকালই বলে দিয়েছেন কেষ্টবাবু বীর। ছাড়া পেলে, অনুব্রত মণ্ডলকে বীরের মতোই বরণ করবে বলে তৈরি হচ্ছে তৃণমূল।

বল বীর, চির উন্নত মম শির। বীরেদের মাথা সব সময় উঁচুই থাকে। দিকে দিকে, দেশে দেশে, মানুষ বীরেদের কথাই শুনতে চায়। সেই বীরপুরুষটি যদি অনুব্রত মণ্ডল হন। তা হলে তো মুখ খুললেই হিট ডায়লগের ফুলঝুরি। আজ কেষ্টবাবু নতুন কিছু বলেছেন। শুনবেন না সেসব কথা?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকালই বলে দিয়েছেন কেষ্টবাবু বীর। ছাড়া পেলে, অনুব্রত মণ্ডলকে বীরের মতোই বরণ করবে বলে তৈরি হচ্ছে তৃণমূল। আসলে, এই বসুন্ধরা তো বীরভোগ্যা। তাই বীরভূমের বীরপুরুষ অনুব্রত মণ্ডলের কদর আছে আশেপাশের জেলাতেও। বীরভূমের পাশের জেলা বর্ধমান।

বছর দশেক আগের কথা। বর্ধমান তখনও পূর্ব, পশ্চিমে ভাগ হয়নি। সেই সময়, ঠিকঠাক বললে, ২০১০ সালের পাঁচই মার্চ, বর্ধমানের মঙ্গলকোটে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। বোমা বিস্ফোরণে, কেবুলাল শেখ নামের একজন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হন। সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ওই বছরই, অক্টোবর মাসে চার্জশিট দেয় মঙ্গলকোট থানা। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই চার্জশিটে অনুব্রত মণ্ডল সহ মোট ১৫ জনের নাম ছিল। কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজের নামও ছিল মঙ্গলকোট বিস্ফোরণ মামলার চার্জশিটে। অনুব্রত তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি হলেও, কিছুদিন আগে পর্যন্ত বর্ধমানের তিনটি বিধানসভা, মঙ্গলকোট, আউসগ্রাম এবং কেতুগ্রামের সাংগঠনিক কাজও দেখতেন। মোটামুটি, ২০০৯ সাল থেকেই এই তিন এলাকায় তাঁর যাতায়াত। প্রথম থেকেই অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছিলেন, এই মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল সিপিএম-এর পুলিশ। আজ বিধাননগরের এমপি-এমএলএ কোর্ট কেষ্টবাবু-সহ বাকিদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করল।

না, আজ বীরের সম্বর্ধনা কপালে জোটেনি কেষ্টবাবুর। কারণ, তিনি এখন গরু পাচার মামলায় বন্দি। কলকাতার আদালত থেকে আবার ফিরে গেছেন আসানসোলে জেলে। তবে কেষ্টবাবু কনফিডেন্ট, গরু পাচার-সহ আরও যা যা কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়ানো হচ্ছে, তাঁর কোনওটাতেই কিছু প্রমাণ করা যাবে না। মানে তাঁর বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র সুবিধে করতে পারবেন না তদন্তকারীরা। গতকাল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই একই কথা বলেছিলেন। তৃণমূল সাংগঠনিক সভা থেকে দলনেত্রী ঘোষণা করেছিলেন, তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই শেষপর্যন্ত প্রমাণ করা যাবে না। দলনেত্রীর সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই ভরপুর অক্সিজেন পেয়েছেন কেষ্ট মণ্ডল।

এতটাই মনের জোর পেয়েছেন, যে পঞ্চায়েত ভোটের পরিকল্পনাও তাঁর পাকা মাথায় ঘুর ঘুর করছে। তিনি জেলবন্দি থাকলেও, দলের জন্য ফর্মুলা যে তৈরি করে দেবেন, তার একটা আভাস আজ দিয়েছেন। তবে এবার পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের বিরোধী নেতা এবং পুলিশকর্মীরাও আশ্বস্ত থাকতে পারেন, এবারের ভোট শান্তিপূর্ণ হবে। বলে দিয়েছেন কেষ্টবাবু। অভিষেকও তো বলেছেন, বিরোধী শূন্য করতে হবে পঞ্চায়েত। কিন্তু, গায়ের জোরে নয়। ব্যাপারটা যতই, অবাস্তব শোনাক, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অনুব্রত মণ্ডলও যখন আশ্বাস দিচ্ছেন। তখন, বিশ্বাস করতে ক্ষতি কী? মনে রাখবেন, জো জিতা ওহি সিকন্দর। অনুব্রত মণ্ডল, আজ মামলা জিতেছেন, কাজেই তাঁর কথা শুনতে হবে। শোনাব।

শোনাব পুলিশ চাইলে যে সব করতে পারে, তা আজ আবার কীভাবে প্রমাণ হয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রী ডেটলাইন বেঁধে দিতেই ক্যাচ কট কট। গ্রেফতার বাগুইআটি জোড়া খুনের মূল অভিযুক্ত। কাজেই এইসব কথা তো আজ না বললেই নয়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours