আজ শেন ওয়ার্নের জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা তাঁর বর্ণময় ক্রিকেট জীবন...

দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গিয়েছে এই পৃথিবীতে নেই অজি কিংবদন্তি তারকা ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন (Shane Warne)। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকী (Birth Anniversary)। মাত্র ৫২ বছর বয়সেই ইহজগতের মায়া কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন ওয়ার্নি। ক্রিকেটের বরপুত্র বলা হত ওয়ার্নকে। তাঁর স্পিনের যাদুতে বিপক্ষের তাবড় তাবড় ব্যাটাররাও ধরাশায়ী হয়ে যেত। ক্রিকেটের বরপুত্র যেমন ছিলেন ওয়ার্ন, তেমনই তিনি ছিলেন অবাধ্যও। তাঁর ব্যাক্তিগত জীবন জুড়ে ছিল কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির ঢল। তবুও মানুষটাকে ভালোবাসত ক্রিকেট প্রেমীরা। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা তাঁর বর্ণময় ক্রিকেট জীবন…

ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক – সালটা ১৯৯২। সে বার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ভারত (India)। সেই সময় অজি দলে অভিষেক হয়েছিল শোরগোল ফেলে দেওয়া শেন ওয়ার্নের। ততদিনে ক্রিকেট বিশ্বে ওয়ার্নকে নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে রবি শাস্ত্রী ওয়ার্নকে কার্যত নাকানিচোবানি খাইয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনিতে তৃতীয় টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন শাস্ত্রী। ওয়ার্ন আটকাতে পারেননি শাস্ত্রীকে। ১৫০ রান দিয়ে পেয়েছিলেন ১টি উইকেট। ফলে টেস্ট অভিষেকটা ওয়ার্নের খুব একটা ভালো হয়নি বলা যায়।

টেরি জেনারের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ওয়ার্ন – অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৯টি টেস্ট ও ১টি ওয়ান ডে ম্যাচে খেলা টেনি জেনার একটা সময় শেন ওয়ার্নকে কোচিং করিয়েছেন। জেনার জুয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন। যার ফলে তাঁকে কারাবাসও ভোগ করতে হয়েছিল। পরবর্তীকালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি অনেক ক্রিকেটারকে কোচিং করাতেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার ওয়ার্ন। ক্রিকেট কেরিয়ারের শুরুর দিকে একটা সময় ওয়ার্নি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন। সেই সংয় তিনি জেনারের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন। ওয়ার্নের জীবনে টেরি ব্যপক প্রভাব ফেলেন। টেরিকে কোচ হিসেবে ভীষণ মানতেনও ওয়ার্ন।

বল অব দ্য সেঞ্চুরিতে মাইক গ্যাটিংকে বোল্ড – ১৯৯৩ সালের অ্যাসেজ সিরিজে ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইংল্যান্ডের মাইক গ্যাটিংকে রহস্যময় বলে বোল্ড করেছিলেন শেন ওয়ার্ন। তাঁর জীবনের প্রথম অ্যাসেজ টেস্টের প্রথম বলেই অসামান্য ডেলিভারিতে গ্যাটিংয়ের স্টাম্প ছিটকে দিয়েছিলেন ওয়ার্ন। এই বলটি পরে শতাব্দীর সেরা বলের স্বীকৃতি পেয়েছিল।

ওয়ার্নির ফুটবলপ্রেম – ছেলেবেলায় ফুটবল ও টেনিসের প্রতি যতটা ভালোবাসা ছিল ওয়ার্নের, ক্রিকেটের প্রতি ততটা ভালোবাসা ছিল না তাঁর। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লিগের স্টার প্লেয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ১৮ বছর বয়সে এএফএল ক্লাব সেন্ট কিলডা তাঁকে দলে নেয়নি। সেই সময় পেশাদার এএফএল তারকা হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল ওয়ার্নের।

রাজস্থান রয়্যালসকে আইপিএল জিতিয়েছিলেন – ২০০৮ সালে আইপিএলের (IPL) প্রথম সংস্করণে রাজস্থান রয়্যালসের (Rajasthan Royals) মেন্টর ও ক্রিকেটার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্ন। টিমকে প্রথম আইপিএল জেতার স্বাদও দিয়েছিলেন তিনি।

টেস্টে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেটশিকারী – টেস্ট ক্রিকেট সর্বাধিক উইকেটশিকারী বোলার হলেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি ক্রিকেটার মুথাইয়া মুরলীধরন। তিনি ক্রিকেটের সব চেয়ে পুরনো ফর্ম্যাটে ৮০০টি উইকেটের মালিক। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন শেন ওয়ার্ন। ১৪৫ টি টেস্ট ম্যাচে খেলে ওয়ার্ন পেয়েছিলেন ৭০৮টি উইকেট।

অনেক তরুণ ক্রিকেটারের আদর্শ ওয়ার্ন – ক্রিকেটের বরপুত্র শেন ওয়ার্ন একটা সময়ের ক্রিকেটারদের আদর্শ ছিলেন। এখনও অনেক তরুণ ক্রিকেটার রয়েছেন, যাঁরা ওয়ার্নিকে আদর্শ মানেন। যে অস্ট্রেলিয়া পেস বোলারের জন্ম দেয়, সেখান থেকে উঠে আসা বিস্ময়কর লেগস্পিনার ওয়ার্নের।

ব্যাক্তিগত জীবনের কেচ্ছাকাহিনি – শেন ওয়ার্ন যেমন ক্রিকেটের বরপুত্র। তেমন তিনি ছিলেন অবাধ্যও। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন বারবার। শুধু তাই নয়, বিতর্কে ফালাফালাও হয়েছেন। ড্রাগ নিয়ে সাসপেন্ড হয়েছেন। কিন্তু ফের বাইশ গজে যখন ফিরেছেন, ওয়ার্ন আবার জাদু দেখিয়েছেন।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours