পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কড়া অবস্থান নিলেও, অনুব্রত মণ্ডলের ক্ষেত্রে এখনও সেই পথে হাঁটেনি তৃণমূল। বরং তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই এবং ইডি-র নিরপেক্ষতা নিয়ে রাস্তায় নেমেছে তারা। কিন্তু তা করতে গিয়ে কোথাও কোথাও ‘জ্বালাময়ী’ মন্তব্য শোনা গিয়েছে দলের নেতাদের মুখে। 
গুড়-বাতাসা, নকুলদানা বিলি করা বিরোধীদের পিঠে চড়াম চড়াম পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ। কেউ আবার বদল নয়, বদলার রাস্তায় হাঁটার পক্ষে রব তুলেছেন। অক অনুব্রত গ্রেফতার হলেও, লাখো অনুব্রত তৈরি রয়েছেন বলেও মন্তব্য শোনা করতে গিয়েছে দলের এক নেতাকে। এমন পরিস্থিতিতে নেতাদের সংযত হওয়ার বার্তা দিতে দেখা গেল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। 

অনুব্রতর গ্রেফতারিতে বেলাগাম তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা

অনুব্রতর গ্রেফতারির পর দলের একের পর এক নেতার ‘জ্বালাময়ী’ ভাষণ তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছে। তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রশ্ন তোলা হেল, ফিরহাদ বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। বিরোধী বন্ধুরা অসভ্যতা করেছেন। অনেকের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। কিন্তু এসব করবেন না।’’ এ নিয়ে দলের শৃঙ্খলাকমিটির বৈঠক হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে বলেও জানান ফিরহাদ। 

নিজাম প্যালেসে অনুব্রতকে যখন ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, সেই সময় শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের একটি ভিডিও সামনে আসে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আগে মনে হয়নি কখনও, কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে বদলা নয়, বদল চাইয়ের পরিবর্তে বদলার বদলে বদলা চাই হওয়া উচিত ছিল। আমাকে ক্ষমা করবেন মমতাদি। আমি বলে ফেললাম। আপনি যে মানসিকতা নিয়ে বলেছিলেন, বিরোধীরা সেই মানসিকতার লোক নয়। আপনার অনেক বড় মানসিকতা। অনেক বড় হৃদয়, তাই বদলা নয় বদল চাই বলেছিলেন। কিন্তু আজ সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি যেভবে নোংরামি করছে, আমাদের সেই দিনই বলা উচিত ছিল, বদলার বদলে বদলা চাই।’’ বদলার বদলে বদলা বলা উচিত ছিল।’’


শুধু কল্যাণই নন, শনিবার চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ককেও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘‘কেউ চোর বললে, পাল্টা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুৎসা হলে ধোলাই হবে, পেটাই হবে।’’

এ দিন কল্যাণ-অসিত, দু’জনেরই মন্তব্যের নিন্দা করেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, ‘‘কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে আমি কিছু বলব না। অসিম মজুমদার এর আগেও একটা ভুল করেছিলেন। আবার ভুলই করছেন আমি বলব।’’ দুই নেতাকে এ নিয়ে কোনও পরামর্শ দেবেন কি তিনি? প্রশ্নের উত্তরে সৌগত বলেন, ‘‘দলকে নিশ্চয়ি জানাব। আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত নই। তবে দলের প্রবীণ সদস্য হিসেবে অবশ্যই মতামত দেব।’’

দলীয় নেত্বত্বের এই বার্তায় কি সংযম আসবে! এ দিন বিকেল পর্যন্ত তার ইঙ্গিত মেলেনি। আউশগ্রাম ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অরূপ মিদ্যা বিজেপি কর্মীদের কার্যত হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘যারা বোম ফাটিয়ে বিজয় উল্লাস করছে, আমাদের ছেলেদের বলে দিলে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুলিশকে বলে দিয়েছি, সরকারটা এখনও তৃণমূল কংগ্রেসের। উনি যে বীজ বপন করেছেন তাতে আমাদের নেতারাই এক-একজন অনুব্রত মণ্ডল।আমাদের এলাকায় লাখো লাখো অনুব্রত তৈরি রয়েছে।’’ 

সকলকে সংযত হওয়ার বার্তা ফিরহাদ-সৌগতর

একই ভাবে মুরারই ১ নম্বর ব্লকে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুজয় দাস আবার হুমকি দিতে শোনা যায়, ‘‘আমাদের নেতাকে নাকি জুতো দেখাচ্ছিলেন বিজেপি-র লোকজন। গরুচোর গরুচোর বলছিলেন। সাবধান করছি, যে জুতোগুলো দেখাচ্ছিলেন বীরভূমের সভাপতি, উন্নয়নের কাণ্ডারীকে, সেই জুতোগুলো সাবধানে রাখুন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সেই জুতোগুলি আপনাদের গালে পড়বে। বেশি কথা বলব না। গালগুলি এখন থেকে চকচকে কের রাখুন। আবার বলছি, যে জুতোগুলো দেখাচ্ছিলেন, সেগুলো আপনাদের গালেই পড়বে।’’ দুবরাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পীযূষ পান্ডে আবার জানান, সকলকে চিহ্নিত করে রাখছেন। কিছুদিন কাটুক, সবাইকে দেখে নেবেন।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours