পারিবারিক জমিতে বাড়ি তৈরি হবে। সেই কাজে এসেছিলেন পূর্ব পরিচিত মুর্শিদাবাদের রাজমিস্ত্রিরা। পুরনো ভিটেতেই আস্তানা গেড়েছিলেন চার রাজমিস্ত্রি। পরিবারের সঙ্গে বাড়ছিল ঘনিষ্ঠতা। শেষমেশ সেই বাড়ির কলেজ পড়ুয়া তরুণীর রহস্যমৃত্যুর পরপরই উধাও হয়ে গেল এক রাজমিস্ত্রি।

বৃহস্পতিবার সকালে ডেবরা থানার বরাগড়ে ওই বাড়ির দোতলার ঘর থেকে উদ্ধার হয় স্পৃহা চক্রবর্তী (১৯)-র দেহ।

তিনি মাদপুর সরকারি কলেজের রসায়নবিদ্যার প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বেলা গড়িয়ে গেলেও মেয়ে জলখাবার খেতে না আসায় মা মহুয়া চক্রবর্তী ডাকতে যান দোতলার ঘরে। গিয়ে দেখেন খাটের একধারে শুয়ে স্পৃহা, সাড়া-শব্দ নেই। পরিজনেরা দ্রুত তাঁকে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে অনেক আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিত্‍সকেরা। খবর পেয়ে আসে ডেবরা থানার পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, বাড়িতে কাজে আসা মুর্শিদাবাদের চার রাজমিস্ত্রির মধ্যে কুশ প্রামাণিক নামে একজন ঘটনার পর থেকেই পলাতক। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ডেবরায় যান খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা খুনের মামলা রুজু করেছি। কী কারনে খুন সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তদন্তে নেমে অনেকগুলি বিষয় সামনে আসছে। আমরা সেগুলি খতিয়ে দেখছি। বাড়িতে যে রাজমিস্ত্রিরা কাজ করছিল তাদের একজন পলাতক। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পলাতক রাজমিস্ত্রিরও খোঁজ চলছে।'

ওই পরিবারের একটি জমি রয়েছে ডেবরা বাজার এলাকায়। সেখানেই বাড়ি তৈরির কাজের বরাত দেওয়া হয় পূর্ব পরিচিত মুর্শিদাবাদের ওই রাজমিস্ত্রিদের। ডেবরা বাজারে কাজ হলেও ওই রাজমিস্ত্রিরা থাকছিলেন বরাগড়ের বসত বাড়িতেই। গত চার মাস ধরে কাজ চলায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই রাজমিস্ত্রিদের জানাশোনা হয়ে গিয়েছি। তারই মাঝেই এমন ঘটনায় শিউরে উঠছেন স্থানীয়রা। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে তরুণীয় গলায় আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা গিয়েছে। ওই তরুণীকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। তরুণীর মায়ের একটি শাড়ির অর্ধেক অংশ কাটা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। মিলছে না তরুণীর মোবাইলও। ছাদের চিলেকোঠার তালা খোলা থাকায় সেখান দিয়েই অভিযুক্ত ঘরে ঢুকেছিল বলে ধারণা। ঘটনাটি খুন নিশ্চিত হতে তরুণীর দেহ মেদিনীপুর মেডিক্যালে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু কেন এই খুন?

প্রাথমিকভাবে পরিবার ও পুলিশের অনুমান ছিল ধর্ষণের খুন করা হয়ে থাকতে পারে। তবে প্রাথমিক ভাবে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলে পুলিশের দাবি। তবে প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না মেলায় খুন করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পরিজনেরা। টাকা ও অন্য মূল্যবান সামগ্রী চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ায় তরুণীকে খুন করা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। দুই মেয়ের মধ্যে বড় স্পৃহাকে হারিয়ে হাহাকার করছেন বাবা ভগীরথ চক্রবর্তী ও মা মহুয়া চক্রবর্তী। মৃতার জেঠু অনন্ত চক্রবর্তী বলেন, 'ওই পালিয়ে যাওয়া রাজমিস্ত্রিকেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। তবে ঠিক কেন খুন করেছে বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশের তদন্তে আমরা আস্থা রাখছি।'


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours