কর্মরত মহিলাদের জন্য বেতন-সহ মাতৃত্বকালীন ছুটি চালু হলেও সেই নিয়ম মেনে চলার তোয়াক্কাই করছেন না দেশের বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ আধিকারিকরা। বরং স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। সেই স্বেচ্ছাচারিতার আরও এক নজির দেখা গেল রবিবাসর।শুধুমাত্র ন্যায্য অধিকার চাওয়ার অপরাধে কাজ হারাতে হলো এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মহিলা কর্মীকে। হতভাগিনীর নাম জিন্নাতি বেগম। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় (এনজিও) মাসিক ১০ হাজার টাকার বেতনের চাকরি করতেন। কাজ হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা জিন্নাতি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ডাংধরা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচরের বাসিন্দা জিন্নাতি বেগমের স্বামী কর্মহীন। ফলে তাঁর চাকরিই ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উ‍ত্‍স। সাড়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা জিন্নাতি অনাগত সন্তানকে সুষ্ঠভাবে পৃথিবীর আলো দেখাতে সংস্থার ম্যানেজারের কাছে মাতৃত্বকালীন ছুটি চেয়ে আবেদন জমা দেন। সেই আবেদন ছুড়ে ফেলে ম্যানেজার আব্দুল বারি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ছুটি দেওয়া যাবে না। চাকরি ছাড়তে হবে। যদি জিন্নাতি চাকরি না ছাড়েন, তাহলে সংস্থাই তাঁকে চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেবে।

ম্যানেজারের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়েন জিন্নাতি। শেষ পর্যন্ত আত্মসম্মানের কথা বিবেচনা করে চাকরি ছেড়ে দেন। কিন্তু তাঁর ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন আটকে দেন নরপিশাচ ম্যানেজার। রবিবার এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিজের অপকীর্তির জন্য অনুশোচনা করতে দেখা যায়নি আবদুল বারি। উল্টে জিন্নাতিকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেন, 'চাকরির সময় জানিয়ে দেওয়া হয় গর্ভকালীন অথবা দুই বছর কম বয়সের সন্তান থাকলে তাদের নিয়োগ হবে না। কিন্তু চাকরি পাওয়ার সময়ে গর্ভবতী হওয়ার কথা লুকিয়ে গিয়েছিলেন জিন্নাতি।'

মানবাধিকার সংগঠন দুপ্রকের জেলা সভাপতি জাহাঙ্গির সেলিম জিন্নাতির সঙ্গে যা হয়েছে তাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়ে বলেছেন, 'বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়া জিন্নাতির আইনসিদ্ধ অধিকার। তাঁকে ছুটি না দিয়ে শুধু অমানবিক আচরণই করা হয়নি, আইনকেও লঙ্গন করা হয়েছে।'
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours