বোমা মেরে তৃণমূলের(TMC) উপপ্রধানের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বীরভূম(Birbhum) জেলার রামপুরহাট(Rampurhat) থানা এলাকার বকটুই(Bokdui) গ্রাম। রবিবার রাতে সেই গ্রামে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একের পর এক বাড়িতে।


অনেক পরে খবর যায় দমকলের কাছে। দমকল ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। আগুন নিভতে রাতেই একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৩টি দগ্ধ দেহ। এরপর মঙ্গলবার সকালে একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও ৭টি দগ্ধ দেহ। তবে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় এটা স্বীকার করা হয়নি যে দুষ্কৃতীদের হামলাবাজির জেরে এই ঘটনা ঘটেছে নাকি দুর্ঘটনাবশ্বত এই ঘটনা ঘটেছে। তবে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের উপপ্রধানের খুনের ঘটনার জেরেই এই পাল্টা হামলাবাজির ঘটনা ঘটেছে। আর তাতেই এতজন মারা(Murder) গিয়েছেন। তাঁরা এই ঘটনার সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যায় রামপুরহাট-১ ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হন দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে। সোমবার সন্ধ্যার সময় নিজের বাড়ির কাছেই ভাদু শেখ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাগটুই মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন। সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছুড়ে পালায় এক দল দুষ্কৃতী। ঘটনার পর স্থানীয়েরাই রক্তাক্ত অবস্থায় ভাদু শেখকে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতেই চিকিত্‍সকেরা ভাদুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। উপপ্রধানের ওপর বোমা হামলার পরেই নড়েচড়ে বসে রামপুরহাট থানার পুলিশ। এলাকায় টহলদারি শুরু হয়। রাতেই পুলিশ এক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে। এরপর মাঝরাতে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাগটুই গ্রাম। একদল দুষ্কৃতী রাতেই হামলা চালান গ্রামে। একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর তার জেরেই এখনও পর্যন্ত মোট ১০জনের দগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে দমকলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ১টি বাড়ির ১টি ঘর থেকে ৭জনের দগ্ধ দেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে।

তবে দমকল ১০টি দেহ উদ্ধারের ঘটনা বললেও বীরভূম জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত ৭টি দেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশ এটাও জানিয়েছে, উপপ্রধান খুনের ঘটনায় হামলাবাজির জেরে এরা মারা গিয়েছেন নাকি অগ্নিকাণ্ডের বিচ্ছিন্ন ঘটনায় তাঁরা মারা গিয়েছেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শুরু হলে তবেই বোঝা যাবে। গ্রামবাসীদের অবশ্য দাবি মাঝরাতে হামলাবাজির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও এদিন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেছেন, হামলাবাজির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। টিভি ফেটে একটি বাড়িতে আগুন লাগে। তার জেরেই ৭জন মারা গিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, 'তিন চারটি বাড়িতে আগুন লেগেছিল। টিভি ফেটে আগুন লাগে। দমকল, পুলিশ গিয়েছিল। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক, তার পর বলব। গতকালের ঘটনার সঙ্গে এর যোগ থাকতে পারে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। আমি তো ওখানে ছিলাম না। আমি সকালে খবর পেয়েছি। আমি যতদূর খবর পেয়েছি, একটি বাড়িতেই সাত জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।'

ঘটনার জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দ্রুত সেখানে যাচ্ছে তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল। তাতে থাকছেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পরিবহণ, আবাসন ও পুর দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক অভিজিত্‍ সিংহ। এদিন কলকাতা থেকে হেলিকপ্টারে করে রামপুরহাটে যাচ্ছে ওই প্রতিনিধি দল। ওই গ্রামে এখন বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কার্যত গোটা গ্রাম থমথমে ও তীব্র আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours