হাওড়ায় বেলিলিয়াস রোড শিল্পাঞ্চলে ডাকাতির ঘটনায় ধৃত দালালদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদেরও দফায় দফায় জেরা আরও তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ডাকাতির টাকা দিয়েই প্রেমিকাকে আইফোন এবং হবু শ্বাশুড়িকে ফ্ল্যাটবাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য উত্তরপ্রদেশে লক্ষাধিক টাকা পাঠিয়েছিলেন ধৃতদের এক জন ভিকি মল্লিক।ভিকির পাশাপাশি হাওড়ার ডাকাতি-কাণ্ডে হেমন্ত মিশ্র ও কার্তিক রাম নামে আরও দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এখনও পলাতক আরও দুই দুষ্কৃতী। তাঁদের এক জনের নাম বোম্বে রাজেশ। পুলিশ সূত্রে খবর, এঁরা প্রত্যেকেই কুখ্যাত অপরাধী। তাঁদের বিরুদ্ধে নানা সময় তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তবে গত মাসছয়েক ধরে এঁরা কোথায় ছিলেন, কী করেছেন, সে খবর পুলিশের কাছে নেই। তাঁদের অপরাধমূলক কাজকর্মের কোনও খবর প্রকাশ্যেও আসেনি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ বেলিলিয়াস রোডে একটি লোহার সামগ্রীর দোকান থেকে ১ কোটি টাকা লুঠের ঘটনা ঘটে। পালানোর সময় যানজটে গাড়ি আটকে পড়ে দুষ্কৃতীদের। জনাকীর্ণ রাস্তা দিয়ে দিনেদুপুরে পিস্তল উঁচিয়ে ডাকাতদের দৌড় আতঙ্কিত করেছিল এলাকাবাসীকে। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে সেই ভিডিয়ো। তদন্তে নেমে ওই দোকানের কারবারে জড়িত তিন দালাল— দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার বাসিন্দা ননীগোপাল দাস, বালির বাসিন্দা শিবরাম চট্টোপাধ্যায় এবং বরানগরের বাসিন্দা বিশ্বজিত্‍ দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার সময় ঘটনাস্থলের আশপাশেই ছিলেন ওই তিন দালাল। এর পরেই তাঁদের প্রথমে আটক এবং পরে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দালালদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, লুঠ হওয়া দোকানের ব্যবসায়ী সুনীল শর্মার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় মূলত কালো টাকা সাদা করার সূত্রেই। তাঁদের মধ্যে আলাপ প্রায় মাস ছয়েকের। বেশির ভাগ সময় হোটেলে বসে বা ফোনে কথা হত। ব্যবসায়ীর অফিসেও নিত্য যাতায়াত ছিল তাঁদের। ব্যবসায় পণ্য ও পরিষেবা কর যাতে কম দিতে হয়, সুনীলকে মূলত সেই ব্যবস্থাই করে দিতেন ওই তিন জন। এ ছাড়া টাকা হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও সুনীলকে সাহায্য করতেন তাঁরা। বিনিময়ে কমিশনও পেতেন।

ওই দালালদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে জানতে পেরে তাঁদের একে একে গ্রেফতার করা হয়। কার্তিককে গ্রেফতার করা হয় লেকটাউন থেকে। হেমন্তকে লিলুয়া থেকে। আর হাওড়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন ভিকি। জেরায় ভিকি জানান, ডাকাতির পর টাকা ভাগ-বাটোয়ারা শেষে প্রত্যেকেই নিজের নিজের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়েই প্রেমিকা মহিমা সিংহকে আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স কিনে দিয়েছেন তিনি। মহিমা উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের বাসিন্দা। পেশায় বার-নর্তকী। কর্মসূত্রে কলকাতায় এসে ভিকির সঙ্গে তাঁর আলাপ। মহিমাকে আইফোন দেওয়ার পাশাপাশি মহিমার মা-কেও একটি ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার জন্য সাড়ে চার লক্ষ টাকা পাঠিয়েছেন ভিকি। উল্লেখ্য, ভিকির বাবা কাঁটাপুকুর মর্গের ইনচার্জ।

বাকি পলাতক দুই দুষ্কৃতীর খোঁজে এখনও হাওড়ার নানা জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে পুলিশের নজরে রয়েছে বোম্বে রাজেশ। কারণ, ডাকাতি নিয়ে মূলত তাঁর সঙ্গেই দালালদের চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তিমাফিকই রাজেশ বাকিদের একজোট করে ডাকাতি করে। তদন্তের স্বার্থেই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়াটা বিশেষ জরুরি বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁর নাগাল পেতে ভিকি, কার্তিক আর হেমন্তেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours