কার্ত্তিক অমাবস্যার রাত্রিতে দীপ জ্বালিয়ে দীপান্বিতা পালন করা এক অতি প্রাচীন রীতি । ব্রাহ্মণ্য ও অব্রাহ্মণ্য উভয় সংস্কৃতিতে এই রীতি রয়েছে । জৈন কল্পসূত্র অনুযায়ী কার্ত্তিক অমাবস্যায় রাত্রিতে মহাবীর বর্ধমান মহাপ্রয়াণ  বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন । ওই ঘটনার স্মরণে  সমস্ত দেবতারা সমবেত ভাবে  মহাবীরের মুক্তির পথ আলোকিত করার জন্য সেই রাত্রিতে দীপ জ্বালিয়েছিলেন । বিশ্বের আঠারো জন শাসকও সেই রাত্রিতে দীপ জ্বালিয়ে ছিলেন তাঁদের প্রিয়  প্রজ্ঞার আলোয় পৃথিবীকে আলোকিত করার উদ্দেশ্যে । ওই দিন থেকেই বীর নির্বাণ অব্দের সূচনা ঘটে । শ্বেতাম্বর জৈন ধর্মাবলম্বীরা আজও সেই চেতনায় দীপান্বিতা উৎসব পালন করেন । 

        দীপান্বিতা উৎসবের আর একটি পৌরাণিক সাক্ষ্য পাওয়া যায় বৃহদ্ধর্ম পুরাণে । ওই পুরাণে বলা হয়েছে, পূর্বকালে দিগম্বরী ভগবতী কালী অসুর দিগের সংহার করার জন্য এবং সুরগণের মঙ্গলের জন্য কার্ত্তিক অমাবস্যায় নিশীথকালে ভূতলে অবতীর্ণ হন । তখন তাঁর পদভারে পৃথিবী কম্পিত হতে লাগলো । পৃথিবীকে স্থিত করার জন্য ভগবান শঙ্কর স্বরূপ অবলম্বন করে দিগম্বরী কালীকে আপন বক্ষের উপর ধারণ করেন । ফলে কূর্ম , অনন্ত , বসুন্ধরা, ব্রহ্মাণ্ডের সমুদয় স্থিরতা প্রাপ্ত হয়। তাই এই পুণ্যক্ষণে দ্বিজাতি সহ সকল জিতেন্দ্রিয় , জিতাহার, ও জিতনিদ্র মানুষের ভগবতী কালীকে উপাসনা করা  কর্তব্য । এই কার্ত্তিক অমাবস্যায় পূজিত  চারুময়ী মহাকালী শ্যামা চতুর্ভুজা , তাঁর বাম হস্তদ্বয়ে বর ও অভয় মুদ্রা এবং দক্ষিণ হস্তদ্বয়ে অসি ও নরমুন্ড শোভা পায় । তিনি দিগম্বরী , সংহার-কাল নিবিড়-কায়া , শবরূপ মহাদেবের হৃদয়ে আসীন । তাঁর আলুলায়িত মুক্তকেশ , ললজিহ্বা , হাস্যময়ী , মুখের উভয় ওষ্ঠ প্রান্ত থেকে দানবের ভয় উদ্রেগকারী নিরন্তর রক্তধারা গলিত হচ্ছে । তিনি সত্ত্বরূপা , শুদ্ধা, কেবলা , নিষ্কলা ও শিবা ! পীনোন্নত স্তনী নানা ভূষণে ভুষিতা । ব্রহ্মা বিষ্ণু ইত্যাদি দেবগণের বন্দনীয়া কালরূপিণী কালিকার চতুর্দিকে যোগিনীগণ আসব মধু পান ও দানে সদা নৃত্য করছে । ওই কার্ত্তিক অমাবস্যার তিথিতে উক্তরূপা কালীকে পশু, পুষ্প, বস্ত্র, অলঙ্কার , বিবিধ খাদ্য দ্রব্য এবং দীপমালা দ্বারা তাঁকে উপাসনা করতে হবে এবং নৃত্য গীত ও ভগ্-লিঙ্গাদি  শব্দ উচ্চারণ করে দেবীকে তুষ্ট  করতে হবে ।উপরের দুটি উদাহরণ থেকেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি দীপান্বিতা উৎসব অতি প্রাচীন ও সর্বজন পালিত । 

         কার্ত্তিক অমাবস্যার রাত  আলোকিত করতে মৃৎপ্রদীপের গুরুত্ব অপরিসীম । সুন্দরবন প্রত্নগবেষণা কেন্দ্রে সংরক্ষিত সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রত্নস্থল থেকে প্রাপ্ত শতাধিক মাটির প্রদীপের কয়েকটির আলোকচিত্র এখানে সংবদ্ধ করা হলো।  এগুলি প্রাক মৌর্য কাল থেকে খ্রিস্টিয় ত্রয়োদশ শতকের সমসময়ের । 





তথ্য  ও চিত্র সংগ্রহ ফেসবুক ( সুন্দরবন প্রত্ম গবেষণা কেন্দ্র ) 

দেবীশঙ্কর মিদ্যা বাবুকে কাকদ্বীপ. কমের পক্ষ থেকে আপনাকে অংশ ধন্যবাদ জানাই এই রকম একটি তথ্য মানুষের সামনে আনার জন্য ।


   ( সুন্দরবন প্রত্ম গবেষণা কেন্দ্র )    https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=338364191424377&id=100057523959035


     




Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours