গড়িয়াহাট খুনে মূল অভিযুক্ত ভিকিকে জেরা করে সামনে এল খুনের মোটিভ। জেরায় ভিকি জানিয়েছে, লুঠের উদ্দেশ্যেই কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকি ও তাঁর গাড়িচালক রবীন মন্ডলকে খুন করে সে ও তার দলবল। কারণ তার ধারণা ছিল যে, ওই বাড়িতে ওনেক টাকা গয়না আছে।কী ঘটেছিল সেদিন?
পুলিসকে দেওয়া জবানবন্দিতে ভিকি স্বীকার করেছে যে, সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বকর্মা পুজোর পর তারা কীভাবে কী করবে, তার পুরো পরিকল্পনা করে। সেদিন খুন করে লুঠের পরিকল্পনা নিয়েই ৫ জন বাড়িতে ঢোকে। যেহেতু ভিকিকে সুবীর ও রবীন দু-জনই চিনতেন, ফলে লুঠ করে ছেড়ে দিলে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই খুন করার সিদ্ধান্ত। সেদিন বাড়িতে ক্রেতা সেজে ঢোকার পর তিনতলার অংশটা দেখার অজুহাত দেখিয়ে রবীনকে উপরে নিয়ে যায় সঞ্জয় ও শুভঙ্কর মন্ডল। ভিকি, বাপি ও জাহির দোতলায় সুবীরকে কথায় ব্যস্ত রাখে। এরপর তিনতলায় রবীনকে খুনের পর বেসিনে হাত ধুয়ে নীচে নেমে আসে ওই দু-জন। তারপর ৫ জন মিলেই সুবীরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁকে খুন করে আংটি, ওয়ালেট, মোবাইল লুঠ করে পালায়।

খুনের পরের ঘটনাক্রম
সেখান থেকে বেরিয়ে ফার্ন রোড়ের সাইটে চলে যায় ভিকি ও শুভঙ্কর। ডায়মন্ডহারবার পালায় বাকি তিনজন। পরদিন শুভঙ্কর বাসন্তীতে তার বাড়িতে ফিরে যায়। এরপর ১৮ অক্টোবর সকালে মায়ের সঙ্গে দেখা করে দুটো ব্যাগ হাতে তুলে দেয় ভিকি। তারপর দেশপ্রিয় পার্কে নিজের অফিসে গিয়ে বাবার মৃত্যুর অজুহাত দিয়ে টাকা নেয়। সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য ডায়মন্ডহারবারে বাড়িতে ফেরে ভিকি। তারপর রাতে আবার কলকাতা এসে সাড়ে ১১টার হাওড়া-মুম্বই CSMT স্পেশাল ট্রেনে ওঠে। প্রথমে পরেশনাথ পর্যন্ত টিকিট কাটে। কিন্ত পরে টিটিকে পয়সা দিয়ে মুম্বই পর্যন্ত চলে যায়।

কীভাবে পুলিসের জালে?
ভিকিদের খোঁজে হাওড়া স্টেশনে ভিন রাজ্যে যাওয়া ট্রেনের যাত্রী তালিকা ধরেও খোঁজ শুরু করে পুলিস। আর তাতেই জানা যায় যে পরেশনাথের টিকিট কেটেছে তারা। এরপর হাওড়া স্টেশনের সিসিটিভি পুলিসের হাতে আসে। ভিকিদের খোঁজে পরেশনাথেও যায় পুলিশের দল। যদিও তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। অবশেষে শুভঙ্করের ঘনিষ্ঠজনের মোবাইলে নজরদারি চালিয়ে পুলিস জানতে পারে যে ভিকিরা মুম্বইতে রয়েছে। তদন্তে পুলিস জানতে পারে, শুভঙ্কর যে এলাকায় থাকে সেখানকার কয়েকজন যুবক মুম্বইয়ে কাজ করে। প্রাথমিকভাবে ভিকিরা তাই সেখানে গিয়ে ওঠে। কিন্তু ভিকিদের খবর টিভিতে দেখার পরই তাদের আর আশ্রয় দিয়ে অস্বীকার করে ওই যুবকেরা। পরে একটি নির্মীয়মাণ আবাসনে ওয়াচম্যানের কাজ নেয় শুভঙ্কর ও ভিকি। সেখান থেকেই পুলিসের জালে ধরা পড়ে।
আজ ধৃতদের আদলতে তোলা হলে, ১২ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, জেরায় ধৃত শুভঙ্করের দাবি, ফার্ন রোডে আগে সে কাজ করত। সেই সূত্রেই আলাপ হয় ভিকির সঙ্গে। এক মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তাকে সে বিয়ে করতে চায়। যার জন্য ভিকির প্রস্তাবে সে রাজি হয়ে গিয়েছিল।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours