করোনার দীর্ঘ প্রভাব পড়ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায়। গত বছর মার্চ মাস থেকে লকডাউন ঘোষণার পর স্কুল কলেজ সেই যে বন্ধ হয়েছে তার পর আর সেভাবে খোলা যায়নি। করোনার কারণে রাজ্যের মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও বাতিল ঘোষণা করেছে সরকার। এবার তার এক মর্মান্তিক পরিণতি দেখা গেল উত্তরবঙ্গে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ায় অবসাদে আত্মহত্যা করল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের দিনহাটায়। স্থানীয় আমবাড়ি এলাকার ছোটো আটিয়াবাড়ির বাসিন্দা বছর ১৬-র কিশোরী বর্ণালী বর্মন। এবছরই মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। পরীক্ষা বাতিলের খবর শুনেই নাকি মনমরা হয়ে পড়ে সে।
ধারণা হয়, আর কখনওই এই কঠিন সময় থেকে বেরোনো সম্ভব হবে না। জীবনের কোনও স্বপ্ন পূরণ হবে না। অবসাদে চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে। মেধাবী ছাত্রী ছিল বর্ণালী। স্বপ্ন ছিল মাধ্যমিকে এক থেকে দশের মধ্যে স্থান হবে তাঁর। টিভিতে তাঁর ছবি দেখানো হবে। সোমবার এবছরের মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টিভিতে সেই খবর দেখার পরেই বাবা মা-কে বর্ণালী জানায়, 'তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না।' বিকেলে বাইরে থেকে ঘুরে এসেই দরজা বন্ধ করে দেয় বর্ণালী। বাড়ির লোক প্রথমে ভেবেছিলেন পোশাক বদলাতে গিয়েছে। কিন্তু রাত আটটা বেজে যাওয়ার পরেও দরজা না খোলায় সন্দেহ হয় তাঁদের। জানলা দিয়ে দেখেন সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে বর্ণালী। তাঁর দেহ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দিনহাটা থানায়। বাড়িতে এক লাইনের সুইসাইড নোট রেখে গেছে বর্ণালী। সে লিখেছে, 'তোমাদের কথা রাখতে পারলাম না।' মৃত ছাত্রীর মা জানিয়েছেন, 'এর জন্য কাকে দায়ী করব? আমরা কখনও বকাবকি মারধর করিনি।' তাঁর বাবার কথায়, 'সরকারের কাছে আমি অনুরোধ করছি শিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি তাঁরা যেন বিচার করেন। এমন ঘটনা আর কারও সাথে যেন না হয়।' জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা নিয়ে সকলেরই উন্মাদনা থাকে। চাপা একটা ভয়ও কাজ করে। তবে সবথেকে বেশি যেটা থাকে তা হল উত্সাহ। কিন্তু বর্ণালী বর্মনের কোনও স্বপ্নই আর পূরণ হল না।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours