শীতকালে বড়ির ব্যবহার বেশি হয়। এছাড়াও এই সময় বেশি বড়ি দেওয়া হয়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বড়ি
হাইলাইটস
বড়িতে যে ঘরোয়া মশলা মেশানো হয় অর্থাৎ জিরে, আদা, লঙ্কা
এই সবেরই নানা উপকারিতা রয়েছে।
এছাড়াও স্বাদ ফেরাতে খুব ভালো সাহায্য করে বড়ি।
এই সময় জীবনযাপন ডেস্ক:
বাঙালির একদম নিজস্ব খাবার হল বড়ি। খুবই ঘরোয়া একটি খাদ্য উপকরণ। এছাড়াও বাংলার লোকশিল্পের মধ্যেও অন্যতম হল বড়ি শিল্প। ঠিক কবে থেকে বাঙালির রান্নাঘরে বড়ির আগমন তা জানা যায় না। তবে প্রাচীন কাল থেকেই যে শুক্তো, ডাঁটা, পোস্ততে বড়ির ব্যবহার হচ্ছে তা উল্লেখ রয়েছে বাংলার প্রাচীন সাহিত্যের ইতিহাসে। শাক থেকে চিংড়ি মাছ বড়ির গুণে বদলে যায় রান্নার স্বাদ। মূলত শীতকালেই বড়ি দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। মূলত বিউলির ডাল, মসুর ডাল আর খেসারির ডালের বড়ির ব্যবহার বেশি। তবে অঞ্চলভেদে বড়ির বিভিন্নতা রয়েছে।
বড়িতে যে ঘরোয়া মশলা মেশানো হয় অর্থাৎ জিরে, আদা, লঙ্কা এই সবেরই নানা উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও স্বাদ ফেরাতে খুব ভালো সাহায্য করে বড়ি।শীতে ঠান্ডা লাগা, সর্দি কাশি অনেকেরই হয়। রোগজীবানুর প্রকোপ থেকে রক্ষা করতেও ভূমিকা রয়েছে বড়ির। এছাড়াও বড়ি খুবই শুভ। যে কারণে জন্মদিন থেকে আইবুড়োভাত পাঁচ ভাজার মধ্যে বড়ি থাকবেই। বড়ি নিয়ে প্রচলিত রয়েছে বিভিন্ন ছড়াও। বৈষ্ণবদের কাছে বড়ি সহজলভ্য ও বিকল্প প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য হিসেবেই সমাদৃত ছিল। শোনা যায় শ্রীচৈতন্যও বড়ি খেতে খুব পছন্দ করতেন। এছাড়াও গ্রামীন অর্থনীতিতে বড়ির বেশ গুরুত্ব রয়েছে। এখন তো বাড়িতে বড়ি দেওয়ার চল উঠে গিয়েছে। তাই ভরসা সেই কেনা বড়িতেই। যার সিংহভাগ আসে গ্রামাঞ্চল থেকে। শীতকালে বড়ির বিক্রি সবথেকে বেশি।অঞ্চলভেদে নানা রকম বড়ি দেখতে পাওয়া যায়।
কলাইয়ের বড়ি-
বিউলির ডাল সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বেটে নিতে হয়। এরপর ওর সঙ্গে নুন, লঙ্কাগুঁড়ো আর জিরে গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে ফেটাতে হয়। যাতে ভিতরটা বেশ ফাঁপা হয়। এরপর চালা কিংবা থালায় তেল বুলিয়ে হাতে ওই মিশ্রণ নিয়ে বড়ি দিতে হয়। বড়ির আকার হবে শঙ্কুর মতো। এরপর রোদে তিন দিন টানা শুকোলেই তৈরি বড়ি। এরপর এয়ারটাইট পাত্রে রেখে দিলেই হয়। এই বড়িই সবচেয়ে বেশি বানানো হয়।
মুসুর ডালের বড়ি-
বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামে এই মুসুর ডালের ছোট বড়ির বেশ চল রয়েছে। শাকভাজা কিংবা কোনও টকে ব্যবহার করা হয় এই বড়ি।
মশলা বড়ি-
বিউলির ডাল বেটেই তৈরি হয় এই বড়ি। কিন্তু মশলা হিসেবে মেশানো হয় আদা বাটা, জিরে বাটা, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো, নুন আর সামান্য পাঁচফোড়ন।অনেকে আবার সামান্য হিং মিশিয়ে দেন। সব কিছু মিশিয়ে খুব মিহি করে বেটে চালুনি কিংবা থালায় দেওয়া হয় এই বড়ি।গয়না বড়ি-
পূর্ব মেদিনীপুরের খুব জনপ্রিয় হল নকশা বড়ি। বিউলির ডাল ভালো করে বেটে একটা থালায় পোস্ত বিছিয়ে এই বড়ি দিতে হয়। মূলক নকশা বা কলকা ফুটিয়ে তোলা হয়। যে কারণে এই বড়ির নাম নকশা বড়ি। গরম ভাত কিংবা চায়ের সঙ্গে অপূর্ব লাগে এই বড়ি। তবে বড়ি ভালো রাখতে মাঝে মাঝেই রোদ খাওয়াতে হয়। ভাজতে হয় ছাঁকা তেলে। আর যে কৌটোতে বড়ি রাখা হবে তা যেন এয়ারটাইট হয়, এটা ভালো করে দেখে নেবেন।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours