সারা বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হ্যাকার-হানা। আপনার গোপনীয় তথ্য চলে আসছে হ্যাকারের হাতে নাগালে। হ্যাকিং থেকে বাঁচতে, সর্বোপরি আপনার স্মার্টফোন সুরক্ষিত রাখতে অতি অবশ্যই মেনে চলুন এই ১০ টিপস...
বিগত কিছু বছরে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অত্যন্ত জরুরি একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ফোন আর শুধু কথা বলাতেই সীমাবদ্ধ নেই! সে আরও একটু স্মার্ট হওয়ার কারণে গ্রাহকেরা নানা ক্ষেত্রে বিল জমা দেওয়া থেকে শুরু করে খাবার অর্ডার, অনলাইন ক্লাস, সোশ্যাল মিডিয়া - সমস্ত দুনিয়াটাই যেন এখন হাতের মুঠোয়! কিন্তু এহেন ফোন একদিকে যেমন স্মার্ট, আর সেই স্মার্টনেসের কারণেই এর বেশ কিছু ভুলচুকও রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হল হ্যাকার হানা। কয়েক মুহূর্তে হ্যাকারের নখদর্পণে চলে আসছে আপনার যাবতীয় ব্যক্তিগত সব তথ্য। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে এহেন হ্যাকার হানার কারণেই। চতুর্দিকে ওত পেতে বসে থাকা হ্যাকারদের এমনতর আক্রমণ থেকে নিস্তার পাওয়ার কি কোনও উপায় নেই? নিশ্চয়ই আছে। একটু সজাগ আর একটু বুঝেশুনে স্মার্টফোন ব্যবহার করলেই এড়ানো যাবে হ্যাকারের অযাচিত আক্রমণ। সাইবার হানা থেকে বাঁচার বেশ কিছু টিপস জেনে নেওয়া যাক।
​পিন/পাসওয়ার্ডের সাহায্যে ডিভাইসের স্ক্রিন লক করুন -
জেনে রাখা ভালো যে, হ্যাকার হানা থেকে বাঁচার সবথেকে ভালো উপায় হল, আপনার স্মার্টফোনের স্ক্রিন লক করে রাখা। তার জন্য অতি অবশ্যই জরুরি নিরাপদ একটি পিন বা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। পিন/ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন যেন এটি অত্যন্ত শক্ত (#,*,@,% ইত্যাদি চিহ্নের সাহায্যে পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখুন) হয়। হ্যাকার যাতে কোনও মতে অনুমান করতে না পারেন যে, আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড কী হতে চলেছে! আর আপনার পক্ষে যদি পাসওয়ার্ড মনে রাখা খুবই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে প্যাটার্ন লক করে রাখুন।শুধু পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই নিশ্চিন্তে থাকলে হবে না! তার সঙ্গেই বিভিন্ন অ্যাপস লকও করে রাখতে হবে। বিশেষ করে মোবাইল ওয়ালেট এবং অনলাইন শপিং অ্যাপগুলি শক্ত পাসওয়ার্ডের সাহায্যে অতি অবশ্যই লক করে রাখুন। আর এটি করা খুবই সহজ। বেশ কিছু স্মার্টফোন রয়েছে, যেগুলিতে বিল্ট-ইন অ্যাপ লকিং ফাংশন থাকে। ঠিক যেমন Paytm, এই অ্যাপে রয়েছে বিল্ট-ইন অ্যাপ লকিং ফিচার। এছাড়াও Google Play Store-এ বেশ কিছু থার্ড পার্টি সিকিওরিটি অ্যাপস রয়েছে, যার সাহায্যে আপনার স্মার্টফোনের বিশেষ-বিশেষ অ্যাপ লক করে রাখা যায়।
​বিশ্বাসযোগ্য সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করুন -
কেবল মাত্র বিশ্বাসযোগ্য সোর্স থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করুন। আর সেই বিশ্বাসযোগ্যতার কথা বলতে গেলেই প্রথমে Google Play Store-এর কথা মাথায় আসবে। Google Play Store থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করুন, তবে তার আগে সেই অ্যাপ সম্পর্কে যাচাই করে নিন। ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করার আগেই রেটিংস চেক করে দেখুন। আর একান্তই যদি চাপে পড়ে কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সেই অ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি সম্পর্কে বিশদে জেনে নিন।
​কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে অ্যাপ পারমিশন সম্পর্কে জানুন -
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেপ। কিন্তু সচরাচর আমরা এর গুরুত্ব দিই না। Google Play Store থেকে কোনও অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে ভালো করে সেই অ্যাপের ডেসক্রিপশন পড়ুন, আপনার ফোনের কোন বিশেষ-বিশেষ ভাগের অ্যাকসেস সেই অ্যাপ নিতে চায়, তা ভালো করে যাচাই করুন। ধরা যাক, আপনি একটি পেমেন্টস অ্যাপ ডাউনলোড করতে চলেছেন। এদিকে সেই অ্যাপটি আপনার ক্যামেরার অ্যাকসেস চাইছে। আপনি ভালো করে খুঁটিয়ে না দেখেই আপনার ফোনের ক্যামেরার অ্যাকসেস দিয়ে দিলেন পেমেন্ট অ্যাপটিকে, যার কোনও প্রয়োজন নেই। পেমেন্ট অ্যাপের সঙ্গে আপনার ডিভাইসের ক্যামেরার কী সম্পর্ক, নিজেকে এই প্রশ্নগুলি করুন।​অতি অবশ্যই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার ডাউনলোড করুন -
হ্যাকার হানা থেকে বাঁচার অন্যতম নিরাপদ উপায় হল, আপনার ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার ডাউনলোড করে রাখা। Google Play Store-এ উপলব্ধ সবথেকে উপকারি অ্যাপ এটি। এর সাহায্যে আপনি কী উপকার পেতে পারেন? আপনার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন যদি কখনও হারিয়ে যায়, তাহলে এই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার সেই ফোনটিকে খুঁজে দিতে সাহায্য করবে। হারিয়ে যাওয়া অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস খুঁজতে খুবই ভালো ভাবে কাজ করে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজারের ট্র্যাকিং সার্ভিস।
​Google Authenticator অতি অবশ্যই ব্যবহার করুন -
আপনার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য Google Authenticator বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। এটি Google-এর একটি অ্যাপ, যার জন্য টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চাওয়া হয় গ্রাহকের কাছে। যে কোনও অ্যাপ বা কোনও ওয়েবসাইটে লগ-ইন বা সাইন-ইন করার আগে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন। এর সবথেকে বড় সুবিধাটি হল, অফলাইন মোডেও ব্যবহার করা যায় এই টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন এবং নন-Google সার্ভিসের জন্যও এটি উপলব্ধ।
​অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ডাউনলোড করুন -
অতি অবশ্যই আপনার ফোনে অ্যান্টি ভাইরাস অ্যাপ রাখুন এবং সেই অ্যান্টি ভাইরাস অ্যাপটি ডাউনলোড করার আগে ভালো ভাবে তার রেটিং জেনে নিন। জেনে রাখুন, অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ যেমন আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার-ভাইরাসের হানা রুখে দিতে পারে, তেমনই আবার আপনার ফোন থেকে হ্যাকারদেরও কোনও তথ্য চুরি করার সুযোগ দেয় না। তাই নতুন হোক বা পুরনো ফোন, আগেভাগে অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ ইনস্টল করে নিন।​পাবলিক Wi-Fi এড়িয়ে চলুন -
যতটা পারবেন পাবলিক Wi-Fi এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। কারণ এহেন পাবলিক Wi-Fi যে আদৌ 100% সুরক্ষিত কী না, তার গ্যারান্টি স্বয়ং সেই Wi-Fi প্রোভাইডারেরাও দিতে পারবেন না। আর তার সঙ্গেই নিশ্চিত করুন যেন আপনার ফোন কোনও মতে Wi-Fi-এর সঙ্গে যেন অটোমেটিক্যালি কানেক্টেড না হয়ে যায়। আবার নিজের বাড়ির Wi-Fi-এর পাসওয়ার্ডও সুরক্ষিত রাখুন। নিশ্চিত করুন সেই Wi-Fi যাতে আপনি এবং পরিবারের সদস্যরা ছাড়া কোনও বাইরের লোক ব্যবহার করতে না পারেন। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে একবার Wi-Fi ব্যবহার করা হয়ে গেলেই সেটি অফ করে দিন।
​ব্লুটুথ সেটিংস খুব ভালো করে কনফিগার করুন -
ব্লুটুথ সেটিংসের বিষয়টি খুব ভালো ভাবে নিশ্চিত করুন। তার জন্য প্রথমেই আপনার ডিভাইসটিকে 'Non-discoverable' হিসেবে সেট করুন। তার একমাত্র কারণ হল, যদি আপনার ফোনের ব্লুটুথ সবসময়ে 'visible' থাকে, তাহলে খুব সহজেই ডিভাইসটি হ্যাকারদের গোচরে আসে এবং তা থেকে ফোনে হানা দিতে পারে হ্যাকারের দল। তাই ঠিক Wi-Fi-এর মতোই আপনার ফোনের ব্লুটুথও ব্যবহার করার পর অফ করে রাখা উচিত।
​অহেতুক ফোন রুট করতে যাবেন না -
ভুলেও আপনার স্মার্টফোন কখনও রুটিং করবেন না। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে রুটিং করার অর্থই হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম আনলক করা, যাতে আপনি আনঅ্যাপ্রুভড অ্যাপস ইনস্টল করতে পারেন, অযাচিত ব্লোডওয়্যার ডিলিট করা, OS আপডেট করা, যা ইচ্ছে তাই কাস্টোমাইজ করা। এসব করে নিজের অজান্তেই হ্যাকারদের সুযোগ করে দিচ্ছেন। স্মার্টফোন রুটিং করলে বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার আক্রমণ করতে পারে আপনার ডিভাইসে।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours