রবিবার মধ্যরাত থেকে উঠে গেল গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা। ইলিশের খোঁজে গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় সুন্দরবনের মৎসজীবীরা। এ দিন দিনভর সুন্দরবনের ঘাটগুলিতে প্রস্তুতি চলেছে পুরোদমে।

আন্দামান ও কেরালা থেকে ফেরা পরিযায়ী মৎস্য-শ্রমিকদের অনেকেই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে চাইছেন বলে জানা গিয়েছে। ফলে করনো সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া ডায়মন্ড হারবার, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, কাকদ্বীপ, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি ও সাগরদ্বীপের মৎস্যজীবীদের সতর্ক ও সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কড়া নজরদারি শুরু করল জেলা মৎস্য দপ্তর। ট্রলারে চেপে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে মৎস্যজীবীদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য শিবিরের ব্যবস্থা করা হল।

এদিন দুপুরে মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে ডায়মন্ড হারবারের সুলতানপুর মৎস্য বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরে সন্ধে পর্যন্ত ৭০০ জনেরও বেশি মৎস্যজীবী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালেন। এ ছাড়াও, সাগরদ্বীপের মায়াগোয়ালিনির ঘাটের কাছেও শ'পাঁচেক মৎস্যজীবীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেক মৎস্যজীবীর থার্মাল চেকিংয়ের পাশাপাশি শারীরিক পরীক্ষার পর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয় ফিট সার্টিফিকেট। সুস্থ থাকলেই তবে ট্রলারে ওঠার অনুমতি মিলবে মৎস্যজীবীদের। পরীক্ষার পর সুস্থ থাকা মৎস্যজীবীদের নিয়ে মধ্যরাত থেকে বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয় শতাধিক ট্রলার। এ দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আসা সুলতানপুরের এক মৎস্যজীবী হারাধন মিস্ত্রি বলেন, 'করোনাভাইরাস যাতে আমাদের শরীরে থাবা বসাতে না পারে, সে জন্য মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষার পর আমাকে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। সেই সার্টিফিকেট ট্রলার মালিকের কাছে জমা রেখে তবেই ট্রলারে উঠে গভীর সমুদ্রে রওনা দিতে পারব।'

জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চার লক্ষের কাছাকাছি সামুদ্রিক মৎসজীবী রয়েছেন। ধাপে ধাপে জেলার সব মৎস্যজীবীকেই শারীরিক পরীক্ষার পর ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। তবে সমস্ত মৎসজীবী যাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, সেটা মাথায় রেখে বন্দর এলাকায় মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে মাইকিং। ছোট-বড় সব মিলিয়ে জেলার হাজার চারেক ট্রলার সমুদ্রে পাড়ি দেবে। প্রত্যেকটি ট্রলারে ১৫ জনের বেশি মৎস্যজীবী নেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য দপ্তর। গত কয়েক বছরে ট্রলার ডুবে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেদিকটা মাথায় রেখে এবার মরসুমের শুরুতেই গভীর সমুদ্রে যাওয়া প্রত্যেকটি ট্রলারে বিপদ সঙ্কেত প্রেরক যন্ত্র (ড্যাট) রাখা বাধ্যতামূলক করেছে মৎস্য দপ্তর। ইতিমধ্যেই ২ হাজার ৪৬০টি ট্রলার মালিকের হাতে ড্যাট যন্ত্র তুলে দিয়েছে মৎস্য দপ্তর। পাশাপাশি প্রত্যেকটি ট্রলারে লাইফ জ্যাকেট ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ মজুত রাখতে বলা হয়েছে। জেলার সহ-মৎস্য আধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান বলেন, 'রবিবার ভোর রাত থেকে ধাপে ধাপে মৎস্যজীবী ট্রলার সমুদ্রে রওনা দিচ্ছে। তাই প্রত্যেক মৎস্যজীবীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। পরীক্ষায় ফিট সার্টিফিকেট পেলেই মাছ ধরতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। নতুন কোনও বিপদ যাতে না ঘটে সেদিকেও কড়া নজর রাখা হবে।'

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours