নাবালকের মা শম্পা মণ্ডল বলেন, "জামাইবাবুর সঙ্গে ঝগড়া করে দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমার মাকে ফোন করে জামাইবাবু বলে, তোমাদের কী করার আছে করে নাও, শম্পার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বামীকেও ফোন করে হুমকি দেয়।"

বউকে ফিরে পেতে শ্যালিকার ছেলেকে অপহরণ, ফাঁদ পাততে কুলি সাজল বাংলার পুলিশ
খড়্গপুর স্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয় নাবালককে


 গভীর রাত। খড়্গপুর স্টেশনে খুব বেশি যাত্রী নেই। অন্ধপ্রদেশের দিক থেকে একটি ট্রেন স্টেশনে ঢুকছে। কয়েকজন কুলি তৎপর হয়ে উঠলেন। নিশ্চয় যাত্রীদের জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ট্রেন থেকে অনেকেই নামছেন। তবে ওই কুলিরা সেইসব দিকে নজর দিচ্ছেন না। তাঁরা বোধহয় কারও প্রতীক্ষা করছেন। কয়েক মুহূর্ত পর সেটাই হল। ট্রেন থেকে এক ব্যক্তি এক নাবালককে নিয়ে নামলেন। তৎক্ষণাৎ কুলিরা তাঁর দিকে দৌড়ে গেলেন। তাঁদের সেই তৎপরতা ঠিক কুলিদের মতো নয়। আসলে তাঁরা কুলি-ই নন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায়া কুলতলি থানার পুলিশের একটি টিম। ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলেন তাঁরা। কিন্তু, ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলেন কেন? ওই নাবালক-ই কে?


ধৃত ব্যক্তির নাম বৃন্দাবন মণ্ডল। আর সৌমেন মণ্ডল নামে ওই নাবালক ধৃতের শ্যালিকার ছেলে। শ্যালিকার ছেলেকেই অপহরণের অভিযোগ উঠেছে বৃন্দাবনের বিরুদ্ধে। শ্যালিকার ছেলেকে কেন অপহরণ কেন বৃন্দাবন? পুলিশ জানিয়েছে, বৃন্দাবনের স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে বোনের বাড়িতে চলে এসেছেন। তাই, শ্যালিকার ছেলেকে অপহরণ নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন বৃন্দাবন। সেখান থেকে ফোন করে শ্বশুবাড়িতে হুমকি দেন যে, তাঁর স্ত্রীকে ফেরত না পাঠালে ওই নাবালককে খুন করবেন। পুলিশকে খবর দিলে নাবালককে ট্রেন থেকে ফেলে দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। হুমকি পাওয়ার পরই সৌমেনের মা শম্পা মণ্ডল কুলতলি থানায় অভিযোগ জানান। কুলতলি থানার পুলিশ একটি টিম গঠন করে। এবং পরিবারের লোকজনকে দিয়ে বৃন্দাবনকে ফোন করায়। বৃন্দাবনকে তাঁরা জানান, তাঁর স্ত্রীকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হবে। তার পরিবর্তে খড়্গপুর স্টেশনে এসে ওই নাবালককে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই শর্তে রাজি হন বৃন্দাবন। তবে তিনি হুমকি দেন, পুলিশকে যদি কোনও বিষয়ে জানানো হয়, তাহলে ফল ভাল হবে না।



মেয়াদ ফুরোলে একদিনও ফেলে রাখা যায় না...', এবার পুরভোট চাইলেন খোদ তৃণমূলেরই জেলা সভাপতি
রাতের বেলা কলকাতা বিমানবন্দের নামল আধা সেনা, পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ, কী হচ্ছে সেখানে
২০২৫-এ দাঁড়িয়েও এই গ্রামে দুই ভাইয়ের বিয়ে হয় এক মহিলার সঙ্গেই! কোথায় জানেন?
এরপরই পুলিশের একটি টিম ছদ্মবেশে কুলির সাজে খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছে যায়। সেখানে ওই নাবালককে নিয়ে শনিবার গভীর রাতে বৃন্দাবন পৌঁছলেন তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন ধৃতকে বারইপুর মহকুমা আদালতে পেশ তোলা হয়।

অপহৃত নাবালকের মা শম্পা মণ্ডল বলেন, “জামাইবাবুর সঙ্গে ঝগড়া করে দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমার মাকে ফোন করে জামাইবাবু বলে, তোমাদের কী করার আছে করে নাও, শম্পার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বামীকেও ফোন করে হুমকি দেয়। ইস্কুলের গেটের সামনে আমার ছেলে মুড়ি খাচ্ছিল। সেখান থেকে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। আমার ছেলেকে বলেছিল, বাড়ি চল। অনেক লোক এসেছে। মিটিং হবে। তোর মা ডেকেছে।”

ঠিক তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তা বলতে পারেনি সৌমেন মণ্ডল। সে বলে, “মেসো আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, তোর মা ডাকছে। আমি যখন বললাম, আমার বাড়ি তো এইদিকে। তখন মেসো বলে, আমি যা বলব, তাই শুনবি। এরপর একটা গাড়িতে করে স্টেশনে নিয়ে যায়। তারপর ট্রেনে করে নিয়ে যায়। আমাকে বলেছিল, যা বলব শুনবি, না হলে ট্রেন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেব। আসার দিনে একবার মাথায় মেরেছিল”

তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ধৃতের স্ত্রী টুম্পা মণ্ডল বলেন, “পারিবারিক অশান্তির কারণে আমি স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে চাই না। সবসময় নেশা করে। মদ্যপান করে। মারধর করে। এমনকি, আমার বড় মেয়েকে মারে। এইভাবে থাকতে চাই না বলে এখানে চলে এসেছি। এই জন্য আমার বোনের ছেলেকে নিয়ে চলে যায়। আমার আমাদের হুমকি দেয়, সংসার না করলে বোনের ছেলেকে মেরে ফেলবে।”


ধৃত বৃন্দাবন মণ্ডল

শ্যালিকার ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে নিয়ে ধৃত বৃন্দাবন মণ্ডল বলেন, “আমার বউ-বাচ্চাকে শ্যালিকারা ২ মাস ধরে ফেরত পাঠায়নি। আটকে রেখেছে। তার জন্য আমি বাধ্য হয়ে শ্যালিকার ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, আমি জানতাম, শ্যালিকার ছেলেকে নিয়ে গেলে আমার বউ-বাচ্চাকে ফেরত পাঠাবে।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours