ছেলের আত্মহত্যার পিছনে ওই নাবালিকার বাবাকে দায়ী করেছেন সূর্যের বাবা রবীন্দ্রনাথ মান্না। তিনি বলেন, "বৃহস্পতিবার আমার ছেলে স্কুলে গিয়েছিল। স্থানীয় বাজারে ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছিল। ঘটনা জানতে পেরে সেখানে পৌঁছাই। ছেলেকে মারধর করে। স্কুলের মেয়েকে কটূক্তি করেছিল বলে অভিযোগ। ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলে জানায়, আমি কিছুই করিনি।"


পাঁশকুড়ার চিপসকাণ্ডের ছায়া কাঁথিতে, সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী নবম শ্রেণির ছাত্র
অপমানে আত্মঘাতী পড়ুয়া। কী বলছেন ছাত্রের বাবা?


 পাঁশকুড়ার চিপসকাণ্ডের ছায়া এবার পূর্ব মেদিনীপুরেরই কাঁথিতে। এক ছাত্রীকে টিটকিরি কাটার অভিযোগে হেনস্থা করা হয় ক্লাস নাইনের এক ছাত্রকে। অপমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হল ওই ছাত্র। আত্মঘাতী হওয়ার আগে বাবা-মার উদ্দেশে সে লিখে যায়, “বাবা আমি ভুল করিনি, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি না।” ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কাঁথির পিছাবনিতে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম সূর্য মান্না (১৫)। তার বাড়ি কাঁথি থানার পিছাবনি এলাকায়। স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্কুলে গিয়েছিল সূর্য। স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ঠিক ওই সময় সূর্যের সঙ্গে ছিল কয়েকজন বন্ধু। যদিও সূর্য জানিয়েছিল, সে ওই ছাত্রীকে চেনে না। তাকে কটূক্তি করেনি।




এরপর শুক্রবার সাত সকালে দোতালায় কড়ি কাঠে দড়ির ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে নবম শ্রেণির ওই ছাত্র। পরিবারের লোকেরা বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কাঁথি থানার পুলিশ। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। সেখানে সূর্য লিখে গিয়েছে, “বাবা আমি ভুল করিনি, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি না। আমার জন্য তোমাকে অপমানিত হতে হল।” একাধিক অভিমানের কথা সুইসাইড নোট লেখা রয়েছে। ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সূর্যের বাবা-মা। সূর্যের মা বলেন, “আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়ে কথা বলতে পারে না। আমার ছেলে খুবই ভাল। এখনই আমি কী করব।” বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।


কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত ছাত্রের মা

ছেলের আত্মহত্যার পিছনে ওই নাবালিকার বাবাকে দায়ী করেছেন সূর্যের বাবা রবীন্দ্রনাথ মান্না। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার আমার ছেলে স্কুলে গিয়েছিল। স্থানীয় বাজারে ছেলেকে আটকে রাখা হয়েছিল। ঘটনা জানতে পেরে সেখানে পৌঁছাই। ছেলেকে মারধর করে। স্কুলের মেয়েকে কটূক্তি করেছিল বলে অভিযোগ। ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলে জানায়, আমি কিছুই করিনি।”

মেয়ের বাবাকে দায়ী করে তিনি বলেন, “মেয়ের বাবা স্থানীয় বাজারে কিছু লোকজন নিয়ে এসে ছেলেকে আটকে মারধর করে। এবং মানসিক নির্যাতন করে। ছেলেটা অবশেষে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছে। আমি ভুল করিনি, এবং সেই মেয়েটাকে আমি চিনি না। আমার ছেলের আত্মহত্যার পেছনে নাবালিকার বাবা দায়ী। আমি থানায় বিষয়টি জানিয়েছি।”

যদি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাবালিকা ছাত্রীর বাবা। তাঁর দাবি, “ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমাকে ফোন করে ডাকেন ছেলের বাবা-ই। তিনি বলেন, আপনার মেয়ে যদি বলে যে আমার ছেলেই টিটকিরি কেটেছে, তাহলে মাথা নিচু করে চলে যাব। আমার মেয়েকে ডাকি। মেয়ে বলে, এই ছেলেটিই। তখন সেখানে উপস্থিত অন্যরা আমার মেয়েকে চলে যেতে বলে। আমিও বাড়ি চলে যাই। আমি ছেলে কিংবা তার বাবাকে কিছু বলিনি। ছেলের বাবা মাথা নিচু করে ছেলেকে বকাবকি করে বাইকে করে নিয়ে চলে যান।”

কাঁথি থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ছাত্রের মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরেরই পাঁশকুড়ায় চিপসের প্যাকেট চুরির অভিযোগে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে হেনস্থা করা হয়েছিল। অপমানে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয় সে। সুইসাইড নোটে সে লিখে যায়, চিপসের প্যাকেট চুরি করেনি সে। এবার একইভাবে বাজারে অপমানিত হয়ে আত্মঘাতী হল ক্লাস নাইনের ছাত্র।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours