উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তাঁর সাফ কথা, যাঁরা এগুলো করছেন তাঁরা বেআইনি কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াতে পারে না। যাঁরা ভাড়া বাড়াচ্ছে তাঁরা বেআইনি কাজ করছে।
একমাত্র ব্রহ্মা জানেন! বাস ভাড়া বাড়াল কে?
কী বলছে সরকার? কী বলছে জনতা?
বৈঠক নিস্ফলা। শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় বাস মালিকরা। পরিবহণ দফতরের সচিবের সঙ্গে এদিন বৈঠকে বসেছিলেন বাস মালিকরা। কিন্তু, কোনও সমাধান সূত্রে বের হয়নি। ফলে ২২, ২৩ ও ২৪ মে তিনদিনের বাস মিনিমাস ধর্মঘট হচ্ছেই। এদিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ বাসের দু’বছরের সময়সীমা বৃদ্ধি, ভাড়া বৃদ্ধি, পুলিশি জুলুম-সহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ করার আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্য়েই সরকারের কাছে দরবার করা হয়েছিল। তা নিয়েই এদিন বৈঠকে বসেছিলেন বাস মালিকরা। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে কোনও রফাসূত্র বের হয়নি। এদিকে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে এত চাপানউতোর হলেও যাত্রীরা বলছেন অনেক রুটে সরকারি কোনও নির্দেশ ছাড়াই অলিখিতভাবে ভাড়া বেড়ে বসে আছে। তা নিয়েও যাত্রীদের মাথাব্যথার অন্ত নেই। এ নিয়ে প্রায়শই নানা রুটে প্রায়শই ঝামেলাও দেখা যায়। আগে পরিবহণ মন্ত্রী থাকার সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ফিরহাদ হাকিম, এখন তাঁর উত্তরসূরি স্নেহাশিসের গলাতেও একই সুর।
যাত্রীদের দাবি, সেক্টর-ফাইভ থেকে বিধাননগর রোড যেতে কিছুদিন আগও যেখানে ১০ টাকা ভাড়া দিতে হতো তা এখন একধাক্কায় বেড়ে হয়ে গিয়েছে ১৫ টাকা। একই ছবি গড়িয়া থেকে সেক্টর ফাইভ রুটে। সেখানে ন্যূনতম ভাড়া ১২টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়ে গিয়েছে। ধূলাগড়-ধর্মতলা রুটের ন্যূনতমভাড়া ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা হয়ে গিয়েছে।
ক্ষোভ এয়ারপোর্ট থেকে সেক্টর ফাইভের যাত্রীদের মধ্যেও। ন্যূনতম ভাড়া এখন ১৪ থেকে ১৮ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সেক্টর ফাইভ থেকে বালি হল্ট আগে ছিল ১৮ টাকা। পরে হয়েছে ২৫ টাকা। শ্য়ামবাজার থেকে হাওড়া রুটে একইভাবে ন্যূনতম ভাড়া ১০টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা। কিন্তু কিছুই কী জানে না সরকার?
উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তাঁর সাফ কথা, “যাঁরা এগুলো করছেন তাঁরা বেআইনি কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াতে পারে না। যাঁরা ভাড়া বাড়াচ্ছে তাঁরা বেআইনি কাজ করছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে ভাড়া এভাবে বাড়়ানো যাবে না। মানুষকে বিপাকে ফেলা যাবে না।” জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট সাধারণ তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন একই কথা। তবে একইসঙ্গে দীর্ঘ ৮ বছরের বেশি সময় দিয়ে ভাড়া না বাড়ানো নিয়ে সরকারের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, “অলিখিতভাবে ভাড়া কারা বাড়াচ্ছে সেটা আমাদের জানা নেই। এরকম কোনও নির্দেশ নেই। কেউ নিলে সেটা দুর্ভাগ্য। তবে সরকারকে এটাও দেখতে হবে এ রাজ্যে ৮ বছর ভাড়া বাড়েনি। সেই সময় ৫৪ টাকা ছিল পেট্রোল। আর এখন কোথায় দাম সবাই জানে! তাই সরকারকে ভাবতেই হবে।”
অন্যদিকে বর্তমান পরিবহণ মন্ত্রী যে একাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তা নয়। কোভিডকালে যখন পরিবহণ মন্ত্রকের দায়িত্ব যখন ফিরহাদ হাকিমের কাঁধে ছিল তখনও কোনও নির্দেশ ছাড়াই আচমকা বাসের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। টক টু মেয়রেক এক অনুষ্ঠানে এ নিয়ে এক ব্যক্তি অভিযোগ জানাতেই ফিরহাদের স্পষ্ট বলেছিলেন টিকিট নিয়ে গিয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে। বলেছিলেন, “পরিবহণ মন্ত্রীর পক্ষে হেলিকপ্টার নিয়ে উপর থেকে ঘুরে বেড়িয়ে কারা বাসের অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে সেটা দেখা সম্ভব নয়। তাই যাত্রীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তারপর অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবহন দফতর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” যদিও তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ সময়। কিন্তু পরিস্থিতির বদল কোথায়? প্রশ্ন যাত্রীদের।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours