বিরোধী সাংসদরা জানিয়েছেন, দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, এমন কোনও নথি নেই এথিক্স কমিটির কাছে। কিন্তু, সেই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন না করে, তাঁকে ক্রমাগত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে যান এথিক্স কমিটির প্রধান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকার। কিন্তু কী প্রশ্ন করা হয়েছিল মহুয়াকে, যে ওয়াক আউট করলেন বিরোধী সাংসদরা?
Mahua Moitra: 'দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের মতো...', কী কী 'অনৈতিক' প্রশ্ন করা হল মহুয়াকে?
বিনোদ সোনকারের প্রশ্নে চটে গেলেন মহুয়া
নয়া দিল্লি: মহাভারতে ধৃতরাষ্ট্রের সভায় যখন দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের চেষ্টা করেছিল কৌরবরা, সেই সময় সভায় বহু মহারথী উপস্থিত থালেও, সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানাননি কেউ। বৃহস্পতিবার, সংসদীয় এথিক্স কমিটির শুনানিতে মহুয়া মৈত্রকে অনৈতিক প্রশ্ন করার প্রতিবাদে কিন্তু, তৃণমূল সাংসদের পাশে দাঁড়ালেন বিরোধী পক্ষের সকল সাংসদই। ঘুষের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে, এথিক্স কমিটির সামনে মহুয়া মৈত্রর জবানবন্দি দেওয়ার সঙ্গে, মহাভারতের পাশা খেলার সেই সভার তুলনা হয় না। কিন্তু, এথিক্স কমিটির অন্যতম সদস্য, বিএসপি সাংসদ দানিশ আলির অভিযোগ, যেভাবে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে এদিন এথিক্স কমিটির শুনানিতে অপমান করা হয় মহুয়া মৈত্রকে। আর তারই প্রতিবাদে, শুনানি থেকে মহুয়া-সহ ওয়াক আউট করেন কমিটির সদস্য হিসেবে কক্ষে থাকা অন্যান্য বিরোধী সাংসদরাও।
এই সাংসদদের মধ্যে ছিলেন বিএসপির দানিশ আলি, জেডিইউ-এর গিরিধারী যাদব, কংগ্রেসের এন উত্তম কুমার প্রমুখ। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, এমন কোনও নথি নেই এথিক্স কমিটির কাছে। কিন্তু, সেই বিষয়ে কোনও প্রশ্ন না করে, তাঁকে ক্রমাগত ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে যান এথিক্স কমিটির প্রধান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ কুমার সোনকার। কিন্তু কী প্রশ্ন করা হয়েছিল মহুয়াকে, যে ওয়াক আউট করলেন বিরোধী সাংসদরা?
সূত্রের খবর, মহুয়ার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। তিনি বিদেশে কোথায় কোথায় গিয়েছেন? কার সঙ্গে গিয়েছেন? সেখানে কোন হোটেলে থেকেছেন? কার সঙ্গে থেকেছেন? হোটেলের বিল কে মিটিয়েছে? তিনি ফোনে কার কার সঙ্গে কথা বলেন? ফোনের কল রেকর্ড দিতে পারবেন কি? এই ধরণের একের পর এক প্রশ্ন তাঁকে করতে থাকেন এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান বিনোদ কুমার সোনকার। বিরোধী সাংসদদের আরও অভিযোগ, মহুয়া রাতে কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন, নির্দিষ্টভাবে এমন ব্যক্তিগত প্রশ্নও করা হয়। এই প্রশ্নগুলিই অত্যন্ত আপত্তিকর বলে অভিযোগ করেন মহুয়া। তিনি বলেন, যে বিষয়গুলি জানতে চাওয়া হচ্ছে, তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। ব্যক্তিগত পরিসরে কেন এথিক্স কমিটি ঢোকার চেষ্টা করছে, এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন মহুয়া।
এথিক্স কমিটির সদস্য হিসেবে শুনানিতে উপস্তিত ছিলেন কংগ্রেস সাংসদ উত্তম কুমার রেড্ডি বলেছেন, “প্রশ্নের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে তিনি (এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান) কারও ইশারায় কাজ করছেন। এটা খুবই খারাপ বিষয়। কোথায় বেড়াতে গিয়েছিলেন? কার সঙ্গে দেখা করেছিলেন? ফোন রেকর্ড দিতে পারবেন? তাঁকে (মহুয়া মৈত্র) এই সব প্রশ্ন করা হচ্ছে। যদি অর্থ স্থানান্তরের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়, তারপর এই সব প্রশ্ন আসতে পারে। এই ক্ষেত্রে অর্থ স্থানান্তরের কোনও প্রমাণই নেই। আমাদের মতে, মহুয়া মৈত্রকে বেআইনিভাবে নিশানা করা হচ্ছে।”
কমিটির আরেক সদস্য আরেক জনতা দল (ইউনাইটেড) দলের সাংসদ গিরিধারী যাদব বলেছেন, “তারা এক মহিলাকে (সাংসদ মহুয়া মৈত্র) ব্যক্তিগত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল। আমার মতে, ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার অধিকার তাদের নেই। তাই প্রতিবাদে বেরিয়ে এসেছি।” বিএসপি সাংসদ দানিশ আলি বলেছেন, “কোন হোটেলে ছিলেন, কে বিল মিটিয়েছে, এগুলো কী ধরণের প্রশ্ন? তাঁর (মহুয়া মৈত্র) চরিত্র হননের চেষ্টা করা হয়েছে। তাছাড়া, এথিক্স কমিটির রিপোর্ট নিশিকান্ত দুবে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিচ্ছেন কীভাবে? তাঁর তো এগুলো জানারই কথা নয়।”
Post A Comment:
0 comments so far,add yours