বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় অ্যানাস্থেটিক ইঞ্জেকশন ব্যবহারে ইতিবাচক ফল মিলেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।


যে কোনও ক্যান্সারের চিকিৎসায় (Cancer Treatment) অপারেশন বা সার্জারির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির পরেও মেটাস্টেসিস শুরু হতে পারে বা ক্যান্সার কোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যান্য অঙ্গেও। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ক্যান্সার কোষের (Cancer Cell) এভাবে ছড়িয়ে পড়া রুখে দিতে পারে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়ার (Local Anaesthesia) প্রয়োগ। লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া ক্যান্সার কোষগুলিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারে। এর ফলে মেটাস্টেসিসও রুখে দেওয়া সম্ভব হতে পারে। জানিয়েছেন টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের এক চিকিৎসক গবেষক। সামান্য ১০০ টাকা মূল্যের সাধারণ অ্যানাস্থেটিক ইঞ্জেকশনই আনতে পারে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এমন বিপ্লব।


চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ক্যান্সারের চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। ফলে এই ধরনের চিকিৎসায় উপকৃত হবেন বহু দুঃস্থ মানুষ। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় অ্যানাস্থেটিক ইঞ্জেকশন ব্যবহারে ইতিবাচক ফল মিলেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সার্জারির ঠিক আগেই অ্যানাস্থেটিক ইঞ্জেকশনের ব্যবহার এক্ষেত্রে অ্যান্টি ক্যান্সার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। দেখা গিয়েছে ০.৫ শতাংশ লিডোকেনের ব্যবহার ২৯ শতাংশ ক্ষেত্রে কমিয়ে দিতে পারে প্রাণহানির আশঙ্কা এবং ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগ ফিরে আসার আশঙ্কাও হ্রাস করতে পারে। মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের গবেষকদের গত এক দশকের সমীক্ষায় এমন ফলাফলই প্রকাশ পেয়েছে বলে দাবি।

গবেষকরা বলছেন, বিশ্বে এই ধরনের স্টাডি আগে কখনওই করা হয়নি।

গবেষণায় কী দেখা গিয়েছে?

– গবেষকদের আগের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে অপারেশনের ঠিক আগে, অপারেশনের সময়ে এবং সার্জারি শেষ হওয়ার ঠিক পরেই অ্যান্টি-ক্যান্সার এজেন্ট প্রয়োগ করা হলে তা পরবর্তীকালে রোগীর ক্যান্সারকে মেটাস্টেস্টিক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া থেকে রুখে দিতে পারে। আগের এই সমীক্ষাটি ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভাবনা চিন্তা করার নতুন একটি পথ তৈরি করে দেয়।

– জানা গিয়েছে, সার্জারির এক মিনিট আগে এই ধরনের লোকাল অ্যানাস্থেশিয়ার প্রয়োগ করা হয়। এরপর সার্জেন ৬ মিনিট অপেক্ষা করেন। এই সময়ের মধ্যে টিউমার আগের তুলনায় অনেক কম সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এহেন পদ্ধতির প্রয়োগে ক্যান্সার কোষের মুভমেন্টও কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়।

– জানা গিয়েছে, সার্জারির প্রয়োজন ছিল এমন ১৬০০ জন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলার উপর ওই র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল চালানো হয়। মোট রোগীর মধ্যে অর্ধেক রোগীকে অপারেশন টেবিলে সার্জারির ঠিক আগেই টিউমারের আশপাশে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। সব মহিলারই ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল।

– প্যারিসে আয়োজিত ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব মেডিক্যাল অঙ্কোলজি কংগ্রেস-এ এই সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে বক্তৃতাও দেন গবেষক।

– গবেষকরা জানাচ্ছেন, যে সকল সার্জেন ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা করছেন তাঁদের অবশ্যই এই স্বল্প খরচের চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তাঁরা আরও বলেন, এই বিরাট আকারের স্টাডি থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে বড় আকারের সমীক্ষা চালানো সম্ভব।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গ্যানাইজেশনের প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ভারতে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয়ের পর রোগীর পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার হার প্রায় ৬৬ শতাংশ। ভারতে প্রতি বছরই নতুন করে ১ লক্ষ ৫০ হাজার ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনেক দেরিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। গবেষকরা বলছেন, নতুন এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে লক্ষ লক্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।

জানা যাচ্ছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়া ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীর সার্জারির ক্ষেত্রে অপারেশনের আগে বিশেষ লোক্যাল অ্যানাস্থেশিয়া প্রয়োগ নিয়ে নির্দেশিকা জারি হয়েছে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours