কালো পাথরের তৈরি এই তাজমহল সময়ের স্পন্দনের সঙ্গে সঙ্গে আরও কালো দেখায়। তবে যদি কখনও কাছ থেকে দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন এই সৌধটিও কোনও অংশে কম নয়।

গোটা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ভারতকে চেনে তাজমহলের (Taj Mahal) রূপের টানে। বিদেশ থেকে এসে এই অভাবনীয় সৌন্দর্যকে চোখের দেখা না দেখে কেউই ফেরেন না। বছরের পর বছর ধরে পর্যটকরা আসেন আগ্রার (Agra) শ্বেতশুভ্র তাজমহলের টানে। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে প্রেম, ভালবাসার এক উজ্জ্বল সাক্ষ্য। শতকের পর শতক ধরে নিজের গায়েই লেপটে রয়েছে বহু প্রাচীন ইতিহাস (Indian History)। প্রেমের প্রতীক হিসেবে জনপ্রিয় এই তাজমহলকে দেখা মানেই এক টুকরো স্বর্গকে হাতের নাগালে পেয়ে যাওয়া। ভরা পূর্ণিমায় তাজমহলের দ্যুতি থেকে চোখ সরানোই দায়। ২২ বছর ধরে তৈরি হওয়া এই স্মৃতিসৌধ বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের (Seven Wonders of the World) মধ্যে একটি। তাই ভারতবাসীর কাছে এর গুরুত্ব যে কতটা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কয়েক শতাব্দী আগ্রার তাজমহলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েছেন কবি, সঙ্গীতজ্ঞ ও চিত্রশিল্পীরা। এর গঠন প্রকৃতি শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই প্রেমের ও নিখুঁত কারুকার্যের জন্য মনে দাগ কেটেছে। এই স্থানটি দেশের অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন আকর্ষণ। পারস্য, ইসলামিক ও ভারতীয় স্থাপত্যের এক অসাধারণ সুন্দর নিদর্শন হল এই তাজ। তবে অনেকেই জানেন না যে এই দেশেই আরও একটি তাজমহল রয়েছে। যাকে ব্ল্যাক তাজমহল বা কালা তাজ বলা হয়। মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় ৭ কিমি দূরে অবস্থিত। শাহ নওয়াজ খানের সমাধি রয়েছে এখানে।

আমরা অনেকেই জানি যে আগ্রার শ্বেতশুভ্র ও বিরল মার্বেল দিয়ে তৈরি তাজমহলটি শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে তৈরি করেছিলেন। স্থাপত্যের নিরিখে বিশ্বের প্রতিটি সৌধের পাশাপাশি এই তাজমহল একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। তবে এই তাজমহলের একেবারেই বিপরীত একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। কথিত আছে, মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর দেখেই শাহজাহানের আগ্রায় তাজমহল তৈরি ধারণা হয়েছিল। এর মধ্যে কতটা সত্যতা লুকিয়ে রয়েছে তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। আবার অনেকের ধারণা, সাদা মার্বেল দিয়ে তাজমহল বানানোর পর শাহজাহান কালো তাজমহল বানানোর তোড়জোর শুরু করেছিলেন। কিন্তু তা তিনি শুরু করেও করতেপারেননি। তাজমহেলর বিপরীতে কালো পাথরের হদিশও পাওয়া গিয়েছে। তবে বুরহানপুরের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য কালা তাজ সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন।

২০১৯ সালে বারতের প্রত্নতাত্বিক ও জরিপ বিভাগ এটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব নেয়। যার কারণে এই ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিসৌধটি আজও গর্বের সঙ্গে বিদ্যমান। আবহাওয়া, পশুপাখি, দীর্ঘকাল ধরে অযত্নে থাকার পরও এই সৌধটি এখনও মানুষের মনে কৌতূহল জন্মায়।

জানা গিয়েছে, ১৬২২ থেকে ১৬২৩ সালের মধ্যে কালা তাজমহল নির্মিত হয়েছিল। তথ্য অনুসারে, শাহ নওয়াজ খান ছিলেন আবদুল রহিম খানখানার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তাঁর সাহসিকতার কারণে মুঘল সেনাবাহিনীর সেনাপতি করা হয়েছিল। ৪৪ বছর বয়সে তিনি মারা গেলে বুরহানপুরের উতাওয়ালি নদীর তীরে তাকে সমাহিত করা হয়। এখানে শাহ নওয়াজের স্ত্রীরও সমাধি রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, কালো তাজমহলে শাহনওয়াজ খানেরসমাধিও এখানে অবস্থিত।

কালো পাথরের তৈরি এই তাজমহল সময়ের স্পন্দনের সঙ্গে সঙ্গে আরও কালো দেখায়। তবে যদি কখনও কাছ থেকে দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন এই সৌধটিও কোনও অংশে কম নয়। বুরহানপুরের মাটিতে প্রচুর উইপোকা ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি ছিল। তাই সেখানে কালো পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। অন্যদিকে আগ্রায় সাদা মার্বেলের তাজমহল তৈরি করা হয়েছিল। মুঘল আমলে এর তেমন জনপ্রিয়তা ছিল না। তবে বর্তমান সময়ে এর জনপ্রিয়তা ও আকর্ষণ বেশ নজরকাড়া।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours