দুই হাত দুই পা কিছুই তেমন কাজ করেনা ছেলেটার। সেই নিয়েই মাধ্যমিকে রেজাল্ট করে তাক লাগিয়ে দিলো দেশবাসীকে। মাধ্যমিকে তার মোট নম্বর ৬২৫। কথাটা শুনে সকলেই ভাবছেন কি ভাবে এমন একজন ১০০ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর দিলো?
মুর্শিদাবাদ জেলার গাদ্দা এলাকায় বাড়ি মোহাম্মদ আলম রহমানের। জন্মের পর বাবা মা বুঝতে পারেন আলম আর পাঁচটা বাচ্চার থেকে অনেক আলাদা কারণ তার হাত পা এতটাও সচল নয়। নানান ডাক্তার দেখানো ও তাদের পরামর্শে আলমের পরিবার জানতে পারে তাদের শিশুর মধ্যে বাসা বেঁধেছে প্রতিবন্ধকতা। ছোট থেকে ইচ্ছে থাকলেও খেলা ধুলা করতে পারতো না আলম, ঘরেই বসে থাকতো সব সময়। হয়তো এটাই আলমের পড়াশোনার জন্য তাকে আরো বেশি মনযোগী করে তোলে। শুধুমাত্র মনোযোগী হলে তো হবে না, বা পড়তে জানলেও হবে না। নিজেকে প্রমাণ করতে গেলে পরীক্ষার খাতায় লিখতেও হবে তাকে। আলমের দুই হাত অকেজো মুখ দিয়ে লিখতে গেলে অনেক সময় মুখের লালায় ভিজে যায় পরীক্ষার খাতা। তখন সে বেছে নিলো পা দিয়ে লেখার সিদ্ধান্ত। দুই পাও অকেজো হলেও ডান পায়ে বেশ একটু জোর পেতো আলম। ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ও তার পাশের আঙ্গুলের মাঝে পেনসিল ধরেই প্রথম লেখা শুরু করে আলম। পেনসিলের পাঠ চুকিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই আলম শুরু করলো পেন দিয়ে লেখা। কারণ ততদিনে সে ভালো রেজাল্ট করে হাই স্কুলে জায়গা করে নিয়েছে। যত দিন যায় আলমের পড়াশুনা মুগ্ধ করতে লাগলো গণপতি আদর্শ বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ছাত্রছাত্রীদের। আলমকে যথা সাধ্য সহায়তা করতেন তারা। মাধ্যমিক পরীক্ষায় আলম বাংলায় ৯১, ইংরেজি তে ৮৬, অঙ্কে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৪, জীবন বিজ্ঞানে ৭৭, ইতিহাসে ৮৪, ভুগলে ৯৫ পেয়ে মোট ৬২৫ নম্বর পেয়ে পাশ করলো মুর্শিদাবাদের আলম রহমান। মুর্শিদাবাদ এলাকার সবাই গর্বিত আলমের এই সাফল্যে। কিছু না পাওয়াতেই অনেকেই সৃষ্টি কর্তার কাছে নানান প্রার্থনা করেন, কিন্তু আলম অনেকটাই আলাদা, সে দেখিয়েছে সৃষ্টি কর্তা যা দিয়েছেন টা দিয়েই কামাল করা যায়। তার জন্য দরকার সৎ প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম। আলমের সাফল্যের খবর ছেয়ে গেছে গোটা দেশে, চোখে জল এসেছেও অনেকের। কে বলতে পারে আগামী ভবিষ্যতে হতেই পারে স্টিফেন হকিংস। আমরা যাই তার ভবিষ্যত জীবন আরোও উজ্জ্বল হোক। আপনার আমার আশে পাশে যদি কেউ এমন শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভেঙে পড়েন তাকে আলমের এই ভিডিওটি দেখবেন তার জীবনের আসার আলো দেখাবে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours