আফগানিস্তানের ইসলামিক এমিরেটসের উপর থেকে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আর্জি জানালেন তালিবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদেশমন্ত্রী মৌলবি আমির খার মুত্তাকি। কাবুলে এক সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে যে আফগান নাগরিকরা দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তাঁদেরও দেশে ফিরে আসার জন্য আবেদন জানান তালিবান বিদেশমন্ত্রী।আফগানিস্তানকে নতুন করে গড়ার কাজে হাত লাগানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

১৫ অগস্ট তালিবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলার ছবি সামনে এসেছিল। প্রাণভয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে পালানোর জন্য হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছিল। বিমানের বাইরে ঝুলতে ঝুলতে পড়ে যাওয়ার সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য আজও আবছা হয়নি। আর এরই মধ্যে তালিবান বিদেশমন্ত্রীর বার্তায় আদৌ কি কোনও বরফ গলবে?

তালিবান বিদেশমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন ইসলামিক এমিরেট সব দেশের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চায়। এমনকী আমেরিকার সঙ্গেও তাদের কোনও সমস্যা নেই কাজ করতে। কিন্তু আফগানিস্তানের উপর ছরি ঘোড়ানো যাবে না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক মহলের আর কোনও নিষেধাজ্ঞা বা কোনও নিয়ন্ত্রণ চাইছে না তালিবরা।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই তালিবান তাদের নতুন ইসলামিক ইমিরেটের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। কিন্তু নতুন সরকার গঠন করলেই তো হল না! এখন আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন সাহায্য পেতে হলে তালিবান সরকারের প্রয়োজন অন্যান্য দেশগুলির স্বীকৃতি। অর্থাত্‍, অন্যান্য দেশগুলি যে আফগানিস্তানের নতুন তালিবান সরকারকে একটি বৈধ সরকার বলে মনে করছে, তার স্বীকৃতি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চিন, পাকিস্তান ছাড়া কোনও দেশই তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।

আমেরিকা, ভারত থেকে শুরু করে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই চাইছে, তালিবানের গতিপ্রকৃতি বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ, এর আগে মোল্লা ওমরের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের স্মৃতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের ‘গুড বুকে’ আসতেই কি নিজেদের এই ভোলবদল করছে তালিবান?

তালিবান সরকার বার বার বলছে, তারা আগের মতো নেই। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার। কাউকে দেশ ছেড়ে পালানোর প্রয়োজন নেই বলেও একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে তালিবান নেতাদের। কিন্তু আসল সময়ে, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হল, তখন দেখা গেল, সেখানে মন্ত্রিসভায় কোনও মহিলা প্রতিনিধি নেই। তালিবান ছাড়া অন্য কোনও গোষ্ঠীর মানুষও নেই ইসলামিক এমিরেটসের মন্ত্রিসভায়। আর যে তালিবান নেতারা রয়েছে, তাদের মধ্যে একাধিক রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকাভুক্ত জঙ্গি। কারও কারও মাথার উপর তো পুরস্কারও ঘোষণা করে রেখেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এই অবস্থায় তালিবান বিদেশমন্ত্রীর নরম সুরে আদৌ কোনও বরফ গলবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours